সন্ত্রাসনির্ভর রাজনীতি ও রাজুর আত্মদানের স্মৃতি

চিররঞ্জন সরকারচিররঞ্জন সরকার
Published : 13 March 2014, 08:51 AM
Updated : 13 March 2014, 08:51 AM

তোমার অঙ্গীকার খচিত হাত নীলিমাকে স্পর্শ করে নিঃশঙ্ক মুদ্রায়,/ওরা তোমাকে পুড়িয়ে ভস্ম করুক হিংসার আগুনে,/তুমি বার বার আগুন থেকে বেড়িয়ে আসবে পুরাণের পাখি।

— শামসুর রাহমান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র মইন হোসেন রাজু ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় কর্মী ছিল। আমরা তাকে রাজু নামেই চিনতাম। রাজুর সঙ্গে কোথায় কীভাবে পরিচয় হয়েছিল মনে নেই। সভা-সমাবেশেই হবে হয়তো। বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে তখন আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেছিলাম। সুন্দর জীবনের স্বপ্ন, সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার, সমাজটাকে বদলে দেবার, পালটে দেবার স্বপ্ন!

আবেগে ভেসে বেড়ানোর ওই বয়সে আমরা কেন জানি বেহুদা স্বপ্ন দেখতে শিখেছিলাম! আমাদের স্বপ্ন দেখতে শেখানো হয়েছিল বলেই হয়তো-বা। কিছুটা একরোখা, জেদি অথচ আশ্চর্যরকম সরল রাজু ছিল আমাদের সেই স্বপ্নবানদের একজন, বলা যায় মধ্যমণি। সকলের আদরের, শ্রদ্ধার, স্নেহের। বচনে-চিন্তায়-আবেগে আমরা সেই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ছাত্র ইউনিয়ন করতাম তারা মোটামুটি একই রকম হলেও রাজু ছিল একটু আলাদা। সে ছিল অন্য সবার চেয়ে দৃঢ় এবং স্থির।

রাজুর নিয়মানুতর্তিতা ছিল চোখে পড়ার মতো। ক্লাস-পড়া-সংগঠনের কাজ সব কিছুতেই সে ছিল কর্তব্যনিষ্ঠ। সব কিছু ম্যানেজ করে চলত। তবে কিছুটা ব্যত্যয় ঘটত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার ব্যাপারে। তখন রাজুর বাসা ছিল রাজধানীর শ্যামলীতে, যেখানে তার মা, বড়ভাই ও বোন থাকতেন। এই পরিবারের স্নেহধন্য জেদি ছেলে রাজুকে তাই পরিবারের টানে ও মায়ের অনুরোধে নিয়মিত বাসায় যেতে হত। রাজু বাসায় যেত ঠিক, কিন্তু কিছুক্ষণ বাদেই আবার ফিরে আসত। ওর মন জুড়ে ছিল ক্যাম্পাস, বন্ধু-বান্ধব, সংগঠন, ছাত্রদের দাবি-দাওয়া-আন্দোলন। তাই তো বাসার চেয়ে ক্যাম্পাসে (শহীদুল্লাহ হলের ১২২ নম্বর রুমে, যেখানে তার সিট বরাদ্দ) তাকে বেশি দেখা যেত।

১৯৯২ সালের ১৩ মার্চ। সেদিন ছিল শুক্রবার। আমরা কয়েকজন ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যাগে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিং নিয়ে কথা বলছিলাম টিএসসির সবুজ চত্বরে। সে সময় আমরা প্রতি বছর ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির নিয়মনীতিসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করতে 'প্রজ্ঞা কোচিং সেন্টার' নামে একটি একটি স্বল্পকালীন ভর্তি-কোচিং চালু করেছিলাম। এর পুরোভাগে ছিল রাজু। কোচিং সেন্টারটির নামও ছিল রাজুর দেওয়া।

এর উদ্দেশ্য, যেসব মেধাবী ছাত্রছাত্রী টাকার অভাবে কোচিংয়ের সুযোগ পায় না, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির নিয়ম-নীতি, প্রশ্নপত্রের ধরন ইত্যাদি বিষয়েও তাদের তেমন কোনো ধারণা থাকে না, সেসব বিষয়ে তাদের ধারণা দেওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে সহজভাবে প্রত্যেকটি বিষয় সহজ ও স্পষ্টভাবে তুলে ধরা। উল্লেখ্য, প্রজ্ঞা কোচিং সেন্টারে তখন যারা ক্লাস নিয়েছেন, তাদের অনেকেই এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।

আমরা ভর্তিপরীক্ষার ঠিক আগে আগে এই কোচিংয়ের আয়োজন করতাম। এতে করে ঢাকার বাইরে থেকে আসা বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী যাদের পক্ষে দীর্ঘদিন ঢাকায় থেকে কোচিং করা সম্ভব হত না তারা বেশ উপকৃত হত। রাজুর আকাঙ্ক্ষা ছিল ছাত্রদের উপকার করা, শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ভূমিকা পালন করা। তাই তো গতানুগতিক মিছিল-মিটিংয়ের বাইরে শিক্ষার্থীদের সরাসরি কল্যাণ হয় এমন সব উদ্যোগের দিকেই রাজুর ঝোঁক ছিল বেশি।

যাহোক, সেদিন পড়ন্ত বিকেলে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের অস্ত্রধারীরা টিএসসিতে বন্দুকযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। আমরা শত শত সাধারণ ছাত্রছাত্রী অস্ত্রধারী গুণ্ডাদের সন্ত্রাসের কাছে টিএসসিতে জিম্মি হয়ে পড়ি। অথচ কী আশ্চর্য, সে সময় ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তাদের ভূমিকা ছিল স্রেফ দর্শকের!

পুলিশের এই ভূমিকার প্রতিবাদে প্রথম সোচ্চার হয় রাজু। সে পুলিশকে অস্ত্রবাজদের গ্রেফতার করার আহবান জানায়। ক্ষোভ ও প্রতিবাদের মুখে পুলিশ ভূমিকা পালন করে বটে, কিন্তু তা ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের পক্ষে। তারা ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক ছাত্রদলের গুণ্ডাদের প্রটেকশন দিয়ে বিপরীত দিকে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। তা ক্রমেই বিস্তৃত হয় পুরো টিএসসি, যেখানে অসংখ্য ছাত্রছাত্রী আটকা পড়ে।

এর প্রতিবাদে রাজুর নেতৃত্বে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে মিছিল বের করি। মিছিলে শরিক হন 'গণতান্ত্রিক ছাত্রঐক্যভুক্ত' বাম ছাত্রসংগঠনের কর্মীরাও। টিএসসির সড়কদ্বীপ প্রদক্ষিণ করার সময় ডাসের সামনে 'অস্ত্র শিক্ষা একসাথে চলবে না', 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ এক হও' এ শ্লোগান যখন উচ্চারণ করছিলাম, তখন হাকিম চত্বরের সামনে থেকে একঝাঁক বুলেট মিছিল লক্ষ্য করে ছুটে আসে। ছাত্রদলের চিহ্নিত গুণ্ডারা সরাসরি মিছিল লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। এর একটি গুলি কপালে লাগে মিছিলের সামনে থাকা রাজুর।

শ্লোগান মুখে নিয়েই সে লুটিয়ে পড়ে টিএসসির স্বোপার্জিত স্বাধীনতা ভাস্কর্যের সামনে সড়ক দ্বীপের পাশের রাস্তায়। আমরা হতবিহ্বল হয়ে থমকে যাই। মিছির ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রাণভয়ে দ্বিগ্বিদিক ছুটতে থাকে। তখন সময় সন্ধ্যা সোয়া ছয়টা। রাজুর রক্তাপ্লুত দেহ নিয়ে আমরা রওনা হই ঢাকা মেডিকেল কলেজে, ৩২ নং ওয়ার্ডে। রাজুর দেহ থেকে অবিরাম টপ টপ করে রক্ত ঝরতে থাকে। তার শার্ট রক্তে ভিজে যায়। রক্তাক্ত রাজুকে এক ঝলক দেখেই কর্তব্যরত ডাক্তার বললেন, রক্ত চাই, অনেক রক্ত। মুহূর্তে রাজুর সহযোদ্ধারা দল বেঁধে রক্ত দেওয়ার প্রক্রিয়ার শামিল হন।

সব প্রক্রিয়া দ্রুত এগোতে থাকে। সেই সঙ্গে এগোয় সময়। সবার মধ্যে উৎকণ্ঠা, শঙ্কা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীতে ভরে যায়। শত শত বন্ধু, সহযোদ্ধা, রাজুর গুলিবিদ্ধ হওয়ার সংবাদ শুনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটে আসা হাজার হাজার শিক্ষার্থী। সবারই দুঃসহ প্রতীক্ষা। রাজুর জীবনের জন্য যারা সব কিছু করতে প্রস্তুত।

কিন্তু রাজুকে আর রক্ত দিতে হয়নি। সবার সব প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে, কাউকে কিছু করার সুযোগ না দিয়ে রাজু চিরতরে চলে যায়। একটা দুঃসহ বেদনা আমাদের আচ্ছন্ন করে। আমরা রাজুর পরিবারের সদস্য– শোকবিহ্বল বড়ভাই রানা, শোকাতুর বোন রুমা আর গভীর যন্ত্রণাহত মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলি। সন্ত্রাসনির্ভর রাজনীতির বুলেটে এভাবেই শেষ হয়ে যায় একটি অনন্ত সম্ভাবনাময় জীবন!

বর্তমানে সমাজে যে বিশৃঙ্খলা, যে নৈরাজ্য চলছে তার সঙ্গে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ক্ষমতা কাড়াকাড়ির এক সর্বনাশা যোগসূত্র রয়েছে। রাজনীতিকরা ছাত্ররাজনীতিকে ক্ষমতার ভরেকন্দ্র হিসেবে দেখতে চায়। তারা ছাত্রদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলে এবং সেভাবেই ব্যবহার করে। আদর্শহীন রাজনীতি আজ সার্বিক অবক্ষয়ের এক বৃত্ত তৈরি করেছে। একপক্ষ সন্ত্রাস করলে অন্যপক্ষ সন্ত্রাস দিয়েই তা দমন করতে চাইছে। এভাবে ছাত্ররাজনীতি পরিণত হয়েছে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে।

শুধু ছাত্ররাজনীতিই নয়, বর্তমানে রাজনীতি ও সহিংসতা সমার্থক হয়ে গেছে। রাজনৈতিক কর্মী আর গুণ্ডা-অপরাধীর সঙ্গে কোনো পার্থক্য করা যায় না। আগে সমাজে কেউ আক্রান্ত হলে রাজনৈতিক কর্মীদের কাছে যেত উদ্ধারের জন্য। আর এখন সারাক্ষণ আল্লাহ-আল্লাহ করে রাজনৈতিক কর্মীদের খপ্পর থেকে রেহাই পেতে! বোমাবাজ, মানুষ হত্যাকারী, চাঁদাবাজ-অপহরণকারী-গণদুশমন সমাজবিরোধীদের এক মহা মিলনকেন্দ্র বানানো হয়েছে রাজনীতির মঞ্চকে। এর থেকে উদ্ধারের কোনো আগ্রহ, চেষ্টা বা দায় লক্ষ করা যাচ্ছে না কারেও মধ্যে।

নীতি-আদর্শহীন রাজনীতির লবকুশরা যখন যে কোনো উপায়ে ক্ষমতারোহণ বা ক্ষমতা ধরে রাখার অনৈতিক সংগ্রামে লিপ্ত হন, তখন তাদের পেশীশক্তি প্রদর্শন করতেই হয়। আর তা করতে গিয়ে প্রশ্রয় দিতে হয় সমাজবিরোধীদের। তারা মনে করেন এই হিংস্র পশুরা ছাড়া তাদের দাবি আদায় করতে পারবেন না। আর সে কারণেই তারা একে আড়ালে পৃষ্ঠপোষকতা দেন আর প্রকাশ্যে এই অসুরিক পৈশাচিকতার দায় প্রতিপক্ষের ঘাড়ে চাপান। হিংস্র এই হায়েনাদের তারা ব্যবহার করেন সত্য, কিন্তু নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাখেন না! কী জানি, হয়তো তারা তা চানও না!

আমাদের দুর্ভাগ্য, স্বাধীনতার তেতাল্লিশ বছর পরও শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস দূর হয়নি, বরং অনেক ক্ষেত্রে তা নতুন মাত্রা নিয়ে বিস্তৃত হয়েছে। ছাত্রলীগ-ছাত্রদল-শিবিরের মতো সন্ত্রাসনির্ভর ছাত্রসংগঠনের বিপরীতে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো ক্রমেই তাদের শক্তি ও সমর্থন হারাচ্ছে। ভরসার জায়গাগুলো খুব দ্রুতই হতাশার চোরাবালিতে হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ এই শিক্ষার পরিবেশ উন্নত ও সুন্দর করার জন্য এদেশ কতনা লড়াই-সংগ্রাম হয়েছে। রাজুর মতো কত সাহসী বীর শহীদ হয়েছে। তবে কি শহীদের আত্মদান বৃথা?

এখনও কেন দেশে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লিখতে হয়, কথা বলতে হয়? ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও শিবিরের অস্ত্র, চাঁদাবাজি ও শক্তিনির্ভর রাজনীতি আর কতকাল চলবে? আমাদের প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরা আর কতকাল মুখ বুজে এই ছাত্রনামধারী কুলাঙ্গারদের শক্তি প্রদর্শনের মহড়া উপভোগ করবেন? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কবে মেরুদণ্ড খাড়া করে প্রকাশ্যে বলবেন, যারা সন্ত্রাস করবে, তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে চিরকালের জন্য বহিষ্কার করা হবে? কবে তারা পুলিশকে নির্দেশ দিবেন, যারা সন্ত্রাস করে, যারা তাদের সাহায্য করে, তাদের ধরে ধরে জেলে পুড়ুন?

প্রতি বছর ১৩ মার্চ আসে, আমাদের হৃদয় বিষাদে ছেয়ে যায়। টিএসসিতে রাজু স্মরণে সন্ত্রাসবিরোধী ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে। এর পাশে বসে শিক্ষার্থীরা আমোদ করে, আড্ডা দেয়। অথচ তারা অনেকেই জানে না, কেন এটা নির্মাণ করা হয়েছে, এই ভাস্কর্য নির্মাণের পেছনের কাহিনী কী? সাধারণ পথচারী ও আগন্তুকেরাও জানে না মইন হোসেন রাজু নামে ক্যাম্পাসের এক 'প্রমিথিউসের' কথা, যিনি সন্ত্রাসমুক্ত একটি শিক্ষাঙ্গন প্রতিষ্ঠার জন্য অসীম সাহসী ভূমিকা পালন করেছিলেন, জীবন দিয়েছিলেন!

বুকের রক্তে সলতে জ্বেলে সন্ত্রাসের অন্ধকারে আগুন জ্বেলেছিল রাজু। আমরা যারা রাজুর সহযোদ্ধা ছিলাম, তারা চেষ্টা করেছিলাম একটি সুস্থধারার সমাজপ্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যুক্ত থাকার। কিন্তু আমাদের সেই চেষ্টা অনেকটাই বিফলে গেছে। আজ আমরা অনেকেই স্মৃতিতাড়িত, অবসন্ন। সেই কাঙ্ক্ষিত স্বদেশ থেকে আমরা যেন ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছি। সব কিছু নষ্টদের দখলে চলে যাচ্ছে। অক্ষম দীর্ঘশ্বাসের মধ্যে আমাদের সব স্বপ্ন-প্রত্যাশা-সম্ভাবনার কবর রচনা করে চলেছি।

আমরা এমন একটা আজব দেশে বাস করছি যেখানে দাগী সন্ত্রাসীরা নিয়ন্ত্রণ করে পুরো সমাজ। প্রশাসন তাদের রক্ষায় সবটুকু শক্তি উজাড় করে দেয়। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়ালে তার পরিণতি হয় রাজুর মতো। সন্ত্রাসবিরোধী আন্দোলন তাই মুখ থুবড়ে পড়ে। প্রশাসন রাজুদের খুনের মামলা নিতে আগ্রহ দেখায় না। সরকার কিংবা বিরোধী দল কেউ-ই চায় না হত্যার বিচার হোক, খুনিরা শাস্তি পাক। তাই তো নানা ছুতোয় তদন্ত ও বিচার প্রলম্বিত করা হয়।

সবচেয়ে অবাক লাগে, যে ক্যাম্পাস সন্ত্রাসমুক্ত করতে রাজু জীবন উৎসর্গ করেছে, সেই ক্যাম্পাসেও প্রশাসনিকভাবে 'সন্ত্রাসবিরোধী দিবস' হিসেবে ১৩ মার্চ পালিত হয় না! সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানতে পারে না, তাদের প্রিয় ক্যাম্পাসকে দানবমুক্ত করতে একদিন মইন হোসেন রাজু নামে এক সাহসী তরুণ জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, যার স্মরণে টিএসসিতে একটি বিরাট ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে!

১৩ মার্চ নিজেকে খুবই বিপন্ন এবং অসহায় মনে হয়, যখন দেখি রাজুকে যারা খুন করেছে তাদের কেউ কেউ বিএনপির নেতা বনে যান! নবম জাতীয় নির্বাচনে তাদের মধ্যে একজনকে দেখেছি ঢাকা শহরে বিএনপির হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভোট চাইতে! এর চেয়ে লজ্জা ও ধিক্কারের বিষয় আর কী হতে পারে?

চিররঞ্জন সরকার: কলামিস্ট।