গুম-খুন: পরিস্থিতির দায় বুঝে মোকাবেলা করুন

হাসান মামুনহাসান মামুন
Published : 7 May 2014, 06:23 PM
Updated : 7 May 2014, 06:23 PM

দিনদুপুরে ব্যস্ত সড়ক থেকে সাতজনকে তুলে নিয়ে মেরে ফেলে লাশে ইট বেঁধে নদীতে ফেলে রাখার ঘটনায় যে কোনো সরকারেরই বিব্রত হওয়ার কথা। সে সরকার যদি অর্ধেক নির্বাচিত বা অনির্বাচিত হয়, তবুও। কিন্তু সরকারকে তেমন বিব্রত মনে হচ্ছে না। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কী বললেন, তার গুরুত্ব কমই। মন্ত্রণালয়টির মূল দায়িত্ব তো প্রধানমন্ত্রীর হাতে। নারায়ণগঞ্জের ওই ঘটনাসহ দেশব্যাপী গুম-খুনের জন্য মে দিবসের শ্রমিক জনসভায় তিনি বিরোধী দলকে দায়ী করলেন।

যারা এত কিছু করেও ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন থেকে ক্ষমতাসীনদের বিরত রাখতে পারেননি, তারা এখন গুম-খুন করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছেন, এটা ক'জন বিশ্বাস করবে? দেশে অনেক ইস্যু থাকলেও বিএনপি বড় করে আন্দোলনের ডাক দেওয়ারও সাহস পাচ্ছে না। সাতজনকে অপহরণপূর্বক খুনের ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করলেও নারায়ণগঞ্জ শহরে পর্যন্ত হরতাল আহ্বান করেনি বা করার কথা ভাবেনি দলটি। স্থানীয় আইনজীবীদের আহুত হরতালে তারা 'নৈতিক সমর্থন' দিয়েছেন কেবল। আর রাজধানীতে পালন করেছেন গণঅনশন কর্মসূচি।

এতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিএনপি নেত্রী যেভাবে গোটা দেশকে 'মৃত্যু-উপত্যকা' বলে বর্ণনা করেছেন, তার সঙ্গে একমত হওয়া যাবে না। তবে গুম-খুনসহ আইনশৃঙ্খলার অবনতির জন্য সরকারকে যেভাবে দায়ী করেছেন, তার সঙ্গে অনেকেই একমত হবেন। দায় তো সরকারেরই, যেহেতু তারা রয়েছেন রাষ্ট্রক্ষমতায়।

পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী 'বেপরোয়া' হয়ে উঠেছে বলে তিনি যে মন্তব্য করেছেন, তাতে ঢালাওভাবে বলার প্রবণতা রয়েছে বটে। তবে এর যেটুকু সত্য, শেষ বিচারে তার দায়ও সরকারের ওপর বর্তাবে। এর মুখোমুখি হয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের উচিত নয় বিরোধী দলের ওপর দায় চালান করে দিয়ে, বিশেষত তদন্তের আগে 'পাবলিকলি' কোনো বক্তব্য দেওয়া।

এটা ভ্যাটের মতো পরোক্ষ কর নয় যে, ক্রেতার ঘাড়ে চালান করে দেবেন বিক্রেতা। বর্তমান সরকারের বিরোধীরা ক্ষমতায় থাকাকালে তারাও একই পন্থা অনুসরণ করেছেন নিজেদের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হলে। জঙ্গি উত্থানের ঘটনায় তারা মিডিয়ার ওপর দোষ চাপিয়ে বলেছিলেন– 'এটা মিডিয়ার সৃষ্টি'। রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরে আসতে পারলে একই কাজ তারা হয়তো আবারও করবেন। চক্রাকারে এ চর্চা সমানে চলছে। ভোটারসহ সর্বস্তরের মানুষ তা দেখে চলেছি অসহায়ভাবে।

নারায়ণগঞ্জে যারা ওই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ-সম্পৃক্ত হলেও মনে হচ্ছে না সরাসরি রাজনৈতিক কোনো কারণে ওই ঘটনা ঘটেছে। কী কারণে ঘটেছে, কারা ঘটিয়েছে, তা জানা যাবে তদন্ত সঠিক ধারায় এগোলে। এ জন্য দক্ষতার সঙ্গে সঙ্গে তদন্তকারীদের হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা ও তাদের নিরপেক্ষতা চাই।

সরকারের উচ্চ পর্যায় চাইলে এসব শর্ত পূরণ করা সম্ভব। অতীতে আমরা দেখেছি, বিএনপি-জামায়াত সরকার শুরুতে জঙ্গি উত্থানের বিষয় একেবারে অস্বীকার করতে চাইলেও, পরে পরিস্থিতির চাপে তারাই আবার শুরু করেন জঙ্গিবিরোধী অভিযান। পরবর্তী শাসনামলে সেটি আরও জোরালো রূপ নেয় এবং জঙ্গি-পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। বর্তমান শাসনামলে এটি কিন্তু নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।

তবে নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় গুম-খুন নিয়ে মানুষের উদ্বেগ যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, এতে যে কোনো সরকারেরই উচিত নড়েচড়ে বসা। শুধু মুখের কথায় জনগণকে আশ্বস্ত করা যাবে না, অন্তত এ প্রশ্নে। কারণ গুম-খুনের সুনির্দিষ্ট কোনো প্যাটার্ন দেখা যাচ্ছে না। বিএনপি নেতারা মেঠো বক্তৃতায় যা-ই বলুন, কেবল তাদের নেতা-কর্মীরা এর শিকার হচ্ছেন না– ক্ষমতাসীন দলের লোকসহ সাধারণ মানুষও এর আওতায় এসে গেছে। 'নারায়ণগঞ্জের গডফাদার' বলে পরিচিত ব্যক্তি কিন্তু দাবি করেছেন, অপহরণপূর্বক খুনের শিকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র তার লোক ছিলেন।

কে কার লোক বা কে কী কারণে, কার পরিকল্পনায় ও কাদের দ্বারা অপহৃত হচ্ছেন, তা বোঝা যাচ্ছে না আলোচিত অধিকাংশ ঘটনারই সুষ্ঠু তদন্ত হচ্ছে না বলে। নাম গোপন রাখার শর্তে পুলিশের পক্ষ থেকে মিডিয়াকে বলা হচ্ছে, একটি বিশেষ বাহিনীর দুর্নীতিগ্রস্ত লোকজন ঘটনায় জড়িত হয়ে পড়লে তদন্তে আর এগোনো যাচ্ছে না। পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধেও কিন্তু রয়েছে গুম-খুনে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ। সেগুলোর তদন্ত কি সঠিক ধারায় এগোচ্ছে?

গুম-খুন এত বেড়েছে যে, এমনকি প্রতিটি আলোচিত ঘটনার পেছনে মিডিয়ার পক্ষে লেগে থাকা অসম্ভব। আর মিডিয়া একা কেন সত্য উদ্ঘাটনে নিয়োজিত থাকবে? অনেকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কী করছে, সে প্রশ্ন তোলেন। এর চেয়ারম্যান সম্প্রতি স্পষ্টতই বলেছেন, বক্তব্য দেওয়া ও সুপারিশ করা ছাড়া তাদের কোনো নির্বাহী ক্ষমতা নেই।

নিজের মতো করে বক্তব্য দিতে গিয়েও কমিশন চেয়ারম্যান সম্প্রতি এক সমাবেশে সিনিয়র মন্ত্রীদের তীব্র সমালোচনার শিকার হন। এদিকে ব্যানার নিয়ে মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। এটা কোনো স্বাভাবিক পরিস্থিতি নয়। মানবাধিকারসম্মত পরিবেশ তো নয়ই।

সেটি ফিরে আসবে বা আসার প্রত্যাশা অন্তত জন্মাবে খোদ সরকার পরিস্থিতির অবনতি স্বীকার করে এবং এর দায় নিজের কাঁধে নিয়ে তা মোকাবেলায় এগিয়ে এলে। নারায়ণগঞ্জের ওই রকম ঘটনার পরও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা যা বলছেন, তাতে সে আলামত দেখতে পাচ্ছি না।

বিএনপি নেত্রী বা বিরোধী দল কিছু দায়িত্বহীন বক্তব্য দিলেও ক্ষতি নেই। তাদের কথায় তো পুলিশ বা র‌্যাব প্রভাবিত হচ্ছে না। হালকা অভিযোগেও এদের বিরুদ্ধে বরং কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে পুলিশ। বিএনপির প্রথম সারির এক নেতা ও এমপিকে মারতে খোদ সংসদ ভবন এলাকায় কীভাবে দৌঁড়ে এসেছিলেন পুলিশের এক মধ্যস্তরের কর্মকর্তা, আমরা তা ভুলে যাইনি। শাস্তির বদলে তিনি পুরস্কৃতই হয়েছেন বোধহয়। এই যখন পরিস্থিতি, তখন গুম-খুনের সুষ্ঠু তদন্তে আমরা চাইব– সরকার তাদের সঠিক নির্দেশনা দেবে।

ক্ষমতাসীন দলের মাঠ পর্যায়ে নানা 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব' নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে, হোক। সরকারের উচ্চ পর্যায় যেন নারায়ণগঞ্জের ঘটনাটি যথোচিত গুরুত্বের সঙ্গে নেয় এবং তার গ্রহণযোগ্য নিষ্পত্তি করে। ওখানকার বেসামরিক প্রশাসন ও পুলিশ-র‌্যাবের কর্তাব্যক্তিদের ঘটনার পরপরই সরিয়ে দেওয়া হয়। এদের সঙ্গে স্থানীয় যেসব প্রভাবশালীর আঁতাত গড়ে উঠেছিল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন কি নেই? শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে অবশ্য ব্যবস্থা নেওয়া যায় না এ ক্ষেত্রে। তবে দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর অভিযোগ উঠতে থাকলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন, তারও সদুত্তর নেই।

ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে হত্যার পরিকল্পনাকারী হিসেবে যাকে দায়ী করা হচ্ছে, তার উত্থানের কাহিনি জেনেও অবাক হওয়া যাচ্ছে না। এমন অনেক কাহিনি রয়েছে দেশের আনাচে-কানাচে। দেশটি গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসার পর এ ধরনের উত্থানের ঘটনা বেড়েছে বলেই মনে হয়।

দুর্ভাগ্যজনক যে, নানা স্তরে এরা জনপ্রতিনিধিও হয়ে বসেছেন। এমনই এক জনপ্রতিনিধি কাউন্সিলর নূর হোসেন অবৈধ বালু ও পাথর ব্যবসায় জড়িত ছিলেন শীতলক্ষ্যার তীর দখল করে। তা উচ্ছেদ করা হল এতদিন পর! প্রশাসন বারবার চেষ্টা করেও নাকি তাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।

পারেনি বলেই হয়তো তার দুঃসাহস জন্মেছিল নিজ দলভুক্ত অন্য এক কাউন্সিলরকে দলেবলে মেরে ফেলার ব্যবস্থা করতে। নজরুলকে হত্যার হুমকি নাকি দিয়েই রাখা হয়েছিল। অথচ তিনি অপহৃত হওয়ার পর মামলাটুকুও নিতে চায়নি পুলিশ। র‌্যাব তৎপর না হয়ে করেছে গড়িমসি।

আইনের শাসনের বড় বরখেলাপ হয়েছে এ ক্ষেত্রে। তা না হলে অপহৃতদের হয়তো উদ্ধারও করা যেত আবু বকর সিদ্দিকের মতো। পরিবেশকর্মী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামীকে উদ্ধারে পুলিশ-র‌্যাব যে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছিল, তা সবার জানা। তাহলে কি পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার সঙ্গে যোগসূত্র ছিল সাতজনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার? আর মূল আসামি পালিয়ে যাওয়ার? এমন সব ভয়ঙ্কর প্রশ্নও কিন্তু উত্থাপিত হয়েছে এর মধ্যে।

সাতজনের মধ্যে আইনজীবী চন্দন সরকারসহ অপর কয়েকজন নাকি মারা পড়েছেন অপরাধীদের তারা চিনে ফেলেছিলেন বলে। ওই ঘটনায় রাষ্ট্রীয় একটি বিশেষ বাহিনীর লোকজন জড়িত বলে খোলামেলা অভিযোগ করেছেন নিহত কাউন্সিলরের শ্বশুর। এমন অভিযোগ আরও গুম-খুনের ক্ষেত্রেই রয়েছে। ঢালাওভাবে বলার দেশে এমনটিও শোনা যায়, র‌্যাবই এ ধরনের 'সব' ঘটনায় জড়িত। ক্রসফায়ারেও র‌্যাবকে ঢালাওভাবে দায়ী করা হয়।

অথচ পুলিশ অনেক সময় তাদের ছাড়িয়ে যায় এ ক্ষেত্রে। পুলিশের মধ্যেও এমন গ্রুপ তৈরি হয়ে গিয়ে থাকতে পারে, যারা ব্যক্তি বা মহলবিশেষের বিরোধে গুম-খুনে নির্বিকারভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

একসময় খুব শোনা যেত টোকাই সন্ত্রাসীদের কথা। এরা অল্প পয়সায় খুন পর্যন্ত করে আসে। ধরা পড়া বা শাস্তির ঝুঁকি নাকি কাবু করে না এদের। এখন এমন তো হতেই পারে, পুলিশ ও র‌্যাবের কিছু সদস্য রাতারাতি ধনী হওয়ার চেষ্টায় নিজেদের ক্রিমিনালে রূপান্তরিত করেছে এবং ইতোমধ্যে ক্ষমতাবান হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের হয়ে ভাড়া খাটছে। জনগণের অর্থে কেনা গাড়ি, পোশাক ও অস্ত্র তারা ব্যবহার করছে এসব কাজে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, পুলিশ বা র‌্যাবের মতো সেজে সংঘবদ্ধ অপরাধীরা লিপ্ত হচ্ছে গুম-খুনে। এ নিবন্ধ লেখার সময় রাজধানীতে তেমন একটি দল ধরাও পড়েছে নবগঠিত অ্যান্টি-কিডন্যাপিং স্কোয়াডের হাতে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এ উদ্যোগটি ভালো।

কিন্তু গুম-খুন তো হচ্ছে সারা দেশে। সন্দেহ নেই, আইনশৃঙ্খলার দিক বিচারে এখনও অনেক এলাকাকে বলতে হয় শান্তিপূর্ণ। কিন্তু গুম-খুন যেভাবে বেড়েছে আর যে রূপ নিয়েছে, তাতে শান্তিপূর্ণ এলাকার নিরীহ মানুষও চিন্তিত হয়ে পড়েছে নিজেকে নিয়ে। কোনো রকম ব্যক্তিগত শত্রুতায় না থাকা ভালো উপার্জনকারী ব্যক্তিটিও উদ্বিগ্ন; কেননা তার কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করা যাবে।

মুক্তিপণের বিনিময়েও অনেকে ছাড়া পাচ্ছেন অপহরণকারীদের কবল থেকে। তবে উধাও হয়ে যাওয়া ব্যক্তির সংখ্যাই দেখা যাচ্ছে বেশি। এর এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রেও যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো অংশ কোনোভাবে জড়িত হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে বলব– পরিস্থিতি যথেষ্ট খারাপ।

এ অবস্থায় বিশেষ একটি বাহিনী গুটিয়ে ফেলার কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের দাবি তুলেছে একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। জঙ্গিসহ বড় রকম অপরাধ দমন করে জনমনে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরিয়ে আনায় ওই বাহিনীর ভূমিকা কিন্তু অস্বীকার করা যাবে না। এ অবস্থায় শুদ্ধিকরণ বা সংস্কারের দাবি তোলাটাই সঙ্গত হবে।

সেটা পুলিশেও প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব যে বিপুলভাবে দায়ী, সেটিও স্বীকার করে নিতে হবে। অর্থনীতির দুর্বৃত্তায়নও পেছন থেকে রেখেছে ভূমিকা, যা কিনা নারায়ণগঞ্জের লোমহর্ষক ঘটনায়ও স্পষ্ট।

কথা চালাচালি ও তদন্তের নামে ধোঁয়াশা সৃষ্টির বদলে সরকারকে এ ক্ষেত্রে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। গুম-খুন হয়তো বিরোধী দল বা প্রতিপক্ষ দিয়েই শুরু হয়েছিল। সাধারণ মানুষ ছাপিয়ে এখন সেটি শুরু হয়ে গেছে নিজেদের মধ্যে। ছাত্ররাজনীতির বদলে অপরাজনীতি শাসিত ক্যাম্পাসে যেমন ক্ষমতাসীন দলের নানা গ্রুপ সক্রিয় হয়ে উঠেছে পরস্পরের বিরুদ্ধে। কোনো কোনো ঘটনায় তারা নাকি ছাত্রশিবির 'ক্যাডার'দেরও ব্যবহার করছে। নানা স্থানে জামায়াত নেতা-কর্মীদের বরণ করে নেওয়া হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলে। মামলার ভয় নাকি রয়েছে তাদের। গুম-খুনের ভয়ও কি দেখানো হচ্ছে? এগুলো স্পেকুলেশনস বা জল্পনা; কিন্তু লোকে বিশ্বাস করছে।

অপহরণ ও গুম-খুনের ঘটনায় রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে মানুষ নিজেদের মধ্যে কী বলাবলি করছে, সরকারের উচিত তা কান খুলে শোনা। তাহলে অন্তত সব আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনায় বিরোধী দলকে দায়ী করার প্রবণতাটা কমবে। মনে উদয় হলেও হতে পারে আপন দায়িত্ববোধ।

হাসান মামুন: সাংবাদিক, কলামিস্ট।