চ্যালেঞ্জের মুখে গণতন্ত্র

আমানুল্লাহ কবীর
Published : 4 April 2014, 09:33 AM
Updated : 4 April 2014, 09:33 AM

সম্প্রতি The Economist-এ (মার্চ ১-৭, ২০১৪) বিশ্বে গণতন্ত্রের হাল-হকিকত সম্পর্কে একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সারাবিশ্বে সামগ্রিকভাবে গণতন্ত্রের অবস্থা কী, প্রতিবেদনের এটাই মূল প্রতিপাদ্য। এতে অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের নামও উল্লেখ করা হয়েছে।

কম্যুনিস্ট-শাসিত চীনের জাদুকরি অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় গণতান্ত্রিক দেশগুলো কীভাবে ব্যর্থ হচ্ছে, তার একটা চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এই তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে বলা হয়েছে, গণতন্ত্রের গতানুগতিক চর্চা ধাবমান সময়ের চাহিদা মেটাতে পারছে না। তবে কোনো কোনো পাশ্চাত্য দেশে গণতন্ত্রচর্চায় সময়োপযোগী পরিবর্তন করার ফলে তারা সাফল্যের উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। পত্রিকাটির বক্তব্য, গণতন্ত্রের চর্চায় নতুন নতুন উদ্ভাবন না হলে রাজনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে তা ম্রিয়মান হয়ে যাবে। অর্থাৎ ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে হলে পুরনো ধাঁচে গণতন্ত্রচর্চা আর চলবে না।

মোট কথা, গণতন্ত্রচর্চায় গোঁড়ামি বা রক্ষণশীলতার দিন শেষ হয়ে গেছে, প্রগতিশীল সময়ের চাহিদা পুরণের জন্য সময়োপযোগী পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে চীনের আর্থ-রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিশ্বে অনন্য– কারও সঙ্গে মিল বা সামঞ্জস্য নেই। চীন একদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেই মুক্তবাজার অর্থনীতির সঙ্গে সতর্কতামূলক আপস করে অর্থনীতিতে যে চমক সৃষ্টি করেছে, তা গণতন্ত্রের প্রাণকেন্দ্র পাশ্চাত্য দেশগুলোর প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য এটাই উদ্বেগের কারণ।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পাশাপাশি থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়ার নামও উল্লেখ করা হয়েছে। থাইল্যান্ডে ইংলাক সানিয়াত্রার নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন চলছে। বিরোধী দলের দাবি, বর্তমান সরকারকে বাতিল করে সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য তার পরিবর্তে অনির্বাচিত অর্থাৎ নির্বাচন ছাড়াই গণপরিষদ গঠন করতে হবে। এই বিক্ষুদ্ধ পরিস্থিতিতেই সেখানে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করে তা প্রতিহত করার চেষ্টা করে। ইংলাকের দলই আবার বিজয় লাভ করে।

তবে বিরোধী দলের প্রতিরোধের কারণে ২৮টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। সুতরাং নির্বাচন কমিশন ওই আসনগুলোর কোনো ফলাফলই ঘোষণা করেনি। বিষয়টি দেশের সাংবিধানিক আদালতে উত্থাপিত হলে আদালত নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করে। কারণ, থাইল্যান্ডের সংবিধানে একই দিনে সকল আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে। ফলে সেখানে রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে।

প্রতিবেশি নেপালেও দীর্ঘদিন রাজনৈতিক সংকট চলছে। রাজতন্ত্রের অবসানের পর এখন পর্যন্ত সে দেশের নতুন সংবিধান প্রবর্তন সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাতে কোনো দল প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন না পাওয়ায় দীর্ঘসময় সরকার গঠন হতে পারেনি। অবশেষে রাষ্ট্রক্ষমতা ভাগাভাগি করে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলো সরকার গঠনে একমত হয়। এটা নিঃসন্দেহে নেপালের রাজনৈতিক নেতাদের গণতান্ত্রিক প্রজ্ঞা ও নিষ্ঠার পরিচয়। দীর্ঘ দরকষাকষির পর যাকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করা হয়েছে তিনি একজন কপর্দকহীন চিরকুমার প্রবীণ রাজনীতিবিদ। এই নেপালি কংগ্রেস নেতা সুশীল কৈরালার সম্পদের হলফনামা পুরণ করতে গিয়ে বেয়াকুব বনে গেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা– দুটি মোবাইল ফোন ছাড়া তাঁর আর কিছুই নেই।

গত বছর নির্বাচনের আগে অস্থিতিশীল পাকিস্তানেও সৃষ্টি হয়েছিল জটিল রাজনৈতিক সমস্যা। ক্ষমতাসীন পিপলস পার্টির সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে রাজি নয় নওয়াজ শরিফের ক্ষমতাধর মুসলিম লীগ। অবশেষে ঝুঁকির মুখ থেকে বিপন্ন গণতন্ত্র বেঁচে যায় অনির্বাচিত অন্তবর্তী সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে।

বর্তমান শতাব্দীতে গণতন্ত্রের চরম বিপর্যয় ঘটে ইউক্রেনে। এককালে সোভিয়েট ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশটি যারা শাসন করে আসছিল, তাদের পেছনে ছিল মস্কোর সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতা। কিন্তু প্রচণ্ড বিদ্রোহের মুখে মস্কোর সমর্থিত প্রেসিডেন্ট ইয়াকুনভিচ রাজধানী ছেড়ে পালিয়ে গেলে রাশিয়া-বিরোধীরা সরকার গঠন করে। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে রাশিয়া ইউক্রেনের অংশ রুশপ্রধান ক্রিমিয়া দখল করে নেয়। ইউক্রেনের অধিবাসীদের হাতে নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণের ক্ষমতা ছিল না বলেই রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের টানাপড়েনের মধ্যে দেশটির এই বিপর্যয় ঘটে।

গণতন্ত্রের বিপর্যয় ঘটেছে মিশরেও। মিশরের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুর্সিকে এক বৎসরের মধ্যেই ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেছে সামরিক বাহিনী। মুর্সিকে গ্রেফতার করে আদালতে দাঁড় করানো হয়েছে, তার দল মুসলিম ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং সর্বশেষ আদালত তার দলের ৫২৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।

আমাদের প্রতিবেশি ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র। ইতিহাস বিবেচনায় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নৃতাত্ত্বিক, প্রাকৃতিক ও ধর্মবর্ণগত দিক থেকে এমন বিচিত্র ও অসমজাতিক দেশ বিশ্বে দ্বিতীয়টি নেই। ব্রিটিশ রাজের কাছ থেকে ভারত ও পাকিস্তান একই সময় স্বাধীন হয়েছিল। যে ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল, তা পাকিস্তানকে ধরে রাখতে পারেনি। দুই যুগ যেতেই পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ হয়েছে। ধর্ম পাকিস্তানকে ধরে রাখতে পারেনি, কিন্তু গণতন্ত্র ভারতকে ধরে রেখেছে। অর্থাৎ ধর্মের বন্ধনের চেয়ে গণতন্ত্রের বন্ধন আরও শক্তিশালী, এটাই প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু এই দুটি দেশের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কোনো শিক্ষা গ্রহণ করতে পারিনি।

ভারতের গণতন্ত্রচর্চা থেকে শিক্ষা নেওয়ার পরিবর্তে আমরা তার আশীর্বাদ লাভেই বেশি আগ্রহী, আর মুখে পাকিস্তানকে ঘৃণা করলেও অন্তরে তার অগণতান্ত্রিক ঔদ্ধত্যই লালন করি। এই দ্বিচারিতা থেকে আমাদের রাজনীতিবিদরা বের হতে পারছে না বলেই বাংলাদেশে গণতন্ত্রের এই সংকট। গণতন্ত্রচর্চার পরিবর্তে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করাই আমাদের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়েছে। গত ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে আমরা তা আবারও দেখেছি। কিন্তু সে দেখাই শেষ দেখা নয়।

৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন ছিল বিরোধী দলবিহীন একতরফা নির্বাচন, তবে সকল দলের অংশগ্রহণের ফলে যে স্থানীয় বা উপজেলা নির্বাচন চলছে, তা একতরফা নয়। পক্ষ-বিপক্ষ আছে, তবে এই নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হবে না। সরকারের দায় ছিল, ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর সকল দলের অংশগ্রহণে সারা দেশে আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। উদ্দেশ্য, বিতর্কিত লেবাস থেকে বের হয়ে গণতন্ত্রের লেবাস পরিধান করা, যাতে দেশে-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। প্রশ্নবিদ্ধ জাতীয় নির্বাচনের পর দ্রুত স্থানীয় নির্বাচন দেওয়ার এটাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। হয়তো ধারণা ছিল, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর জনগণের মনমানসিকতার পরিবর্তন ঘটেছে।

কিন্তু উপজেলা নির্বাচনের প্রথম দুই পর্বের ফলাফলের পর আঁতকে ওঠে সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা। সময় পরিবর্তন হলেও ভোটারদের মন পরিবর্তন হয়নি। প্রথম দুই পর্বে মোটামুটি উৎসবমুখর পরিবেশেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তারা বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলোর জয়ের পাল্লাই ভারি করতে থাকে। সংঘর্ষ থাকলেও খুনখারাবি ছিল না। অনেকেরই প্রত্যাশা ছিল, ৫ জানুয়ারি পূর্ব ও পরবর্তী সহিংসতার পুনরাবৃত্তি হয়তো ঘটবে না। কিন্তু তৃতীয় পর্বের ভোটাভুটির সময় দৃশ্যপট পাল্টে যায়। সংঘর্ষ, কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই, জাল ভোট– সবই ঘটে। সহিংসতায় নিহত হয় দুজন। ওই সঙ্গে ভোটের ফলাফলও পাল্টাতে থাকে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পাল্লা ভারি হতে থাকে, বিএনপির পাল্লা হালকা হতে থাকে।

তৃতীয় পর্বের ফলাফলে উৎফুল্ল হয়ে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মন্তব্য করলেন, আওয়ামী লীগ জানে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়। অবশ্য আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, ঘুরে দাঁড়ানোর সঙ্গে সহিংসতা বেড়েছে, আর সহিংসতার সঙ্গে বেড়েছে আওয়ামী লীগের বিজয়। সহজেই অনুমান করা যায়, নির্বাচনের বাকি দুই পর্বেও এই ধারাই বজায় থাকবে– আওয়ামী লীগের পাল্লা আরও ভারি হবে, বিএনপির পাল্লা আরও হালকা হবে। বিএনপি বলেছে, নির্বাচনে দিনে-দুপুরে ভোট ডাকাতি হয়েছে। আওয়ামী লীগ বলেছে, নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে, যে কারণে ফাঁসির আসামি যুদ্ধাপরাধী মাওলানা সাঈদীর ছেলেও বিজয়ী হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বলেছে, 'আলহামদুলিল্লাহ' (অর্থাৎ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য)।

প্রশংসা অবশ্য নির্বাচন কমিশনেরও করতে হয়। জাতীয় দায়িত্ব পালনে ক্লান্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন সাত সাগরের ওপারে আমেরিকায় নিরিবিলি ছুটি কাটাতে গিয়েছেন সস্ত্রীক। স্থানীয় দায়িত্ব পালনের দায়িত্ব দিয়ে গেছেন তার ডেপুটিদের উপর। ৫ জানুয়ারির প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ১৫৩ আসনের নির্ভেজাল ফল ঘোষণা, ১৪৭ আসনে একতরফা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতিতে শুভংকরের ফাঁকি এবং সহিংসতায় শতাধিক ব্যক্তির প্রাণহানি– এসবই তার কায়ক্লেশের কারণ। তাই উপজেলা নির্বাচনের আগে ছুটিতে গেলেন ফ্রেশ হওয়ার জন্য। দায়িত্বহীনতার এমন পরাকাষ্ঠা নজির হয়ে থাকবে ইতিহাসে। মানুষ মরছে, ভোট কেন্দ্র দখল হচ্ছে, ব্যালট পেপার ছিনতাই করে জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে– তার ডেপুটিরা বলছেন 'আলহামদুলিল্লাহ'।

প্রথম দুই পর্বের নির্বাচনের পরই হঠাৎ প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছুটিতে গেলেন। কেন তিনি এমন স্পর্শকাতর সময়ে ছুটিতে গেলেন? প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বললেন, তিনি (কাজী রকিবউদ্দিন) ক্লান্ত। যে জবাব নির্বাচন কমিশনের দেওয়ার কথা, তার দেওয়ার কথা নয়, সে জবাব তিনি দিলেন। শোনা যায়, প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টার উৎপাতেই কাজী রকিবউদ্দিন 'অসুস্থ' হয়ে পড়েছিলেন। ওই উপদেষ্টা একজন সাবেক জাঁদরেল আমলা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন (সাবেক সচিব) ছাড়া অন্য নির্বাচন কমিশনারদের সবাই যুগ্মসচিব পদমর্যাদায় অবসরপ্রাপ্ত। এই নির্বাচন কমিশনারদের কাছে ওই আমলা-উপদেষ্টার কোনো বার্তা আসমানি বাণীর মতোই পালনীয়। তারা তা পালনে তটস্থ থাকবেন, আমলাতন্ত্র তাই বলে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কারণে কি উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়াতে পারছিল না?

তৃতীয় পর্বে আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়ানোর কারণ, প্রথম দুই পর্বের ফলাফলের পর তারা বুঝতে পারে উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা যাচাই হচ্ছে, যা তাদের মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতাকে নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। পক্ষান্তরে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর জন্য তা হবে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নতুন প্রেরণা। জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তারা যে ভুল করেছিল, উপজেলা নির্বাচনে সাফল্য দিয়ে তারা দেশে-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ও গ্রহণযোগ্যতা হেয় প্রতিপন্ন করার নতুন প্রয়াস নেবে।

একতরফা নির্বাচনের ঝুঁকি সামাল দিতে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ যে আস্থার উপর দাঁড়িয়েছে, তা দিয়েই তারা আগামী পাঁচ বৎসরের ভাগ্য নিশ্চিত করতে চায়। জাতীয় নির্বাচনে তাদের কৌশলগত বিজয় স্থানীয় নির্বাচনের বিজয়কে তাদের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। কেন্দ্র (ঢাকা) যার দখলে, দেশ তার দখলে– আওয়ামী লীগ তা-ই প্রমাণ করছে। অপরদিকে, কেন্দ্রে ক্ষমতাহীন বলে বিএনপি বাকি দেশেও ক্ষমতাহীন, জনসমর্থন যা-ই থাকুক না কেন।

উপজেলা নির্বাচনের আরেকটি পর্যবেক্ষণ এই যে, সামগ্রিকভাবে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেলেও তৃণমূলে তারা জনসমর্থনহীন নয়। আওয়ামীবিরোধী জনগোষ্ঠীই তৃণমূলে বিএনপির সমর্থক। কিন্তু তারা বিএনপির সঙ্গে সাংগঠনিকভাবে সম্পৃক্ত নয়। তাদের সাংগঠনিকভাবে সম্পৃক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে বলেই বিএনপি বারংবার ধাক্কা খায়। বিএনপির এই সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে সমর্থন করে না, তাদের একটা অংশ জামায়াতের সক্রিয় ভূমিকায় ধীরে ধীরে আকৃষ্ট হচ্ছে।

বিশেষত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলায় বিএনপির ব্যর্থতার জন্য মারমুখো জামায়াত-শিবিরের প্রতি তৃণমূল জনগোষ্ঠীর একটি অংশ সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠে। ওই সঙ্গে জামায়াতকে অনেকেই নির্যাতিত-নিপীড়িত রাজনৈতিক সংগঠন বলেও মনে করে। অবশ্য বিএনপির ছত্রছায়ায় জামায়াত শক্তির মহড়া দিয়ে তার এই স্থানটি করে নিয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের যে অপ্রত্যাশিত বিজয়, তার প্রধান কারণ এটাই। বলা যায়, কৌশলগতভাবে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে ঠেকাতে পারলেও জামায়াতকে ঠেকাতে পারেনি। এটাই জামায়াতের জন্য বড় বিজয়। পরিস্থিতি বুঝেই জামায়াত অনেক উপজেলায় বিএনপির সহযোগী শক্তি না হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি হয়েছে।

এটা আর এখন অনুমানের বিষয় নয় যে, যদি উপজেলা নির্বাচন জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের মাপমাঠি হয় তাহলে আওয়ামী লীগই চ্যাম্পিয়ন হবে। কেননা, বাকি নির্বাচনগুলোর ফলাফল তৃতীয় পর্বের ফলাফলের চেয়ে ভিন্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। এ জন্য হয়তো আমাদের আরও চড়া মূল্য দিতে হবে। হয়তো আরও সহিংসতা ও প্রাণহানি হবে। জনপ্রিয়তায় এক নম্বর– এ সার্টিফিকেট নিয়েই আওয়ামী লীগকে আগামী পাঁচ বৎসর ক্ষমতা ধরে রাখতে হবে।

অপরদিকে, জনপ্রিয়তায় দুই নম্বর বিএনপিকে পাঁচ বৎসর অপেক্ষা করতে হবে। উপজেলা নির্বাচনের পর বিএনপি নেতারা যে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে, তা আপাতত মুখের বুলি হয়েই থেকে যাবে। ঘর গোছাতে গিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব দেখছে, কেবল দেয়ালের আস্তর খসে পড়েনি, কোথাও কোথাও দেয়ালই ধসে পড়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার পরে দ্বিতীয় কোনো নেতানেত্রী নেই। সাংগঠনিকভাবে দলের গুরুত্বপূর্ণ সেক্রেটারি জেনারেল পদে কয়েক বৎসর যাবত দায়িত্ব দিয়ে রাখা হয়েছে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে, কিন্তু তাকে স্থায়ী করা হচ্ছে না। নিজের অবস্থান অ্যাসার্ট করে তার কোনো কাজ করার ক্ষমতা নেই।

যে ছাত্রদল একসময় ক্যাম্পাসে খুব সক্রিয় ছিল, এখন তার অস্তিত্ব নিভু-নিভু করছে। যুুবদলও বস্তুত নিস্ক্রিয়। ঢাকা মহানগর কমিটি নিষ্প্রাণ। সাদেক হোসেন খোকা এই গুরুত্বপূর্ণ কমিটির কর্ণধার হিসেবে দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানানোর ফলে মহানগরে দলের অবস্থা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। চেয়ারপারসনের গুলশান অফিস নিয়ন্ত্রণ করে বস্তুত কয়েক সাবেক আমলা ও অরাজনৈতিক ব্যক্তি।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিএনপির নেতৃত্বের এই কোন্দল ও দুর্দশার কথা ভালোভাবেই অবগত। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের বক্তব্য, বিএনপি তার সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত করতে পারেনি। সুতরাং এই সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়ে অদূর ভবিষ্যতেও সরকারবিরোধী বড় ধরনের কোনো আন্দোলন সংগঠন করতে পারবে না। আগামী ৫ বৎসর দেশ শাসন করার জন্য আওয়ামী লীগের কৌশল হবে নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র চালু রাখা এবং ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা মহানগরীকে আন্দোলনমুক্ত করা। এ জন্য সরকার কৌশল ও প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ দুই-ই করবে।

গত মেয়াদে না করলেও বর্তমান মেয়াদে সরকার এই কৌশলের অংশ হিসেবেই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুটি দুর্নীতি মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করেছে এবং বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে জেলজুলুমের আশ্রয় নিয়েছে। পাশাপাশি সরকার বিদেশি পুঁজি-বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির জন্য পদ্মা সেতু ও গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, ভারত-বাংলাদেশ-মিয়ানমার-চীন সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের প্রকল্পের মতো আকর্ষণীয় কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এসব প্রকল্পে বিশেষত চীন ও ভারতের অংশগ্রহণ হবে বাংলাদেশের ও আঞ্চলিক রাজনীতির জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং শেখ হাসিনা সরকারের জন্য সমর্থন ও সহযোগিতার উৎস।

এর অর্থ, হাসিনা সরকার গত মেয়াদের কৌশলে পরিবর্তন এনে এবার তার অবস্থান অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক– বিশেষত আঞ্চলিকভাবে দৃঢ় করার জন্য নতুন নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করে অগ্রসর হওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। সহজ কথায়, সরকার এক হাতে দৃশ্যমান উন্নয়নমূলক কাজ করবে, আরেক হাতে কঠোরভাবে সরকারবিরোধী শক্তিকে দমন করবে। রাষ্ট্রক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই বিএনপিই হবে এই দমননীতির প্রধান শিকার।

আমাদের অনেক রাজনীতিবিদ ও পর্যবেক্ষক আগ্রহের সঙ্গে ভারতের আসন্ন নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছেন। ভারতের রাজনীতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করে এটা বলা যায় যে, দিল্লিতে এবার কংগ্রেস সরকার গঠন করতে পারবে না। সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদির নামই ভারতের মিডিয়া ও জরিপে উল্লেখ করা হচ্ছে। ভারতের বোদ্ধা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন সেটা না-ও হতে পারে। কেননা, আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে শক্তিশালী ও উচ্চাভিলাষী হয়ে উঠেছে, তাতে নির্বাচনপর দৃশ্যপট কী হবে, তা এখনই সাফ বলে দেওয়া যাবে না। তারা মনে করেন, এসব আঞ্চলিক দল জোট করে কেন্দ্রে সরকার গঠন করতে উদ্যোগী হলে, বিজেপি ঠেকানোর জন্য কংগ্রেস তাদের সমর্থন দেবে।

ইতোমধ্যে মোদির পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, তার সরকার প্রতিবেশি দেশগুলো বিশেষত পাকিস্তান ও চীনের ব্যাপারে হার্ডলাইন অনুসরণ করবে। মোদি নিজে হিন্দু মৌলবাদী নেতা হলেও মুসলিম মৌলবাদী বা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর হবেন। বাংলাদেশ সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি কী, এখনও তা পরিষ্কার নয়। তবে এটা ধারণা করা অমূলক হবে না যে, শেখ হাসিনা সরকারের 'ভারতবান্ধব নীতি'র কারণে বাংলাদেশের ব্যাপারে তার দৃষ্টিভঙ্গির তেমন হেরফের হবে না– মনমোহন সরকারের নীতিই মোটামুটি অব্যাহত থাকবে। ফলে দিল্লিতে সরকার পরিবর্তন হলেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার তেমন কোনোর প্রভাব পড়বে না, যা আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।

দ্য ইকোনমিস্ট-এর যে প্রতিবেদন দিয়ে শুরু করেছিলাম, সেখানে ফিরে আসা যাক। পত্রিকাটি যে অপ্রিয় সত্য কথাটির উল্লেখ করেনি, তা হল বিশেষত যেমন উন্নয়নশীল দরিদ্র ও ক্ষুদ্র দেশে গণতন্ত্র বিপন্ন বা অস্থিতিশীল, তার প্রধান কারণ ওসব দেশে সরকার গঠন বা পরিবর্তন সবসময় জনগণের ইচ্ছায় হয় না, হয় বহির্শক্তির ইশারায়। যে ইউক্রেনের বিপর্যয়ের কথা হয়েছে, তার প্রধার কারণ হচ্ছে সেখানে সরকার গঠন বা পরিবর্তন হত মস্কোর ইচ্ছায়। পরিণতিতে ওই এলাকায় মানচিত্রের পরিবর্তন ঘটেছে। ইউক্রেনের ঘটনা থেকে আবার প্রমাণিত হল যে, বৃহৎ প্রতিবেশি সবসময় ক্ষুদ্র প্রতিবেশির নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

মিশরের ইতিহাসে প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুর্সিকে উৎখাত করা হয়েছে আমেরিকা ও তার আরব মিত্র তেলসমৃদ্ধ সৌদি আরবের ইঙ্গিতে। সিরিয়াতে যে গৃহযুদ্ধ চলছে, তার জন্যও দায়ী আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পাশ্চাত্য শক্তি ও তাদের মিত্র সৌদি আরব। ভারতে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত হলেও প্রতিবেশী পাকিস্তানে গণতন্ত্রের শেকড় বারংবার উপড়ে গেছে আমেরিকার হস্তক্ষেপে। বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন সম্ভব হয়েছে ভারতের আশীর্বাদের কারণে।

বর্তমান সময়ে বিশ্বের আরও অনেক দেশের এমন উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। বৃহৎ ও শক্তিধর দেশগুলো তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে এসব দরিদ্র ও ক্ষুদ্র দেশগুলোর ভাগ্য নির্ধারণের জন্য গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি সমর্থন না দিয়ে সে ক্ষমতা পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে নিজেদের হাতে তুলে নেয় এবং অগণতান্ত্রিক শক্তিকে মদদ দেয়। ইউরোপীয় দেশগুলোতে গণতন্ত্রের দুর্দশার কারণ ভিন্ন হলেও এশিয়া ও আফ্রিকায় এর প্রধান কারণ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্য।

গত সোমবার লন্ডনে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক সর্বদলীয় কমিটির এক সেমিনারে সে দেশের এমপিরা বাংলাদেশে মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য একটি নতুন নির্বাচন প্রয়োজন বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ, মানবাধিকার ও আইনের শাসনবিষয়ে এই সেমিনারে তারা বলেন, সেই নির্বাচন কোন ব্যবস্থায় হবে, এ ব্যাপারে দেশটির প্রধান দুটি দলের মধ্যে সমঝোতা আবশ্যক। সেমিনারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতিনিধি দল যোগদান করে। তারা যথারীতি পরস্পরবিরোধী অবস্থানে অনড় থেকে একে অপরকে দোষারোপ করে বক্তব্য রাখেন। ব্রিটিশ এমপিরা সমঝোতার কথা বলে দুই প্রধান দলের মধ্যে সংলাপ অনুষ্ঠানের উপরই গুরুত্ব দিয়েছেন। তাদের এই বক্তব্যের জবাব তারা সেমিনারেই পেয়ে গেছেন।

যে যা-ই বলুন, আমরা এমন এক সময় অতিক্রম করছি, যখন 'সংলাপ' ও 'সমঝোতা' শব্দ দুটি কেবল অভিধানেই থেকে যাবে। বাস্তবে তাদের স্থান দখল করে নিয়েছে 'সংঘাত' ও 'অর্থবল'। ফলে জাতির মধ্যে যে বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে, তা কেবল গণতন্ত্রের জন্যই হুমকি হয়ে দাঁড়ায়নি, দেশের ভবিষ্যতকেও ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণের আস্থায় যে চিড় ধরেছিল, উপজেলা নির্বাচনে তা আরও প্রসারিত হল। রাষ্ট্র, সরকার, দল– সব যেন একাকার হয়ে গেছে। ফলে সরকার তার কোনো প্রতিপক্ষ দেখছে না।

দৃশ্যমান প্রতিপক্ষের চেয়ে অদৃশ্যমান প্রতিপক্ষ আরও ভয়ংকর। সৈয়দ আশরাফের মতো আওয়ামী লীগের অনেক নেতানেত্রী ও তাদের ঘরানার অনেক বুদ্ধিজীবী ভাবতে ভালোবাসেন যে, নেতৃত্বের কোন্দল ও সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে বিএনপি আগামী ৫ বৎসর সরকারকে মোকাবিলা করতে গিয়ে আরও দুর্বল হয়ে পড়বে এবং শেষ পর্যন্ত মাঠে রাজনৈতিক দল হিসেবে সক্রিয় থাকবে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী। বিএনপির মতো একটা গণতান্ত্রিক দলের দুর্বল অস্তিত্ব যে উগ্র ইসলামি শক্তিরই উত্থান ঘটাবে, সে চিন্তা তাদের মাথায় নেই। ভারতের পক্ষে উগ্রপন্থী মাওবাদী ও ধর্মীয় শক্তির উত্থান ঠেকানো সম্ভব হয়েছে অব্যাহত গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমে। ভারত তার এই অভিজ্ঞতা দিয়েই বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে পারত।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যদি বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার মনোভাব গ্রহণ না করে তাহলে তাকে এককভাবেই উগ্র ধর্মীয় শক্তির সঙ্গে লড়াই করতে হবে, যার পরিণতিতে তার অস্তিত্বও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।

আমানুল্লাহ কবীর: সাংবাদিক ও কলামিস্ট। বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর ডটকমের সিনিয়র এডিটর।