সুখরঞ্জন বালীর খোঁজে: প্রতিক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া

ওমর শেহাব
Published : 10 March 2014, 01:16 PM
Updated : 10 March 2014, 01:16 PM

সুখরঞ্জন বালীকে নিয়ে সৃষ্ট জটিল পরিস্থিতি নিয়ে লিখেছিলাম জানুয়ারি ৯, ২০১৪ তে (১)। এই লেখায় প্রসঙ্গক্রমে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সাংবাদিকতার নামে বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন লেখার জন্য সতর্কবাণীপ্রাপ্ত (৩) সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের কিছু লেখার কথা এসেছিল।আমার সেই লেখা তার কাছে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী (২) মনে হওয়ায় আমি দুঃখিত। এই লেখায় আমি সেই বিষয়গুলো আরেকটু পরিষ্কার করার চেষ্টা করব।

শুরুতে একটি ছোট্ট বিষয় বলে নিই। তার লেখার তৃতীয় অনুচ্ছেদে বার্গম্যান বলেছেন আমার মূল অবস্থানের কথা। আমি একটু পরিষ্কার করে দিতে চাই যে, আমার মূল অবস্থান বার্গম্যানের কোনো প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে নয়। এখানে আমাদের সবার মূল অবস্থান হওয়া উচিত সুখরঞ্জন বালী যেন নিরাপদে এবং স্থায়ীভাবে তার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারেন সেটি নিশ্চিত করা। বালীর আসলেই কী হয়েছে, তিনি অপহৃত হয়েছেন কিনা, না হলে আসলে কী হয়েছে, যদি হয়ে থেকে কারা করেছে, যদি সেটি ডিবি পুলিশ করে থাকে তাহলে তাদের কে নির্দেশ দিয়েছে, ঘটনাটি রাষ্ট্র নাকি প্রতিপক্ষের স্যাবোটাজ– এগুলো পরিষ্কার হওয়ার জন্য তদন্ত দরকার।

এ ক্ষেত্রে একজন পেশাদার সাংবাদিকের দায়িত্বটি কী? তার দায়িত্ব হল পাঠকদের কাছে তার হাতে থাকা সব তথ্য তুলে ধরা। যদি তিনি নিজে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে চান তাহলে তার পক্ষে থাকা অকাট্য যুক্তিগুলো তুলে ধরা; আর যদি তেমন কিছু হাতে না থাকে সে ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত দেওয়া থেকে বিরত থাকা।

আমার এ লেখায় বালীকে অপহরণ করা হয়েছে কী হয়নি সে ব্যাপারে কোনো নিশ্চিত অবস্থান নেই। কারণ আমার হাতে পুরো ছবি আঁকার মতো তথ্য নেই। আমার নিশ্চিত অবস্থান হল এই যে, বালীকে অপহরণ করা হয়েছে এই মর্মে যারা দৃঢ়ভাবে দাবি করছেন, ক) তাদের হাতে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ নেই; খ) যেসব তথ্যপ্রমাণ তাদের দাবি নাকচ করে দেয় সেসব তারা আলোচনার সময় চেপে যাচ্ছেন।

এ দুটির কোনোটিই আমাদের মূল উদ্দেশ্য অর্থাৎ সত্য উদঘাটনপূর্বক বালীকে তার পরিবারের কাছে নিরাপদে ফিরে যেতে সাহায্য করাতে কোনো সাহায্য করছে না। কিছু সাংবাদিকের অপেশাদার আচরণ বিভ্রান্তির মেঘ সৃষ্টি করে বালীর নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের পথে বরং বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। একজন মানুষ তার প্রিয়জনদের কাছ থেকে দূরে আছেন এর চেয়ে কষ্টের আর কিছু হতে পারে না। সেই ব্যাপারটির সুরাহা হওয়াটাই আমাদের মূল বিষয় হওয়া উচিত। কোনো সাংবাদিকের কাজের মান নিয়ে আলোচনা সেই তুলনায় গৌণ।

পাঠকদের আরও একটি ব্যাপারে আগে থেকেই আমি একটু মানসিকভাবে প্রস্তুত করিয়ে নিতে চাই। বার্গম্যান বলেছেন, আমার লেখাটিতে ত্রুটি ও সত্যগোপনের উদাহরণ রয়েছে এবং লেখাটি যথেষ্ট বিভ্রান্তিসৃষ্টিকারী। আমরা প্রত্যেকটি অনুচ্ছেদে সেটি যাচাই করে দেখব। পাশাপাশি দেখাব কীভাবে কখনও কখনও বার্গম্যান আমার কথা খণ্ডিতভাবে কিংবা প্রেক্ষাপট ছাড়া ব্যবহার করে একটি কাল্পনিক দাবি হিসেবে উপস্থাপন করে সেটি খণ্ডন করার অহেতুক চেষ্টা করেছেন। যেহেতু ডেভিড বার্গম্যান কিছু নির্দিষ্ট শিরোনামের অধীনে লেখাটি লিখেছেন, সেটি ধরে ধরে এগুলে পাঠকদের মিলিয়ে নিতে সুবিধা হবে। কাজেই আমি সেভাবেই লিখছি।

স্পষ্ট বক্তব্য

এটি হল খণ্ডিত তথ্য ব্যবহার করে আমি একটি বক্তব্য দিয়েছি এ রকম কাল্পনিক দাবি করে সেটিকে খণ্ডন প্রচেষ্টার প্রথম উদাহরণ। নিজের প্রতিক্রিয়ার চতুর্থ অনুচ্ছেদে বার্গম্যান বলেছেন–

"ওমর শেহাবের মূল অবস্থান বেশ স্পষ্ট– দেলোয়ার হোসেইন সাঈদীর মামলার সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাইরে আসামীপক্ষের আইনজীবীর গাড়ি থেকে অপহৃত হননি; তার অপহরণ নাটকের এই ষড়যন্ত্রে জামায়াতে ইসলামী জড়িত এবং আমিও এই ষড়যন্ত্রের একটি পক্ষ।"

প্রথমেই তিনি অসত্য দাবি করেছেন। আমি নিশ্চিত করে বলিনি বালী অপহৃত হননি; আমি এ-ও বলিনি যে, জামায়াত জড়িত; বা আমি এ-ও বলিনি যে, বার্গম্যান তাদের সঙ্গে মিলে অপহরণ করেছেন। আমি যেটি বলতে চাচ্ছি তা পরিষ্কারভাবে আমার মূল লেখায় বলেছি। এখানে আবারও সেটি সারমর্ম হিসেবে দিলাম।

যেটি আমি নিশ্চিতভাবে বলেছি তা হল–

ক) বালীকে ডিবি পুলিশ অপহরণ করেছে বলে যারা জোর গলায় দাবি করছেন তাদের হাতে অকাট্য তথ্যপ্রমাণ নেই;

খ) যেসব সাক্ষ্যপ্রমাণ তাদের সেই দাবি নাকচ করে দেয় সেসব তারা তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় উল্লেখ করেন না;

গ) জামায়াতে ইসলামীর অপহরণ সংক্রান্ত গল্পতে অসংখ্য ভয়াবহ রকমের ফাঁক আছে;

ঘ) ডেভিড বার্গম্যান এই সংক্রান্ত সাংবাদিকতার সময় মিথ্যা পরিচয়ে সাক্ষী আদালতে প্রবেশ করানোর খবর জেনেও সেটি গোপন রেখে অপেশাদার আচরণের পরিচয় দিয়েছেন। এর অর্থ হল এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপক্ষের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে সেগুলো অত্যন্ত অপরিণত ও অপেশাদার।

আমার নাম দিয়ে কয়েকটি কাল্পনিক দাবি উপস্থাপন করে তারপর সেগুলো খণ্ডন করার অপ্রয়োজনীয় প্রচেষ্টা বালী-সংক্রান্ত ধোঁয়াশা কাটাতে সাহায্য করবে বলে মনে হয় না।

বালী নিজে কী বলেছেন

এই অনুচ্ছেদে বার্গম্যান বলেছেন আমরা তার কিংবা জামায়াতের আইনজীবীদের কথা বিশ্বাস করতে না পারি কিন্তু কেন বালীর কথা বিশ্বাস করছি না? জামায়াতের আইনজীবীর কথা না হয় ছেড়েই দিলাম, কারণ বার্গম্যান নিজেই দেখিয়েছেন তারা মিথ্যা পরিচয়ে মানুষকে আদালতের ভিতরে নিয়ে যায়। কিন্তু বার্গম্যানের বক্তব্যে কেন কারও মুখের কথার উপর বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করার প্রশ্ন আসবে? কেন একজন পেশাদার সাংবাদিক বলবেন না, "এই হল আমার কাছে থাকা তথ্য ও যুক্তি। এর ভিত্তিতে আমি যে প্রতিবেদন দাঁড় করিয়েছি তাতে অন্তত বিশ্বাসযোগ্যতার কোন সমস্যা নেই"?

পাল্টা প্রশ্ন এলেই কেউ যদি বলেন, ঠিক আছে, আমার কথা বিশ্বাস করবেন না, অমুকের কথা বিশ্বাস করুন– তাহলে তো বিপদ! পেশাদার সাংবাদিকদের সঙ্গে তার পাঠকদের সম্পর্ক কখনওই বিশ্বাসের নয়। কারণ আমরা তাদের সবসময় ব্যক্তি হিসেবে চিনি না। কিন্তু লেখার মধ্যে যে তথ্য ও বিশ্লেষণ দেওয়া থাকে তার ভিত্তিতে লেখার শেষে দেওয়া সিদ্ধান্ত আমরা তাকে ব্যক্তি হিসেবে না জেনেই যাচাই করে নিতে পারি। কাজেই পেশাদার সাংবাদিকের উচিত নিজের লেখার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসের পরিচয় দেওয়া।

এখন প্রশ্ন হল, বালীর কোন কথা আমরা বিশ্বাস করব? বালীর কথা আমরা জেনেছি দুই সূত্রে। ২০১৩ সালের ১৬ মে নিউ এইজ পত্রিকায় বার্গম্যানের একটি প্রতিবেদনে আর একই দিনে প্রকাশিত বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত অমিতাভ ভট্টশালীর একটি প্রতিবেদনে। প্রথম প্রতিবেদনে (যেটি আমার মূল লেখার [১] ৩ নং তথ্যসূত্র) বার্গম্যান দাবি করেছেন বালীকে ডিবি অপহরণ করেছে আর দ্বিতীয় প্রতিবেদনে (বিবিসির প্রতিবেদন যেটি আমার মূল লেখার [১] ৮ নং তথ্যসূত্র) বলা হয়েছে বালীর নিজের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তিনি ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে অবৈধ পথে ভারতে গিয়েছিলেন।

এরপর বার্গম্যান দৈনিক টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার গত বছরের আগস্টের একটি প্রতিবেদনের সূত্র দিয়েছেন যেখানে আবার বালীর অপহরণ কাহিনী এসেছে ে[৪]। পুরো প্রতিবেদনে কথিত অপহরণ নিয়ে কেবল অভিযোগটি এসেছে কিন্তু এর বিস্তারিত নেই। শুধু এক লাইন অভিযোগ থেকে আমরা লাফ দিয়ে নিশ্চয়ই দৃঢ় সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পারি না! সুখরঞ্জন বালীর কাজের ধারা বা তার ইচ্ছা নিয়ে যে তার স্ত্রীরই স্বচ্ছ ধারণা নেই সেটি আমরা বার্গম্যানের নেওয়া সাক্ষাৎকারেই দেখেছি (যেটি আমার মূল লেখার [১] ৭ নং তথ্যসূত্র)। এখন ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে একটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দৃঢ়ভাবে দাঁড় করানোর মতো যথেষ্ট উপাদান কি এখানে আমরা পাচ্ছি?

এখানে আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। বিবিসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বেআইনি পথে অর্থের বিনিময়ে (সোজা বাংলায় যাকে বলে 'ঘুষ') বালী তার বক্তব্য এই দেশের কারও কাছে পাঠিয়েছেন। এই বক্তব্য সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় যদি ঘুষ দেওয়ার ব্যাপার থাকে এবং বার্গম্যান অস্বীকার করার পরও সেই তথ্য যদি স্বাধীন ও স্বনামধন্য সংবাদমাধ্যমের নিজস্ব অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে তাহলে প্রতিবেদন প্রস্তুতির আর কোন কোন পর্যায়ে বিশ্বাসযোগ্যতার ঘাটতি থাকতে পারে বলে আমরা ধরে নেব? এটি কি পেশাদারিত্বের বরখেলাপ নয়?

তিনি আমাদের আরও একটি ব্যাপার মাথায় রাখতে বলেছেন যে, "বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী পক্ষের বেশ ক'জন সমর্থক ও কর্মীকে অপহরণের অভিযোগ রয়েছে।"। এটি তো কোনো যুক্তিই হল না। বরং এটি একটি ঢালাও মন্তব্য। বার্গম্যানকেই তো প্রশ্নবিদ্ধ সাংবাদিকতার দায়ে আদালত এর আগে সতর্ক করে দিয়েছে। এর মানে কি এই যে তার এর পরের কোনো প্রতিবেদনই আমরা আমলে নেব না? অবশ্যই নেব। প্রত্যেকটি প্রতিবেদনই আমরা পৃথকভাবে বিবেচনা করব এবং যেগুলোতে দেখানো যুক্তি আর বিশ্লেষণের সঙ্গে সিদ্ধান্তের কোনো ফাঁক নেই সেগুলো অবশ্যই আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিব।

বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে যদি বিরোধী পক্ষের সমর্থককে অপহরণের অভিযোগ করে তার ভিত্তিতে কোনো বিরোধী কর্মীকে খুঁজে পাওয়া না গেলে সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ধরে নিব না যে সরকার তাকে গুম করেছে। এটি নির্ভর করে আমরা ঘটনার কতটুকু বিস্তারিত ও নির্ভরযোগ্য বিবরণ পাচ্ছি। তথ্যসংগ্রহের কোনো পর্যায়ে বেআইনিভাবে অর্থবিনিময় ঘটা সত্ত্বেও কোনো সাংবাদিক যদি সেটি অস্বীকার করে থাকেন তাহলে তার বক্তব্য বিবেচনায় আনার সময় আমাদের এটিও মাথায় রাখতে হবে যে, বেআইনি পথে তথ্যসংগ্রহ করার মতো নৈতিক স্খলন তার হয়েছে।

পাঠকদের কাছে প্রশ্ন, এখানে বার্গম্যানের দাবি করা আমার ত্রুটি, গোপন করা সত্য আর বিভ্রান্তিগুলো কী কী?

বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষ্য

এই অনুচ্ছেদে দেওয়া বার্গম্যানের বক্তব্যটি আমি তুলে দিচ্ছি।

"ওমরের প্রবন্ধ অনুযায়ী, আমি অপহরণের অভিযোগ বিশ্বাস করার আগে এটি লক্ষ করছি না যে ঘটনাটির একমাত্র সাক্ষী জামায়াতের আইনজীবী এবং এ দলের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি খবরের কাগজে কর্মরত ব্যক্তিরা। মূল প্রবন্ধ পড়লে এটি যে কেউ স্পষ্টভাবে দেখতে পাবেন যে তার বক্তব্য সত্য থেকে অনেক দূরে। "

এটি তো আমার বক্তব্যের একটি খণ্ডিত উপস্থাপন। আমার মূল লেখায় বার্গম্যান আরও কী কী ব্যাপার এড়িয়ে যাচ্ছেন সেটি দিয়েছি। তার প্রতিক্রিয়ায় আমার যুক্তি খণ্ডন করার সময় সেগুলো আবার এড়িয়ে যাওয়ায় এবার আমি তার একটি তালিকা একদম নম্বরসহ দিয়ে দিচ্ছি।

১. দৈনিক সংগ্রামের সিনিয়র সাংবাদিক শহীদুল ইসলামের একদম ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় হাজির হবার কাকতাল।

২. সেই সময় সেখানে কর্মরত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফো ডটকমের সাংবাদিক তানিম আহমেদের মতে কোন ধরনের অস্বাভাবিক কিছু ঘটতে দেখা যায়নি এই তথ্যটি। একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, তানিম সাহেব ঠিক সেই সময়ই সেখানে ছিলেন এবং তিনি আশেপাশের লোকজনের কাছে জিজ্ঞেস করে যাচাইও করেছেন তেমন কিছু ঘটেছে কিনা।

৩. তথাকথিত অপহরণ ঘটার অল্প সময় পরে ট্রাইব্যুনালের ডেপুটি রেজিস্ট্রার সেখানে উপস্থিত হন এবং জামায়তের আইনজীবীদের সঙ্গে তার দেখাও হয় কিন্তু কেউই তাকে অপহরণ সংক্রান্ত কোনো কিছু বলেননি।

আপনি যদি আগে থেকেই আপনার সিদ্ধান্ত ঠিক করে রাখেন, তাহলে যেসব তথ্য সেই সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে সাহায্য করবে সেগুলোর কথা বলবেন, আর কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই বাকিগুলো এড়িয়ে যাবেন– এর নাম কি সাংবাদিকতা? অন্তত কেন সেই তথ্যগুলো সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা হচ্ছে না সেই ব্যাখ্যা তো পাঠকেরা আশা করতেই পারেন। এই তথ্যগুলো গুরুত্বপূর্ণ; কারণ এগুলো বার্গম্যানের পছন্দের তথ্যগুলোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং বার্গম্যানের মতে, আমার লেখা তার ফৌজদারী শাস্তির কারণ হতে পারে।

আমার এই লেখার বিপরীতে যখন বার্গম্যান আবারও লিখবেন, পাঠকেরা এইবার তালিকা থেকে একদম নম্বর মিলিয়ে দেখতে পারবেন সব তথ্য বিবেচনায় নিয়ে যুক্তি খণ্ডন করা হচ্ছে কিনা।

এবার আসা যাক ছবিগুলোর প্রসঙ্গে [৬]। প্রথম ছবি হচ্ছে একটি গাছের ছবি। বার্গম্যানের মতে, যেহেতু যে গাছের সামনে থেকে বালীকে অপহরণ করা হয়েছে বলা হচ্ছে তার সঙ্গে ছবির গাছটি মিলে যায়। আমার স্বল্প বুদ্ধিতে কুলাচ্ছে না এটি কীভাবে একজন সাংবাদিক যুক্তি হিসেবে দেখাতে পারেন। আমি যদি দাবি করি বার্গম্যান রকেটে করে চাঁদে গেছেন, আর প্রমাণ হিসেবে কেবল নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টারের গেটের সামনের গাছের ছবি দিয়ে বলি, এই গাছের পাশ দিয়েই বার্গম্যান নাসায় প্রবেশ করেছিলেন, তাহলে চলবে?

আমার আরেকটি ছোট্ট আপত্তি আছে ছবিটি নিয়ে। আমি যখন বার্গম্যানের ব্লগ থেকে নিয়ে ইমেইজফরেনসিক.অর্গের অনলাইন ফটো ফরেনসিক টুল [৭] দিয়ে পরখ করলাম, তখন দেখছি বলা হচ্ছে ছবিটি তোলা হয়েছে সেদিন দুপুর ১টা ৪১ মিনিট ১৭ সেকেন্ডে [৮]। কথিত অপহরণ ঘটনাটি না সকালে ঘটেছিল?

এবার আসি দ্বিতীয় ছবির বেলায়। এখানে আমাকে গাড়ির গতিমুখ বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। ওনার মতে, যেহেতু গাড়িটি আদালতের ভিতর থেকে বাইরের দিকে বের হয়ে আসছে, কাজেই নিশ্চয়ই এটি সেই ডিবি পুলিশের গাড়ি যেটিতে করে বালীকে ধরে নিয়ে গেছে। একটি জিনিস আমার বুদ্ধিতে কুলাচ্ছে না বাংলাদেশের কোন আদালত আছে যেখানে নিয়মিত পুলিশের গাড়ি ঢুকছে আর বের হচ্ছে না? আমি যদি এখন একটি রকেট উৎক্ষেপনের ছবি দেখিয়ে দাবি করি যেহেতু রকেটের গতি উপরের দিকে, কাজেই ডেভিড বার্গম্যান চাঁদে গেছেন, তাহলে কী হবে?

ভালো কথা, ফরেনসিক টুল বলছে ছবিটি তোলা হয়েছে দুপুর ১টা ৪০ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে [৯]। আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছি কথিত অপহরণ হয়েছিল সকালে।

এরপর আরও দুটি ছবির কথা বলা হয়েছে। তার মধ্যে তৃতীয়টি হল একটি পুলিশের গাড়ির সামনে হেলমেটে মুখ ঢাকা একটি মানুষের ছবি। সেই মানুষটি বার্গম্যানের দাবি অনুযায়ী সেই সিনিয়র সাংবাদিক যার ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় হাজির হওয়ার কাকতালের ব্যাপারটি কেন বিবেচনায় আনা হবে না সেই ব্যাপারটি তিনি এড়িয়ে গেছেন। এবার আর চাঁদে যাওয়ার ব্যাপারে নতুন উদাহরণ দেবার রুচি হল না। একটি মানুষের অসহায়ত্ব নিয়ে এভাবে আর কত নাটক করা হবে! ফরেনসিক টুল অনুযায়ী এই ছবিটি তোলা হয়েছে দুপুর ১টা ৪০ মিনিট ১ সেকেন্ডে [১০]। কী অদ্ভূত ব্যাপার! পুলিশের চলে যাওয়ার ছবি তোলা হল আগে আর গাড়িতে বালীকে তোলার একটু পরের যে ছবি সেটি তোলা হয়েছে পরে!

চতুর্থ যে ছবি সেটি কোনো আলোকচিত্র নয়, কম্পিউটারে আঁকা একটি ম্যাপ যেটির আলাদা সাক্ষ্যমূল্য নেই। তবে একটি মজার ব্যাপার হল, ফরেনসিক টুল বলছে এটি তৈরি করা হয়েছে ২০১২ সালের ২১ এপ্রিল রাত ১টা ১৭ মিনিট ১৭ সেকেন্ডে [১১]। অর্থাৎ অপহরণের প্রায় সাড়ে ৬ মাস আগে! কী আর বলব!

এরপর এই অনুচ্ছেদ বার্গম্যান শেষ করেছিলেন নিচের কথাটি দিয়ে–

"আমি অত্যন্ত স্পষ্ট করেই বলেছিলাম যে, স্বাধীন সাক্ষ্যের অভাবে অপহরণের অভিযোগ সম্পর্কে কোনো উপসংহারে উপনীত হওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। তবে তখন এটি আমার ধারণা ছিল। এখন (বালীর নিজের সাক্ষ্য অপহরণ ঘটনার সমর্থন করছে) দেখা যাচ্ছে যে, অপহরণের অভিযোগটি বিশ্বাসযোগ্য ছিল। সাক্ষাৎকারে প্রদত্ত বিস্তারিত বর্ণনা (যার সবগুলোই পৃথকভাবে সংগৃহীত হয়েছে), প্রদত্ত সাক্ষ্যের প্রাসঙ্গিকতা এবং আলোকচিত্রসমূহের সমর্থন।"

স্বাধীন স্বাক্ষ্যেতর অভাব থাকলেও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো বিতর্কিত সংস্থা যখন ডেভিড বার্গম্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি বক্তব্য দিল (আমার মূল লেখার ১০ নং তথ্যসূত্র) তখন কিন্তু বার্গম্যান একবারও তাদের একথা বলেননি যে স্বাধীন স্বাক্ষ্যের অভাবের কারণে এখনই এ রকম একটি বড় সিদ্ধান্ত দেওয়া উচিত হচ্ছে না। মনে রাখতে হবে, বার্গম্যানের পছন্দের স্বাধীন সাক্ষ্য দৈনিক টেলিগ্রাফ পত্রিকায় এসেছে আরও প্রায় সাত মাস পরে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের স্বাধীন সাক্ষ্য (আমার মূল লেখার ৬ নং তথ্যসূত্র), যেটি অপহরণের গল্পটি নাকচ করে দেয়, ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি প্রকাশিত হলেও সেটি বার্গম্যান বিবেচনায় আনেননি। একে কী করে পেশাদার সাংবাদিকতা বলা যায়?

পাঠকদের কাছে আবারও প্রশ্ন, এখানে বার্গম্যানের দাবি করা আমার ত্রুটি, গোপন করা সত্য আর বিভ্রান্তিগুলো কী কী?

বালীর স্ত্রীর সাক্ষ্য

এই অনুচ্ছেদে বার্গম্যান দাবি করেছেন, বালীর স্ত্রীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে চারটি অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছুনো যায় এবং আমি বলতে ব্যর্থ হয়েছি যে–

"বালীর স্ত্রীর সাক্ষ্য আসামীপক্ষের আইনজীবীদের দাবি সমর্থন করে এবং তিনি ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে ঢাকায় গিয়েছিলেন।"

আমি সেই সাক্ষাতকার থেকে কিছু প্রশ্ন-উত্তর হুবহু বাংলায় এখানে তুলে দিচ্ছি।

১. বার্গম্যান: বালী কবে ঢাকায় গিয়েছিলেন?

বালীর স্ত্রী: ৩ নভেম্বর। কোর্টে গিয়েছিলেন ৫ তারিখে।

প্রিয় পাঠক, মনে করে দেখুন বার্গম্যান নিউ এইজে তার প্রতিবেদনে লিখেছেন, বালী ঢাকায় এসেছেন অক্টোবরের ২০ থেকে ২৪ তারিখের মধ্যে। এরপর বার্গম্যান জানতে চেয়েছিলেন বালী কার সঙ্গে ঢাকায় গেলেন, কোথায় ছিলেন। বার বার তার স্ত্রী বলেছেন যে, তিনি জানেন না। বালীর স্ত্রী বালীকে সুনির্দিষ্টভাবে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কার সঙ্গে তিনি ঢাকায় গেছেন কিন্তু বালী সেই প্রশ্নের উত্তর গোপন রেখেছিলেন। একটি ব্যাপার নিশ্চিত যে, বালী নিজের স্ত্রীকেও অনেক কিছু জানাচ্ছিলেন না।

আরেকটি প্রশ্ন-উত্তর দেখুন।

২. বার্গম্যান: ট্রাইব্যুনালের লোকজন কি বালীকে সাঈদীর বিপক্ষে সাক্ষ্য দিতে বলেছিলেন (আগের দুটি প্রশ্ন থেকে মনে হচ্ছে তদন্তকারী কর্মকতাদের নিয়ে কথা হচ্ছে)?

বালীর স্ত্রী: তারা কিছু বলেননি, কেবল জানতে চেয়েছেন তিনি কোথায়, ১৯৭১ সালে কোন কোন জায়গায় হত্যাগুলো হয়েছিল আর সে সময় সেখানে কারা কারা ছিল।

বালীর স্ত্রী নিজের চোখে যখন ট্রাইব্যুনালের লোকদের দেখেছেন, তখন তাদের প্রথাগত তদন্ত করতেই দেখেছেন, কোনো চাপ দিতে দেখেননি। তো এই চাপ না দেওয়ার পরও তদন্ত কর্মকর্তার কাছে বালী কী বক্তব্য দিয়েছিলেন দেখুন (বার্গম্যানের ব্লগ থেকেই নেওয়া):

" ১৯৭১ সালের জুন মাসের ২ তারিখে সকাল ১০ টার দিকে আমরা দেখলাম দেলোয়ার হোসেইন সাঈদী ওরফে দেলুর নেতৃত্বে শান্তি কমিটি আর অস্ত্রধারী রাজাকাররা পাকিস্তানি সৈন্যদের রাস্তা দেখিয়ে আমাদের হিন্দুপাড়ার দিকে নিয়ে আসছে … তারা কী করে দেখার জন্য আমরা পিছু নিলাম। গ্রামে ঢুকার পর তারা ২৫টি বাড়ি লুট করল। তারা প্রত্যেকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে একদম ছাই করে দিল।

অস্ত্রধারী রাজাকাররা আমার ভাই বিশা বালীকে ধরল এবং নারিকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন শুরু করল। তারপর দেলোয়ার হোসেইন সাঈদী ওরফে দেলুর নির্দেশে একজন রাজাকার গুলি করে আমার ভাইকে মেরে ফেলল। আমি নিজের চোখে আমার ভাইয়ের হত্যাকাণ্ড দেখেছিলাম এবং প্রচণ্ড আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম।"

বালীর স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল বালী কখন থেকে এই চাপ আর আতংক অনুভব করা শুরু করলেন? ওনার মতে এটি শুরু হয়েছে মামলা দায়েরের পর থেকে, তদন্ত চলাকালে; অর্থাৎ যখন ওর জবানবন্দী নেওয়া হয়েছে তখন নয়।

মামলা যখন শুরু হল তখন থেকেই বালী তার স্ত্রীকে বলা শুরু করেন যে তাকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বালীর ব্যাপারটিই রহস্যময়। ভারতে যেতে যেতে তিনি তার ঢাকায় আসার তারিখ পাল্টে ফেলেছেন, এমনকি নিজের স্ত্রীকেও জানাচ্ছেন না কোথায় আছেন বা তার পরিকল্পনা কী। আমার প্রশ্ন হল, বালীকে আসলে কারা চাপ দিচ্ছিল? কী চাপ যে স্ত্রীকেও তিনি কিছু জানাতে পারছিলেন না?

এরপর বার্গম্যান আরও দুবার জানতে চেয়েছিলেন ট্রাইব্যুনালের লোকজন চাপ দিয়েছিলেন কিনা কিন্তু বালীর স্ত্রী সে রকম কোনো বক্তব্য দেননি। তথাকথিত অপহরণের ঘটনার পর বালীর সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়েছিল কিনা সেটি বার্গম্যান জানতে চেয়েছিলেন। প্রশ্ন-উত্তরটি দেখুন।

বার্গম্যান: আপনার সঙ্গে কি ফোনে যোগাযোগ হয়েছিল?

বালীর স্ত্রী: হ্যাঁ, তিনি ভারত থেকে ফোন দিয়েছিলেন। আমাকেও ভারতে চলে যেত বলেছিলেন কিন্তু আমি যাইনি।

এখানে আমি পাঠকদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে, বার্গম্যানের দাবি হল বালীকে ডিবি পুলিশ ভারত সীমান্তে বিএসএফের হাতে তুলে দিয়েছে। এরপর থেকে নাকি বালী জেল থেকে জেলে ঘুরছেন। কিন্তু বালীর স্ত্রী বলছেন, বালী ভারতে গেছেন, তারপর ফোন করে তাকেও চলে যেতে বলছেন!

সাক্ষাৎকার থেকে এই ব্যাপারটি স্পষ্ট যে বালীর স্ত্রী কোনো প্রত্যক্ষ সূত্র থেকে তথ্য পাচ্ছেন না। তাকে পরিকল্পিতভাবে কে বা কারা কিছু তথ্য জানাচ্ছে। এমন কিছু তথ্য যাতে তিনি আতংকিত হয়ে পড়েন। বার্গম্যানও কিন্তু এই অসম্ভব বিপরীতধর্মী বক্তব্যে ভরপুর সাক্ষাৎকার থেকে শুধুমাত্র তার পছন্দের সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য দরকারি তথ্যগুলোই বিবেচনা করতে বলছেন। প্রশ্ন হল কেন?

প্রিয় পাঠক! আবারও জানতে চাই, বার্গম্যানের দাবি করা আমার ত্রুটি, গোপন করা সত্য আর বিভ্রান্তিগুলো কী কী?

প্রেক্ষাপটগত পরিস্থিতি

এই অনুচ্ছেদে বার্গম্যান প্রচুর ইতিহাস বর্ণনা করেছেন। একটি ব্যাপার লক্ষণীয় যে আদালত কিন্তু আসামীকে নিয়ে আসার অনুমতি দিয়েছিল। ২২ অক্টোবর (বার্গম্যান তার প্রতিক্রিয়ায় ২৩ তারিখ বলেছেন কিন্তু তার নিজের ব্লগ অনুযায়ী এটি ২২ তারিখ [৫]!) আদালত আসামীপক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে বলেছিলেন আসামীপক্ষ সমন ছাড়াই গণেশ চন্দ্র সাহা ও সুখরঞ্জন বালীকে হাজির করতে পারবে। এরপর বার্গম্যান বলেছেন– "এটি লক্ষ্যণীয় যে, রাষ্ট্রপক্ষের সকল সাক্ষীর জন্য ট্রাইব্যুনাল সমন জারি করেন।" কিন্তু তিনি যেটি চেপে গেছেন সেটি হল, এই দুজনের একজন গণেশ চন্দ্র সাহা কিন্তু ২৩ তারিখ [১২] ঠিকই সমন ছাড়া এসেছিলেন এবং সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন। বালী কিন্তু সেদিন আসেননি।

বার্গম্যান আরও একটি ব্যাপার চেপে গেছেন। এই গণেশ চন্দ্র সাহাও বালীর মতো কিন্তু প্রথমে প্রসিকিউশনের সাক্ষী ছিলেন। কিন্তু বালীর মতো তাকেও রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হিসেবে হাজির করতে পারেনি, যে কারণে আদালত বলে দিয়েছিলেন যে, তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া বক্তব্য দুর্বল প্রমাণ হিসেবে গণ্য হবে। এতে রাষ্ট্রপক্ষ একমতও হয়েছিলেন। বার্গম্যানের বক্তব্য মতে, বালী যা বলতে চেয়েছিলেন গণেশ চন্দ্র সাহা ঠিক সেটিই আদালতে বলেছিলেন– শুধুমাত্র পাকিস্তানি সৈন্যরাই তার আত্মীয়কে মেরেছে, রাজাকাররা, আরও সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে সাঈদী মারেনি।

প্রথমে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া বক্তব্য, তারপর প্রসিকিউশনের সাক্ষী হওয়া, এরপর নিখোঁজ হওয়া, তারপর আবার আসামীপক্ষের সাক্ষী হিসেবে হাজির হওয়া এবং একেবারে উল্টো এবং হুবহু একই রকমভাবে সাফাই গেয়ে সাক্ষ্য দেওয়া– এসব ক্ষেত্রে গণেশ চন্দ্র সাহা আর সুখরঞ্জন বালীর মধ্যে অবিকল মিল থাকলেও, একজনকে অপহরণ করার দরকার পড়ল না কিন্তু আরেকজনকে পড়ল। এক যাত্রায় দুজনের দুই ফল হল কেন?

এই অদ্ভূত মিলের পর আরও অদ্ভূত বৈপরীত্য বার্গম্যানের প্রেক্ষাপটগত পরিস্থিতির আতশী কাঁচের বাইরে গেল কী করে? সবসময়ই কেবলমাত্র অস্বস্তিকর তথ্যগুলোই তার বিবেচনার বাইরে থেকে যায়, ব্যাপারখানা কী?

২৩ অক্টোবর কিন্তু গণেশ চন্দ্র সাহার শুনানি শেষে আরও কর্মঘণ্টা ছিল এবং আদালত সাকা চৌধুরীর শুনানি শুরু করেন [১৩], কিন্তু বালীকে আর হাজির করা হয়নি। এদিন আদালত আরও বলেন যে, সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হল এবং নভেম্বরের ৫ তারিখে সমাপনী বক্তব্য গ্রহণ করা হবে। এরপর ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত ঈদের ছুটি ছিল। ৩০ তারিখ সারাদিন অন্যান্য মামলার শুনানি চলে [১৪] কিন্তু বালীকে হাজির করা হয়নি। ৩১ তারিখও সারাদিন শুনানি চলে [১৫] কিন্তু বালীকে হাজির করা হয়নি।

তারিখের ব্যাপারে নিশ্চয়ই আরও একটি গড়বড় কোনো কোনো পাঠক ইতোমধ্যে টের পেয়েছেন। বার্গম্যান তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন–

"দুদিন পর (সেই হিসেবে ২৫ তারিখ), ট্রাইব্যুনাল আসামীপক্ষকে মামলাটি বন্ধ করতে বলেন এবং ৫ নভেম্বর, ২০১২ এর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে মামলাটির উপসংহার টানতে বলা হয়। আসামীপক্ষ তাই ৩১ অক্টোবর, ২০১২ তে রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক মামলাটির উপসংহার টানার আগে বালীকে (এবং আরেকজন সাক্ষীকে) আদালতে সাক্ষ্য দেবার জন্য উপস্থিত করার অনুমতি চান।

ট্রাইব্যুনাল বলেন যে, তিনি ৪ নভেম্বরে আবেদনটি শুনবেন।"

প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে কিন্তু বার্গম্যানের নিজের ব্লগেরই মিল নেই। ব্লগ অনুযায়ী আদালত মামলা বন্ধ করা এবং ৫ তারিখ উপসংহার টানার বিষয়টি বলেন ২৩ তারিখে, ২৫ তারিখে নয়। একই ব্লগ অনুযায়ী ৩১ তারিখে বালী এবং আরেকজন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করার অনুমতি চাওয়ার কোনো ব্যাপারই ঘটেনি। বার্গম্যানের নথি অনুযায়ী সেদিন শুধুমাত্র গোলাম আজমের তদন্ত কর্মকর্তার শুনানি হয়েছিল। বালী আর গণেশ চন্দ্র সাহাকে আসলে আনার অনুমতি চাওয়া হয়েছিল, আগে আমি যেমন বলেছি, ২২ তারিখে। পরের প্রতিক্রিয়াটি লেখার সময় আশা করি বার্গম্যান আরও সতর্ক থাকবেন।

এবার তাহলে ৪ তারিখের ব্যাপারটিতে আসি। এই ঘটনাটি কোনো তৃতীয় পক্ষ থেকে জানা যায়নি। বার্গম্যানের একমাত্র সূত্র সাঈদীর আইনজীবী। এর আগে সমন ছাড়াই যখন গণেশ চন্দ্র সাহাকে শুনানির জন্য আনা হয় তখন তো তাকে অনুমতির অপেক্ষায় আসামীপক্ষের রুমে বসিয়ে রাখা হয়নি। তাহলে একই আবেদনের দ্বিতীয় সাক্ষী, যার পক্ষ পরিবর্তনের দাবিটি হুবহু একই রকম, তাকে কেন অনুমতির অপেক্ষায় আসামীপক্ষের রুমে বসিয়ে রাখা হল? গণেশ চন্দ্র সাহাকে তো মিথ্যা পরিচয়ে আদালতে প্রবেশ করানোর প্রয়োজন পড়েনি– হুবহু একই রকম প্রেক্ষাপট হওয়া সত্ত্বেও কেন তাহলে বালীর ক্ষেত্রে মিথ্যা পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন পড়ল?

বার্গম্যান নিচের মতো করে এই অনুচ্ছেদের সমাপ্তি টেনেছেন–

"এটি স্পষ্ট যে আসামীপক্ষের স্বার্থেই বালীকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। ভিডিওতে প্রদত্ত সাক্ষ্য অনুযায়ী, তিনি হয়তো সাক্ষ্য দিতেন যে সাঈদী তার ভাইয়ের হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না এবং তদন্ত কর্মকর্তার মন্তব্য মিথ্যা ছিল। রাষ্ট্রপক্ষ বেপরোয়াভাবে চেয়েছিলেন যেন এটি ঘটতে না পারে।"

আমার প্রশ্ন হল, আসামীপক্ষের স্বার্থেই যদি আদালতে বালীকে নিয়ে আসা হল তাহলে তাকে চেম্বারে বসিয়ে রাখা হল কেন? আসামীপক্ষের স্বার্থেই কি তাকে আদালতের মুখোমুখি করা উচিত ছিল না? যেমনটি গণেশ চন্দ্র সাহাকে করা হয়েছিল? বালী যে সাক্ষ্য সাঈদীর পক্ষে আর তদন্ত কর্মকর্তার বিপক্ষে দিতে চেয়েছিলেন সেই সাক্ষ্য দিয়েই তো গণেশ চন্দ্র সাহা নিরাপদে আদালত থেকে বেরিয়ে গেছেন। তাতে যদি রাষ্ট্রপক্ষের কোনো সমস্যা না থাকে তো কেন বেপরোয়াভাবে বালীর ক্ষেত্রে তা চাইবেন তারা? প্রেক্ষাপটগত পরিস্থিতির মধ্যে এত কিছু পড়ে আর যার সঙ্গে বালীর হুবহু মিল, সেই গণেশ চন্দ্র সাহার অভিজ্ঞতাটি আমরা বিবেচনায় আনব না? এ কি পেশাদার সাংবাদিকতার নমুনা?

প্রিয় পাঠক, বুঝতেই তো পারছেন আবারও আমি কী জানতে চাই!

সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ

এই জায়গায় বার্গম্যান ভাষাগত চাতুরীর আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেছেন–

"কর্তৃপক্ষের একটি অন্যতম ব্যর্থতা ছিল সে দিনের এবং তার আগের দিনের সিসিটিভি ফুটেজ অনুসন্ধানের অনুমোদন দিতে ব্যর্থ হওয়া, যাতে অপহরণের অভিযোগটির সঙ্গে প্রাসঙ্গিক কিছু তথ্য পাওয়া যেতে পারত।"

অনুমোদনটি কি কেউ চেয়েছিল? আসামীপক্ষ চেয়েছিল? না! এমনকি যে বার্গম্যান অন্য দেশে জেল থেকে, অন্য একটি সংবাদমাধ্যমের সূত্রমতে খুব সম্ভবত বেআইনি পথে, বালীর বক্তব্য এনে হাজির করলেন, তিনি নিজেও কিন্তু তথ্য অধিকার আইনের অধীনে বা অন্য কোনোভাবে অনুমতি চাননি। তাহলে অনুমোদন দিতে ব্যর্থ হওয়ার ব্যাপারটি কী? এত অনুযোগ না করে অনুমোদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে চাইলেই তো হয়! কারণ বালীর ব্যাপারে আসল সত্যটি তো আসলেই বের হয়ে আসা উচিত এবং যারা আইন ভঙ্গ করেছেন তাদের সাজা হওয়া উচিত!

বিবিসির প্রবন্ধ

এই অনুচ্ছেদের শুরুতে বার্গম্যান দাবি করেছেন আমি একটি অসত্য দাবি করেছি এবং তার সপক্ষে তিনি বিবিসির একটি বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়েছেন। সে বক্তব্যে বিবিসি নিশ্চিত করেছে যে, বালী যে বার্গম্যানকে একটি বার্তা পাঠিয়েছে এটি সত্যি। প্রিয় পাঠক, আপনারা কি একটু নিজেরা যাচাই করে দেখবেন আমার মূল প্রবন্ধে আমি এমন কোনো দাবি করেছি কিনা যে বালী বার্গম্যানকে তার বক্তব্য দেয়নি? যে কাল্পনিক দাবি আমি করিনি তা খণ্ডানোর জন্য শুধু শুধু এই প্যারাগ্রাফটির জায়গা নষ্ট করার কী দরকার ছিল?

এরপর বার্গম্যান দাবি করেছেন ঘুষ দিয়ে বার্তা পাঠানোর কথাটি মিথ্যা। এ কথা তো আমাকে প্রতিক্রিয়া হিসেবে জানানোর কিছু নেই! আমি তো বিবিসিকে উদ্ধৃত করেছি মাত্র! আমার মূল লেখার তথ্যসূত্র ধরে তাদের ওয়েবসাইটে এখনও গেলে এই তথ্যটি পাওয়া যাবে। বার্গম্যানের প্রতিবাদের পরেও বিবিসি এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য পাল্টায়নি! এখানে একটু করে আমি তুলে দিলাম।

"আমি তখন আরও একটু খোঁজখবর করি এবং গোয়েন্দা সূত্রে জানতে পারি যে দমদম জেল কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই মি. বালিকে জেরা করেছে এবং মি. বালি জেলের আধিকারিকদের জানিয়েছেন তিনি নিজেই অর্থের লোভ দেখিয়ে এক জেলরক্ষীকে দিয়ে ওই বিবৃতি বাইরে পাঠিয়েছিলেন৻"

প্রতিক্রিয়ার শুরুতে তো বার্গম্যান বলেছেন তার কথা বিশ্বাস না করলেও আমি যেন বালীর কথা বিশ্বাস করি। এখন বক্তব্য পাঠানোর পদ্ধতির ব্যাপারে আমরা কার কথা বিশ্বাস করব? বালীর না বার্গম্যানের?

সবশেষে বার্গম্যান বলেছেন বিবিসির কর্মকর্তাও স্বীকার করেছেন তাদের প্রবন্ধে সমস্যা ছিল। ভালো কথা! কী সমস্যা ছিল? ঘুষের ব্যাপারে কোন মিথ্যা দাবি করা হয়েছে? না! তাহলে কী ব্যাপারে? যেটা বলা হয়েছে তা হল বিবিসি প্রতিবেদক প্রয়োজনীয় ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট যুক্ত করেননি। যথারীতি বার্গম্যান বিবিসির কর্মকর্তার ইমেইলে থেকে শুধুমাত্র তার পছন্দের অংশটুকু অনুবাদ করে দিয়েছেন। বিবিসি কিন্তু তাকে নিশ্চিত করেছে তাদের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বালী অপহৃত হয়নি এবং এ কারণেই তারা এ ব্যাপারে সংবাদে প্রকাশিত তাদের বক্তব্য পরিবর্তন করেনি। সংবাদটির প্রথম বাক্য বার্গম্যানের অনুযোগ ও তদসংক্রান্ত সংশোধনীর পরও এখনও এ রকম–

"বাংলাদেশের একটি যুদ্ধাপরাধ মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী ভারতে ধরা পড়ার পর, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে বলেছিলেন, তিনি তার ভাই পরিতোষ বালীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সেখানে গেছেন।"

পক্ষপাতদুষ্ট, হানিকারক ও বিভ্রান্তিমূলক

বার্গম্যান তার প্রতিক্রিয়া শেষ করেছেন এভাবে–

"দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ওমরের পক্ষপাতদুষ্ট, হানিকারক ও বিভ্রান্তিমূলক প্রবন্ধটি সম্পর্কেও একই বা আরও বেশি কথা বলা যেতে পারে।"

অনুচ্ছেদ ধরে ধরে আমার বক্তব্যগুলো দিলাম। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কিছু বলতে পারলাম না। কারণ সেটি নিয়ে বার্গম্যান কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। প্রিয় পাঠক, প্রতিক্রিয়ার প্রথম বাক্যটি একটু আবার মনে করুন। আমার প্রবন্ধটি বার্গম্যানের জরিমানার উৎস হওয়ার ঝুঁকি ছিল। প্রবন্ধের কোন অংশটি? ডিবি পুলিশের ব্যাপারে বার্গম্যানের সন্দেহের কথা? সেটি সম্ভব নয়। কারণ পুলিশ যদি জিজ্ঞেস করে বার্গম্যান যুক্তি দেখাবেন এই বলে যে ব্লগে তিনি লিখে রেখেছেন এটি পুরোপুরি প্রমাণিত নয়।

তাহলে কি অপহরণের দিন সাঈদীর আইনজীবীদের বক্তব্য আমলে নেওয়া আর নিরপেক্ষ মাধ্যম, যেমন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদকের বক্তব্য আমলে না নেওয়া? তা-ও নয়, কারণ এর ব্যাখ্যা খুব সহজ। একেকজন মানুষ একেকভাবে তথ্য মূল্যায়ন করে। একটু কম-বেশি হওয়া ফৌজদারি অপরাধ নয়। তাহলে কি বালীর স্ত্রীর সাক্ষ্য থেকে সুবিধাজনক অংশগুলো বিবেচনা করা? কিংবা প্রেক্ষাপটগত পরিস্থিতি বা বিবিসি-সংক্রান্ত জটিলতা?

না! এসবের কোনোটাই ফৌজদারি অপরাধ নয়। তাহলে জরিমানার ঝুঁকিটি আসলে কোথা থেকে? এটি প্রতিক্রিয়াতে পাবেন না, যেতে হবে আপনাকে আমার লেখা মূল প্রবন্ধে। সেখানে আমি কী বলেছি একটু দেখুন!

"তাছাড়া একজন অপহৃত ব্যক্তির খোঁজ পাওয়ার প্রথম অধিকার তার পরিবারের এবং দ্বিতীয় অধিকার সেই থানার যেখানে তার নিখোঁজ হওয়ার তথ্য জিডি করে রাখা হয়েছে। জামায়াতের আইনজীবী যদি মিথ্যা নামে তাকে ট্রাইব্যুনালে ঢুকায় তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু আইনের উপর পড়াশোনা করা 'স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের' বিদেশি সাংবাদিক সেই তথ্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে কাজটি কি ঠিক করলেন?

প্রথমত, একজন নিখোঁজ ব্যক্তির খোঁজ পাওয়ার পরও পুলিশের কাছ থেকে চেপে গেলেন। আবার মিথ্যা পরিচয়ে অনুপ্রবেশের খবরও আদালতের কাছ থেকে চেপে গেলেন। এরপরও ইনি বহাল তবিয়তে বাংলাদেশে সাংবাদিকতা করে যাচ্ছেন। দারুণ ব্যাপার!"

প্রশ্ন হল, আমার প্রবন্ধে তোলা সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগের ব্যাপারটি বার্গম্যান তার প্রতিক্রিয়ায় চেপে গেলেন কেন? আমার নামে কিছু কাল্পনিক বা খণ্ডিত দাবি উল্লেখ সেগুলো খণ্ডনের চেষ্টা না করে যে কথাটি আমি আসলেই বলেছি সেটি নিয়ে কিছু বললেই বেশি ভালো হত! বালীর ব্যাপারে আমাদের অবস্থান হওয়া উচিত খুব সহজ ও স্পষ্ট– এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এটি নিশ্চিত করা সম্ভব নয় কেন বালী নিখোঁজ হয়েছে, কাজেই রাষ্ট্রের উচিত এ নিয়ে তদন্ত করা আর পেশাদার সাংবাদিকদের উচিত এ নিয়ে সম্পূর্ণ চিত্র সবার কাছে তুলে ধরা। সেই সম্পূর্ণ চিত্র যদি কোনো সিদ্ধান্তে আসতে না দেয় তাহলে অহেতুক সে ধরনের চেষ্টা থেকে বিরত থাকা।

লেখাটি শেষ করছি বার্গম্যানকে আমাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের একাদশ অনুচ্ছেদের চতুর্থ ধারাটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে–

(4) A Tribunal may punish any person, who obstructs or abuses its process or disobeys any of its orders or directions, or does anything which tends to prejudice the case of a party before it, or tends to bring it or any of its members into hatred or contempt, or does anything which constitutes contempt of the Tribunal, with simple imprisonment which may extend to one year, or with fine which may extend to Taka five thousand, or with both.

কখনও বাংলাদেশের আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে যদি তাকে জিজ্ঞেস করা হয় মিথ্যা পরিচয়ে আদালতে একজন ব্যক্তিকে প্রবেশ করানো হচ্ছে জানার পরেও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কেন আদালতে জানাল হল না তার উত্তরে বার্গম্যান কী বলবেন সেটি তার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া থেকে জানার জন্য আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।


বিশেষ কৃতজ্ঞতা: লেখাটি তৈরি করার সময় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটিজি ফোরামে আমার সহকর্মীরা তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেছেন।

তথ্যসূত্র:

[১] 'সুখরঞ্জন বালীর খোঁজে', ওমর শেহাব, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, জানুয়ারি ৯, ২০১৪

[২] 'সুখরঞ্জন বালীর খোঁজে: একটি প্রতিক্রিয়া', ডেভিড বার্গম্যান, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৪

[৩] 19 Feb 2012: Order on New Age, ডেভিড বার্গম্যান, মার্চ ৬, ২০১২

[৪] SC stays Bangla deportation, দ্য টেলিগ্রাফ, কলকাতা, ভারত, আগস্ট ৩, ২০১৩

[৫] 22 Oct 2012: Sayedee defense applications, order, ডেভিড বার্গম্যান, নভেম্বর ২২, ২০১২

[৬] ছবিগুলো আলাদা করে আমি এখানে আপলোড করে রেখেছি। তবে যে-ই এগুলো নিয়ে তদন্ত করবেন তাদের জানিয়ে রাখছি এই ছবিগুলোর মেধাস্বত্ত্ব ডেভিড বার্গম্যানের। কাজেই তার অনুমতি ছাড়া খুব প্রকাশ করা ঠিক হবে না।

[৮] প্র্রথম ছবির ফরেনসিক রিপোর্ট

[৯] দ্বিতীয় ছবির ফরেনসিক রিপোর্ট

[১০] তৃতীয় ছবির ফরেনসিক রিপোর্ট

[১১] চতুর্থ ছবির ফরেনসিক রিপোর্ট (এক্সটেনশন ভিন্ন হওয়ায় ফটোফরেনসিক ডটকমের অনলাইন টুল ব্যবহার করা হয়েছে)

http://bit.ly/1n5U0Uw

[১২] 23 Oct 2012: Sayedee final défense witness, ডেভিড বার্গম্যান, নভেম্বর ২২, ২০১২

[১৩] 23 Oct 2012: Chowdhury 16th witness cross exam, ডেভিড বার্গম্যান, নভেম্বর ২২, ২০১২

[১৪] 30 Oct 2012: Azam IO cross exam, day 4, ডেভিড বার্গম্যান, নভেম্বর ২২, ২০১২

[১৫] 31 Oct 2012: Azam IO cross exam, day 5, ডেভিড বার্গম্যান, নভেম্বর ২৩, ২০১২

ওমর শেহাব: ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড, বাল্টিমোর কাউন্টিতে কম্পিউটার সায়েন্সে পিএইচ-ডি অধ্যয়নরত; সদস্য, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটিজি ফোরাম (আইসিএসএফ)।