২০১৪-১৫ অর্থবছর ও সমৃদ্ধি সোপান

ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন
Published : 26 May 2014, 12:54 PM
Updated : 26 May 2014, 12:54 PM

অর্থমন্ত্রী মহোদয় ৫ জুন ২০১৪-১৫ সনের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের বাজেট পেশ করবেন জাতীয় সংসদে। ইতোমধ্যেই গণমাধ্যমে বাজেটটির সম্ভাব্য আয়তন, কর, ভর্তুকি, বিনিয়োগ, অর্থায়ন, দ্রব্যমূল্যের ওপর প্রভাব এবং গতিপ্রকৃতি নিয়ে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা চলছে। তবে উন্নয়ন বিষয়সহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও সামাজিক যে নীতি-কৌশল বাজেটে ঘোষণা করা হয়, সে সম্পর্কে জাতীয় ঐক্যমতে পৌঁছার কোনো রাজনৈতিক যোগাযোগ প্রেক্ষিত গত তেতাল্লিশ বছরেও গড়ে ওঠেনি।

অথচ গণতন্ত্রের একটি অনতম বড় শক্তি হল বিভিন্ন মত ও পথকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রায় সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি অবস্থানে নিয়ে আসা। বর্তমান অসুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার জন্য হলেও বড় রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের আশীর্বাদপুষ্ট সংশ্লিষ্টগণ অন্তত সামাজিকভাবে মতবিনিময় করে মোটা দাগের বিষয়গুলোতে সমঝোতার চেষ্টা করতে পারেন।

গুম, খুন, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণের পথ সন্ধান, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ওপেন পিট পদ্ধতিতে দেশীয় কয়লার আহরণ ও ব্যবহার, অপ্রদর্শিত আয় মূলধারায় আনার একটি কার্যকর, বিশ্বাসযোগ্য ও টেকসই নীতি অনুসন্ধান, প্রধানত শিল্প প্রসারে কর্মসংস্থানধর্মী উন্নয়ন কৌশলে প্রবৃদ্ধির তালাশ, বড়মাপের অবকাঠামো (পদ্মাসেতু, বিদ্যুৎ উৎপাদন, মাটি ও জলাশয়ের জবরদখল নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি) বিষয়ে কারিগরি পদ্ধতি, অর্থায়নের কৌশল ও ব্যবস্থাপনার নীতি সম্পর্কে একটি কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য অবস্থানে আসা এবং সামাজিক সুরক্ষা সংরক্ষণ নীতি বিষয়ে দলমত নির্বিশেষে তথ্য, অভিজ্ঞতা ও মতবিনিময় এ জন্য জরুরি যে, সেভাবে প্রণীত বাজেটের বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতা বাগে আনা সহজ হবে।

এটি করতে না পারলে গণতন্ত্র কি সুসংহত হবে! আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি কি কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উঠানো যাবে!

২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট এমন একটি সময়ে ঘোষিত হতে যাচ্ছে যখন পাঁচ বছরে নিরবিচ্ছিন্নভাবে বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার শতকরা ছয় ভাগের বেশি হয়েছে। দীর্ঘ সময়ব্যাপী জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে, মাথাপিছু আয় ১১৯০ মার্কিন ডলারে উন্নীত করা হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতি মহামন্দা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবেশি দেশ ভারতে একটি নির্বাচন হয়েছে এবং বহু আশা-আকাঙ্ক্ষার দোলাচলেও বাংলাদেশ এতে লাভবান হবে বলে নিবন্ধকার মনে করেন।

সংগঠন ও ব্যক্তি, বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, দ্য স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুয়োর, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি, লন্ডনের লিগেটাম প্রসপ্যারিটি ইনস্টিটিউট, মুডি'স, গোল্ডম্যান স্যাকস, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য ইকনোমিস্ট, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট, প্রফেসর অমর্ত্য সেন, রাজনীতির সফল রাষ্ট্রনায়ক মাহাথির মোহাম্মদ প্রমুখ বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রগতির অকুণ্ঠ সাধুবাদ জানিয়েছেন।

তা বলে কিন্তু আত্মপ্রসাদের অবকাশ নেই। কঠিন সময় আসছে ধেয়ে। আমরা বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির বার্ষিক প্রবৃদ্ধি শতকরা ৯-১০ হারে উন্নীত করতে সক্ষম এবং মানবসম্পদ উন্নয়নসূচক এইচডিআই সোপানের মধ্যম স্তরে (Medium HDI) উঠার পথ সন্ধানে তৎপর (HDI value in Bangladesh to rise from 0.52 to 0.65) হতে বাধ্য।

সে প্রেক্ষিতে আসন্ন বাজেটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা, সততা, স্বচ্ছতা, গতিময়তা আনয়ন, ঝিমিয়ে পড়া বেসরকারি বিনিয়োগের পুনরুত্থান, আড়াই লক্ষ কোটি টাকা বাজেটের জন্য অর্থ যোগানে সক্ষম রাজস্ব আহরণ পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তি ও অঞ্চল পর্যায়ে বৈষম্য হ্রাস করতে একদিকে কর্মসংস্থানভিত্তিক প্রবৃদ্ধি জোরদার করা এবং অন্যদিকে সামাজিক সংরক্ষণ ব্যবস্থার সুদৃঢ়করণ। বরাবরের মতোই বাজেট বাস্তবায়ন, বিশেষ করে রাজস্ব আহরণ, ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও ব্যয়মান বৃদ্ধি ও অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠাও বড় বড় চ্যালেঞ্জ।

বড় বাজেটের রাজস্ব আদায় সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা যেতে পারে।

২০১৩-১৪ বছরে ১ লক্ষ ৩৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণে যে ঘাটতি, তার একটি সঙ্গত কারণ ছিল রাজনৈতিক হানাহানি। এখন আস্থার ভাব বেশ খানিকটা ফিরে এসেছে। প্রত্যক্ষ করে বেশি বেশি রাজস্ব আদায়ের নীতি অব্যাহত রাখা সমীচীন হবে। কর্পোরেট করের হার হ্রাস করার যৌক্তিক কারণ দেখি না।

আয়করের ব্যাপারে আরও বেশি মনোযোগ প্রয়োজন। রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান যে তিনটি পেশার রুই-কাতলাদের কর না দেবার প্রবণতার কথা সাহস করে বলেছেন, সেই তিন ক্ষেত্র এবং অনুরূপ অন্যান্য পেশাদারগণের কাছে করবান্ধব বার্তা নিয়ে যেতে হবে। আয়কর দেওয়া যে আইনি ও নৈতিকভাবে জরুরি, হয়রানিসহ নেতিবাচক দিকগুলো দূর করার আশ্বাস এবং কর ফাঁকির ফল কী হতে পারে এ বিষয়ে দিয়ে উচ্চতর কর্মকর্তাগণ সৌহার্দ্যপূর্ণ মতবিনিময় করে বড় ধরনের সুফল আশা করতে পারেন।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বিত্তবান দশ শতাংশ ব্যক্তির হাতে নাকি শতকরা ৩৭ শতাংশ আয় ও সম্পদ রয়ে গেছে। অর্থাৎ ৪০ লক্ষ পরিবার দেশের শতকরা ৩৭ ভাগ আয়-সম্পদের মালিক। কর দিচ্ছেন ১২ লক্ষ। সুতরাং বাকি ২৮ লক্ষ করদাতার কাছে করবান্ধব বার্তাসহ পৌঁছাতে হবে এবং একটি সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়তে তাদের কর প্রদান কত জরুরি তা ব্যাখ্যা করতে হবে।

রাজস্ব আহরণে একটি বৃহত্তর ক্ষেত্র হতে পারে নগর এলাকার জমি ও ফ্ল্যাট বিক্রয় ও হস্তান্তর ও নিবন্ধন করের যৌক্তিকীকরণ। ভূমির মূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। প্রকৃত ক্রয়-বিক্রয় মূল্যের ওপর আয়কর আদায়ের জন্য নগর এলাকায় অঞ্চলভেদে জমির ধারণা-মূল্য বাজার-মূল্যের সমপর্যায়ে উন্নীত করে করহার ব্যাপকভাবে হ্রাস এবং কর-নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা হলে কর আদায় কয়েক গুণ বাড়তে পারে।

অনুরূপভাবে অঞ্চলভেদে প্রতি বর্গমিটারে ফ্ল্যাট/অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ ও ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর করহার যৌক্তিকভাবে হ্রাস করে কর আদায় দক্ষতা ও সখ্যতা বাড়ালে ইতিবাচক ফললাভ হতে পারে। সমবায়ের নামে বহুসংখ্যক ফ্ল্যাট/অ্যাপার্টমেন্ট নিবন্ধন-বহির্ভূত রয়ে গেছে। সব ফ্ল্যাটকে করবান্ধবভাবে নিবন্ধনে আসতে সাহায্য করা দরকার।

সম্প্রতি যানবাহনের ওপর করারোপে ইতিবাচক সংশোধন আনা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় দশ বছরের বেশি আগে প্রস্তুত যে সকল গণযানবাহন রাস্তায় চলাচল করে, সেগুলোর ওপর বেশি হারে সড়ক কর আরোপ করা যেতে পারে। এতে ট্রাফিক ভিড় কমাতে সাহায্য হতে পারে। একটু সময় নিয়ে হলেও ঢাকা মহানগরীর সকল প্রবেশপথে টোল মেশিন বসিয়ে রাজস্ব আদায় করা যেতে পারে।

ধূমপান একটি মারাত্মক ঝুঁকি। তা সত্ত্বেও এর প্রসার হচ্ছে। কালক্রমে সিগারেটের ওপর করবিন্যাসের ফলে এখন চারটি মান ও কর-স্তর সৃষ্টি হয়েছে। সর্বনিম্ন স্তরে সিগারেটের শলাকার সংখ্যা শতকরা ৬২ ভাগ এবং সে স্তর থেকে কর আদায়ের অনুপাত মাত্র শতকরা ৩০ ভাগের মতো। ধূমপানে নিরুৎসাহিত করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কবার্তা এবং ২০১৪-১৫ বছরে পদ্মাসেতু নির্মাণের কথা স্মরণে রেখে এবং বাড়তি খরচের কথা বিবেচনা করে, বস্তুনিষ্ঠ অথচ স্বচ্ছ বিশ্লেষণ সিগারেট শুল্ক থেকে অন্তত তিন হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব দিতে পারে।

সবচেয়ে কম দামি সিগারেট শলাকার মূল্য যদি বর্তমানে গড়ে ১ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ২ (দুই) টাকার নিট বিক্রয়-মূল্যে বাড়ানোর অনুমতি দেওয়া যায় এবং করের হার বর্তমানের শতকরা ৫৪ ভাগ থেকে শতকরা ৫৭ ভাগে উঠানো যায় তবে সব পক্ষই লাভবান হতে পারেন।

নামমাত্র মূল্যে ইজারা নিয়ে বালু, পাথর, মৎস্য ও বনমহাল থেকে কোটি কোটি টাকা 'কামিয়ে' নিচ্ছেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। ভেবে-চিন্তে ওইসব ইজারার ন্যূনতম রিজার্ভেশন মূল্য স্থির করে দিলে বছরে অন্তত হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব আসতে পারে।

ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইস্যু এখন বিনিয়োগে স্থবিরতা। বাজেটে অর্থনীতিতে রাজনীতি ও শিল্পনীতিতে বিবেচনার শীর্ষে রয়েছে বিনিয়োগ প্রসার। ভারতের নবনির্বাচিত সরকারের সঙ্গে আগ বাড়িয়ে, তবে পরস্পরের স্বার্থ ও সম্মান রক্ষা করে, গভীরভাবে আলাপ-আলোচনা শুরু করা দরকার। এতে সম্ভবত তিস্তা চুক্তি ও সীমান্ত চুক্তি অচিরেই সই হয়ে যাবে। বাড়তে পারে দুই প্রতিবেশির মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা। দ্

য ইকনমিস্ট এ সপ্তাহে 'দ্য কিক স্টারটিং ইন্ডিয়া' শীর্ষক নিবন্ধে ভারতীয় অর্থনীতিতে অদক্ষ ব্যবস্থাপনা ও অপরিণামদর্শী নীতি মোদি সরকার না পাল্টালে চীনদেশীয় বিনিয়োগ ভারতবর্ষের পরিবর্তে বাংলাদেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকায় চলে যাবার যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে তা অতিশয় তাৎপর্যপূর্ণ। বাজেটের ব্যয়-কৌশলে বাংলাদেশের মুন্সিয়ানা দেখানোর জন্য ২০১৪-১৫ অর্থবছরেই বড় একটি ব্যতিক্রমধর্মী বৃহৎ পদক্ষেপ নিতে ভারতের একশ কোটি রুপির খুঁড়িয়ে চলা সহজশর্ত ঋণের যৌথ উপকারে আসা প্রকল্প প্রণয়নে অগ্রাধিকার জরুরি।

ঋণকে মঞ্জুরে পরিণত করার দাবিও করা যায়। সম্ভবত যথাবিহিত হোমওয়ার্ক করে উপযুক্ত সখ্যতা কৌশল নিলে বাংলাদেশ তার ভূ-রাজনৈতিক সুবিধা ব্যবহার করে 'দেব আর নেব' ভিত্তিতে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সঙ্গে পরস্পরের জন্য লাভজনক অর্থনৈতিক ও শিল্প-বাণিজ্যিক সহযোগিতায় আসতে পারে।

অনেকেরই স্মরণ থাকতে পারে যে, জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে পারঙ্গম বন্যা নিয়ন্ত্রণে টিপাই বাঁধ নির্মাণের মূল দাবি বাংলাদেশই করেছিল। এখন এতে ঢুকেছে রাজনীতি। ভারতবর্ষ অবশ্যই তার ভূখণ্ডকে সহিংসতামুক্ত রাখতে চাইবে, নেফা অঞ্চলে পণ্য পরিবহণে বাংলাদেশের সহযোগিতা সে দেশের জন্য খুবই জরুরি আর মোদি সরকারের নেতৃত্ব পুনরুজ্জীবিত ভারতবর্ষে বিশাল অর্থনীতির বহির্বাণিজ্য সম্প্রসারণের চাবিকঠি বাংলাদেশের হাতেই।

সুতরাং মুক্তমন কৌশলী পরস্পরের সম্মানজনক সহযোগিতার জন্য ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটকে তৈরি রাখতে হবে।

বাজেট ভর্তুকি নিয়ে অনেক কথাবার্তা হয় যার অনেকটাই যুক্তিনির্ভর নয়। কৃষিপণ্য উৎপাদনে ভর্তুকি বনাম মূল্য-সমর্থন বিষয়ে তেমন কোনো আলোচনা এ দেশে হয় না কেন? দুর্বলের সুরক্ষার জন্য ভর্তুকি প্রয়োজন। আবার আমদানির সঙ্গে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন দেশীয় উৎপাদনকারীদের শুল্ক সুরক্ষা বেষ্টনিও জরুরি। তবে স্বাধীনতার তেতাল্লিশ বছর পরেও শুল্ক সুরক্ষা চলেই আসছে। সুরক্ষা দেয়ালের আড়ালে অদক্ষতার ভারি পাথর লালন করছে না তো অর্থনীতি? বাজার অর্থনীতিকে ন্যূনতম নিয়ন্ত্রণে রেখে দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও সততার সঙ্গে কাজ করতে দেওয়া উচিত।

তবে নগর অঞ্চলের বাইরে শিল্প প্রণয়ন ও বিকাশের জন্য ট্যাকস হলিডে, শুল্ক হ্রাস ধরনের যে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ সরকার নিতে চাইছে তা অতিশয় যুক্তিসঙ্গত। সাশ্রয়ী মূল্যে নিরাপদ পরিবেশবান্ধব কাঁচামাল ও পণ্য পরিবহনে রেলপথ ও জলপথ উন্নয়নে সাহসী ভূমিকা প্রত্যাশা করা হচ্ছে আগামী বাজেটে।

অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিশীল চামড়া শিল্প ও পাদুকা শিল্প, পর্যটন শিল্প এবং মৎস্য ও পশুপালন খাত ২০১৪-১৫ বাজেটে বিশেষ বিবেচনার দাবিদার।

সম্প্রতি এক হিসাবে এদেশে প্রতিবন্ধিতায় ও অটিজমে অসুবিধাগ্রস্তগণের সংখ্যা মাত্র ১৬ লক্ষ বলে দেখানো হয়েছে। এটি অবিশ্বাস্য। সম্পূর্ণ মাথা-গণনার কথা বলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি স্যাম্পল সার্ভে করে বরাবরের মতোই প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত কম বলে দেখাচ্ছে। নীতি-নির্ধারণ মহলে এ বিষয়ে যথাবিহিত মনোযোগ দিয়ে কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ একটি সম্পূর্ণ মাথা-গণনা তথা নিবন্ধন মাধ্যমে প্রতিবন্ধিতা ও অটিজমে অসুবিধাগ্রস্তগণের সঠিক সংখ্যা, অবস্থান ও শারীরিক অসুবিধার একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র তৈরি করে সে অনুসারে সম্পদ ও মনযোগ বরাদ্দ করার চিন্তা করতে পারেন।

পরিশেষে, অপ্রদর্শিত আয়কে মূলধারায় আনার জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ঘোষণা জরুরি। এতে রাজস্ব বোর্ড নয়, সরকার ঘোষণা দেবেন যে, উপযুক্ত কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করলে ভবিষ্যতে কেউ প্রশ্ন তুলবে না। বৈধকরণ কর হার হবে শতকরা ৩০ ভাগ। নির্দিষ্ট তারিখ দিয়ে সে সময়ের মধ্যে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ না করলে তা সরকার বাজেয়াফত করতে পারবেন।

সম্পদ কর বসানোর সময় সম্ভবত এসে গেছে।

ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন: অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা।