সুয়োমুটো রুল: কিছু কথা কিছু প্রসঙ্গ

শামীম হায়দার পাটোয়ারী
Published : 25 June 2014, 03:03 AM
Updated : 25 June 2014, 03:03 AM

যদি প্রশ্ন করা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার কোন বিচারিক ধারণাটি বা প্রসঙ্গটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত, তাহলে সকলেই বলবেন 'বিচারিক সক্রিয়তা', 'জনস্বার্থে মামলা' বা সাম্প্রতিক সময়ের 'বিচারিক সীমাবদ্ধতা' হল বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বা সমালোচিত বিচারিক ধারণা। 'সুয়োমুটো রুল' বা স্বতঃপ্রণোদিত রুল প্রকৃতপক্ষে বিচারিক সক্রিয়তা বা জনস্বার্থে মামলার একটি বর্ধিত রূপ।

যদিও আমাদের বিচার ব্যবস্থা উৎপত্তিগত দিক থেকে কমন ল' গোত্রভূক্ত, কিন্তু বিচারিক সক্রিয়তা বা জনস্বার্থে মামলা বা 'স্বতঃপ্রণোদিত রুল' প্রকৃতপক্ষে একটি এশিয়ান ধারণা যা মূলত ভারতীয় বিচারপতিরা উদ্ভাবন করেছেন। প্রতিবেশি রাষ্ট্রের বিচারপতিরা এটি সর্বান্তকরণে গ্রহণ করেছেন এবং খুব দ্রুত এটি সাউথ এশিয়ান প্রাইডে পরিণত হয়েছে।

ভারতে বিচারিক সক্রিয়তা মূলত ভারতের সংবিধানকে ভারতীয়দের সংবিধানে পরিণত করার প্রয়াসের ফল। স্বাধীনতার পরে ভারতীয় বিচারপতিরা ঔপনিবেশিক রক্ষণশীল ব্যাখানীতি পরিহার করে উদার ব্যাখ্যানীতি অবলম্বন করেন যাতে ইগালিটারিয়ান (Egalitarian) সংবিধানের অসাধারণ, অনন্য ও জনবান্ধব অনুচ্ছেদগুলো শুধু সংবিধানের শুকনো পাতায় শুকনোভাবে না থেকে প্রকৃতপক্ষে জনগণের সুফলে লাগে।

তবে সত্তরের দশকে বিচারপতি খান্নার হেবিয়াস কর্পাস সংক্রান্ত অনবদ্য ভিন্ন রায়ের কারণে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র বিচারপতিকে ভারতের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ এবং এর প্রতিবাদে বিচারপতি খান্নার পদত্যাগ বিচার বিভাগে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে। বিচারপতি খান্না তাঁর আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেন, "ভারতের প্রধান বিচারপতির পদ না পাওয়াটা কখনও-ই আমাকে ভাবান্বিত করেনি। হেবিয়াস কর্পাস মামলার রায় দেবার পর থেকেই আমি এই মূল্য দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। যারা বিবেকের কণ্ঠ শুনেছে তাদের অনেককেই এর থেকে অনেক বেশি মূল্য দিতে হয়েছে।"

[H. R. Khanna, `Neither roses nor thorn']

গ্রানভিলে অস্টিনের (Granville Austin) মতে, বিচার বিভাগের উপর রাজনৈতিক নির্বাহী বিভাগের নগ্ন হস্তক্ষেপ বাধ্য করেছে বিচার বিভাগকে সক্রিয় ও জনবান্ধব ভূমিকা পালন করতে। বিচারপতি ভাণ্ডারীর মতে, ভারতে তিনটি ধাপে জনস্বার্থে মামলা বা বিচারিক সক্রিয়তা বিস্তার লাভ করেছে। প্রথম ধাপের মামলাগুলো জনগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ সংক্রান্ত; দ্বিতীয় ধাপের মামলাগুলো সৃষ্টিবৈচিত্র্য, বনরক্ষা, পরিবেশরক্ষা, নদীরক্ষা, ঐতিহাসিক স্থাপনা রক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে আবদ্ধ ছিল; তৃতীয় ধাপের মামলাগুলো সরকারের স্বচ্ছতা, সততা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়েছিল।

[Justice Bhandari এর রায় State of Uttaranchal v.Balwant singh Chaufal]

বাংলাদেশের সংবিধানের মুখবন্ধ (Preamble) শোষণমুক্ত সমাজের প্রতিজ্ঞা করেছে, এটি প্রতিজ্ঞা করেছে সোশালিস্টিক অর্থব্যবস্থার মাধ্যমে ন্যায়সঙ্গত ও ইগালিটারিয়ান (Egalitarian) সমাজ গড়ার (অনুচ্ছেদ-১০), কৃষক ও শ্রমিকের মুক্তির (অনুচ্ছেদ-১৪), গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের (অনুচ্ছেদ-১১), বিচার বিভাগের পৃথকীকরণের (অনুচ্ছেদ-২২), বিচার বিভাগের স্বাধীনতার (অনুচ্ছেদ-৯৪(১)।

আমাদের সংবিধানে মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য entrenched বিধান (যে বিধান পরিবর্তনে বিশেষ প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয় তাকে entrenched বিধান বলে) রাখা আছে এবং সংবিধানের সৌন্দর্য হল এখানে মৌলিক অধিকার বলবৎ করার অধিকারটিই একটি স্বতন্ত্র মৌলিক অধিকার (অনুচ্ছেদ ৪৪)। এত অনন্য বিধান থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট বিচারিক সক্রিয়তা বা জনস্বার্থে মামলার প্রয়োজনীয়তা ১৯৯৮ সালের আগ পর্যন্ত অনুভব করতে পারেনি।

১৯৭৪ সালে 'বেরুয়ারি' মামলা জনস্বার্থে মামলার স্বীকৃতি পায়নি। ১৯৯১ সালে 'বাংলাদেশ সংবাদপত্র' মামলায় জনস্বার্থে মামলাকে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখান করা হয়েছে। পরিশেষে, ১৯৯৮ সালে বিচারপতি মোস্তফা কামাল জনস্বার্থে মামলাকে স্বীকৃতি প্রদান করেন 'ড. মহিউদ্দিন ফারুকী বলাম বাংলাদেশ' মামলায়। ভারতে যখন জনস্বার্থে মামলা পূর্ণ যৌবনে উপনীত হয়েছে তখন আমরা এটাকে স্বীকৃতি প্রদান করি মাত্র। যে কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক রেদওয়ানুল হক একে জনস্বার্থে মামলার 'বিলম্বিত জন্ম' বলে অভিহিত করেছেন।

[Ridwanul Haque, "Judicial Activism in Bangladesh: A Golden Mean Approach"]

এই বিলম্বিত জন্মের মূল কারণ ছিল সংবিধান বাস্তবায়নের দায় যে সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত তা দেরিতে অনুভব করা। আরেকটি কারণ হল, এই অতিসুন্দর আইনটি (সংবিধান) বারংবার সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন এবং dismantle করা হয়েছে।

প্রাথমিক পর্যায়ে জনস্বার্থে মামলাগুলো শুধুমাত্র লোকাস স্টান্ডাই (Locas Standi) অর্থাৎ মামলা করার অধিকার উম্মুক্তকরণে সীমাবদ্ধ ছিল যেন ক্ষতিগ্রস্ত একটি গ্রুপ বা গোষ্ঠীর পক্ষে সমাজের যে কোনো সচেতন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মামলা দায়ের করতে পারেন। কিন্তু ভারতের পূর্ণবিস্তৃত বিচারিক সক্রিয়তার কারণে দ্রুত বাংলাদেশে জনস্বার্থে মামলার সঙ্গে সুয়োমুটো রুল জারির প্রবণতা পরিলক্ষিত হয় এবং দুটি সাংবিধানিক বিতর্কের সূত্রপাত হয়।

একটি হচ্ছে, বাংলাদেশের সংবিধানে আদৌ সুয়োমুটো রুল জারির সুযোগ আছে কিনা। আরেকটি বিতর্ক হচ্ছে, জনস্বার্থে মামলা বা সুয়োমুটো রুলের মাধ্যমে জুডিশিয়াল অ্যাডভেঞ্চারিজম (Judicial adventurism), জুডিশিয়াল ওভাররিচ (Judicial overreach), জুডিশিয়াল এক্সেসিজম (Judicial excessism), জুডিশিয়াল টোটালিটারিয়েনিজম (Judicial totalitarianism) হচ্ছে কিনা।

ভারতে জনস্বার্থে মামলা পরিবৃদ্ধির সঙ্গে বাংলাদেশে এর বিস্তারের কিছু পদ্ধতিগত পার্থক্য আছে। ভারতে সূচনালগ্নে এটি ইনফরম্যাল বা এপিসটোলারি (একটি পোস্টকার্ড বা চিঠিপ্রাপ্তির মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিষয়ে রুল ইস্যু করা) থাকলেও দিনে দিনে এটি ফরম্যাল বা পদ্ধতিগতভাবে শুদ্ধ হচ্ছে। পক্ষান্তরে, বাংলাদেশে, জনম্বর্থে মামলা সূচনালগ্নে পদ্ধতিগতভাবে শুদ্ধ হলেও দিনে দিনে এটি ইনফরম্যাল হচ্ছে।

যদিও রেদওয়ান বারী তাঁর বইতে একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন, যেখানে কারাগারে আটক এক বন্দি ভারতীয় সেনার চিঠির ভিত্তিতে বিচারপতি মোর্শেদ রুল জারি করেছিলেন। বাংলাদেশে, ২০০১ সালে ড. ফস্টিনা পেরেইরার চিঠির ভিত্তিতে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। ১৯৯৩ সালের রাষ্ট্র বনাম ডেপুটি কমিশনার, সাতক্ষীরা হচ্ছে পত্রিকার রিপোর্টের ভিত্তিতে সুয়োমুটো রুল জারির প্রথম নিদর্শন।

তবে গত কয়েক বছরে সুয়োমুটো রুল জারির তীব্র প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ২০১২ সালে একটি পত্রিকার রিপোর্টে দেখা যায়, একজন ভুল ব্যক্তিকে ৪ বছর ৯ মাস যাবত জেলে আটক রাখা হয়েছে। ডেপুটি কমিশনারের তদন্ত রিপোর্টে ঘটনাটি সত্য প্রমাণিত হলে, মহামান্য হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ ওই ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে মুক্ত করার নির্দেশ দেন এবং দায়ী প্রত্যেক ব্যক্তির স্বীয় পকেট থেকে ২০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেন।

ক্রিমিনাল জুরিসডিকশনে (এখতিয়ারে) এটি প্রথম বিচারিক সক্রিয়তার নির্দশন। অন্যদিকে ক্ষতিপূরণমূলক এখতিয়ারে (Compensatory Jurisdiction) এটি প্রথম বা একমাত্র নিদর্শন। এ ধরনের দ্রুত ন্যায়বিচার প্রদানকারী নিদর্শনের কারণেই জনস্বার্থে মামলা বা সুয়োমুটো রুল এতটা নন্দিত এবং অনেক ক্ষেত্রেই সুয়োমুটো রুলের গ্রহণযোগ্যতা এর মূল সমালোচনাকে ছাপিয়ে যায়।

আইনবিদদের একটি অংশের মতে, বাংলাদেশের সংবিধানে স্পষ্ট করে সুয়োমুটো রুল জারির ক্ষমতা প্রদান করা হয়নি। পজিটিভিস্টদের (Positivists) মতে, সুয়োমুটো রুল প্রকৃতপক্ষে 'জুডিশিয়াল অ্যাডভেঞ্চারিজম' (Judicial Adventurism) বা 'জুডিশিয়াল ওভারঅ্যাকটিভিজম' (Judicial Overactivism) এর নিদর্শন।

জুডিশিয়াল অ্যাডভেঞ্চারিজম হচ্ছে ওই সকল সমস্যা সমাধানের বিচারিক প্রচেষ্টা যা বিচারিকভাবে সমাধানযোগ্য নয়। আর বিচার বিভাগ যখন তার সীমা লঙ্ঘন করে পলিসির ব্যাপারে আইন বিভাগ বা নির্বাহী বিভাগের পূর্ণ স্বেচ্ছাধীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে, তখন সেটিকে বলা হয় জুডিশিয়াল ওভারঅ্যাকটিভিজম।

অ্যাকটিভিস্টদের মতে, বাংলাদেশ সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদে 'কোনো ব্যক্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে' (on the application of any person) সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকায় সুয়োমোটো রুল জারির কোনো সুযোগ নেই। জনস্বার্থে মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির (person aggrieved) অনেক উদার ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে, কিন্তু 'কোনো ব্যক্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে'– এই অত্যাবশ্যকীয় শর্ত বাইপাস করার সুযোগ আছে কিনা তা যথার্থই আলোচনার দাবিদার। কারণ আইনের স্বতঃসিদ্ধ একটি নীতি হচ্ছে, একটি বিষয়ের সুস্পষ্ট উল্লেখ উক্ত বিষয়ে অন্য কোনো কিছু উহ্য (imply) করাকে চারিত করে (express mention of one thing implies the exclusion of another)।

বাংলাদেশের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এবং সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মাহমুদুল ইসলাম তাঁর সংবিধান বিষয়ক অনবদ্য বইয়ের মুখবন্ধে সুয়োমুটো রুল জারিকে 'সংবিধানসম্মত নয়' বলে মন্তব্য করেছেন। অন্যতম সংবিধান প্রণেতা কামাল হোসেন SAILS এ সংবিধান তত্ত্ব বিষয়ক এক আলোচনায় মন্তব্য করেন যে, সুয়োমুটো রুল অত্যন্ত ব্যতিক্রমী (rarest of the rare) প্রেক্ষাপটে দেওয়া যেতে পারে, যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি আদালতে আবেদন করার মতো অবস্থায় নেই।

সুয়োমুটো রুলের সমর্থকেরা অনেক ক্ষেত্রেই ভারতের উদাহরণ দিয়ে থাকেন, কিন্তু ভারতের সংবিধানের ৩২ ও ২২৬ অনুচ্ছেদের সঙ্গে বাংলাদেশের সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের একটি দৃশ্যমান পার্থক্য বিদ্যমান। ভারতের সংবিধানে 'কোনো ব্যক্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে' শব্দগুলো নেই যা বাংলাদেশের সংবিধানে বিদ্যমান। এ কারণে 'বাংলাদেশ সংবাদপত্র' মামলায় বলা হয়েছিল, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সংবিধান আর ভারতের সংবিধান এক গোত্রভূক্ত নয় (not in pari materia)।

সে দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করলে বলা যেতে পারে, বাংলাদেশের সংবিধান সুস্পষ্টভাবে সুয়োমুটো রুল জারির বিধান রাখেনি। যদিও রেদওয়ানুল হকের মতে, সংবিধানের উদ্দেশ্য, আইনের শাসন ও মানবতার দৃষ্টিকোণ থেকে সুয়োমুটো রুল জারির দৃঢ় আইনগত ও সাংবিধানিক বৈধতা রয়েছে। রেদওয়ানুল হক লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত অধ্যাপক ওয়ালার মেনস্কির যুক্তি গ্রহণ করেছেন।

মেনস্কির মতে, "যদি একজন বিচারক সকালে নাস্তা খাওয়ার সময় পত্রিকায় জানতে পারেন যে, একজন হতদরিদ্র ব্যক্তিকে ইচ্ছাকৃতভাবে তার অত্যাবশ্যকীয় অধিকার বঞ্চিত করা হয়েছে তাহলে কীভাবে তিনি একটু পরে আদালতের এজলাসে বসে অভিনয় করবেন যে, তিনি হলেন সেই ব্যক্তি যার উপর ন্যায়বিচারের গুরুভার ন্যস্ত? এটি আসলে অন্যের যন্ত্রণা উপলব্ধি করার মতো ব্যক্তিগত বিবেকের বিষয়।''

এখন পর্যন্ত সুয়োমুটো রুল জারির সাংবিধানিক সুস্পষ্টতা সুপ্রিম কোর্টের আপিলেট ডিভিশনে পরীক্ষিত না হওয়ায় বিষয়টি একাডেমিক আলোচনার বিষয়বস্তু হিসেবেই রয়ে গেছে।

এটি অনস্বীকার্য যে, শুধুমাত্র সংবাদপত্রের রিপোর্টিং-এর ভিত্তিতে সুয়োমুটো রুল জারি অনেকটাই বিপজ্জনক, যেহেতু আমাদের দেশে এখনও পূর্ণ স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ সাংবাদিক সমাজ গড়ে উঠেনি। অন্তত সংবাদপত্রের রিপোর্টের ভিত্তিতে সুয়োমুটো রুল জারির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে একটি সত্যপাঠ সম্বলিত বক্তব্য দেওয়া উচিত যে, তার প্রকাশিত তথ্য বস্তুনিষ্ঠ।

এ বিষয়েও সমালোচনা করা যায় যে, অনেক ক্ষেত্রেই এ ধরনের রুলের মাধ্যমে আদালত বিতর্কিত দ্যাফট-এ অনুপ্রবেশ করেন যা সাধারণত আইনসিদ্ধ নয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কমিশন রিপোর্ট চাওয়ার কারণে এবং এর ভিত্তিতে রুল নিষ্পত্তির কারণে অনেক ক্ষেত্রে এই সমালোচনা আর গ্রহণযোগ্য নয়।

পাকিস্তানি আইনবিদ আসিফ এস কে খোসার মতে, সুয়োমুটো রুল সাধারণ ন্যায়বিচারের পরিপন্থী, কারণ এতে আইনজীবীদের বা পক্ষদের বক্তব্য গ্রহণের সুযোগ থাকে না। প্রকৃতপক্ষে সুয়োমুটো রুলের সাংবিধানিকতার চেয়েও এর যথেচ্ছ ব্যবহার একে বেশি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আপিল বিভাগের সুয়োমুটো রুলের বিষয়ে বিস্তারিত বক্তব্য সম্বলিত কোনো রায় না থাকায় সুয়োমুটো রুল জারির ক্ষেত্রে 'পিক অ্যান্ড চুজ' (pick and choose) এর সুযোগ রয়ে গেছে।

আসমা জিলানীর নেতৃত্বে পাকিস্তান মানবাধিকার কমিশনের এক গোলটেবিল বৈঠকে সুস্পষ্ট মতামত প্রদান করা হয় যে, শুধুমাত্র বিচারিক স্বেচ্ছাধীনতার ভিত্তিতেই সুয়োমুটো রুল জারি হতে পারে না। উক্ত বৈঠকে আরও মন্তব্য করা হয় যে, সুয়োমুটো রুল জারির সময় কখনও-ই অন্তর্বর্তী আদেশ (interim order) দেওয়া উচিত নয়।

সুপ্রিম কোর্ট যেহেতু সার্বিকভাবে সংবিধানের অভিভাবক এবং সাংবিধানিকভাবে একে বাস্তবায়ন ও বলবতের গুরুদায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের যাতে এই সুন্দর সংবিধানের অতিসুন্দর বিধানগুলো প্রকৃতপক্ষে নাগরিককে পূর্ণাঙ্গ সুফল দিতে পারে এবং শুধুমাত্র পদ্ধতিগত বাধ্যবাধকতার (mere technicalities) কারণে বিচারক যেন এই দায়িত্ব পালনে বাধাগ্রস্ত না হন, সে ক্ষেত্রে সুয়োমুটো রুলের আবির্ভাব অবশ্যই একটি শুভ লক্ষণ।

তবে এ মূহূর্তে প্রয়োজন আইন বিভাগে সুয়োমুটো রুল বিষয়ে একটি পরিপূর্ণ রায় যাতে একটি সুনির্দিষ্ট সীমারেখায় সুয়োমুটো জারি করা হয়। এর প্রতীক্ষায় বর্তমানে সকল মহল।

ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।