উপজেলা নির্বাচন: বুঝতে হবে জনমনস্তত্ব

হাসান মামুনহাসান মামুন
Published : 23 Feb 2014, 02:49 AM
Updated : 23 Feb 2014, 02:49 AM

কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে হেরে গেলে সংশ্লিষ্টরা বলে থাকেন, এটা তো নির্দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত নির্বাচন! কিন্তু আমরা জানি, আইনে যা-ই লেখা থাকুক– স্থানীয় নির্বাচনগুলো কমবেশি দলীয় ভিত্তিতেই হয়ে থাকে। রাজনৈতিক দল প্রার্থী 'মনোনয়ন' দিতে না পারলেও তাদের সমর্থিতরা নির্বাচনে অবতীর্ণ হন বিপুলভাবে। ভোটাররাও তাদের নির্বাচিত করে থাকেন অধিকাংশ ক্ষেত্রে। মিডিয়াও প্রার্থীদের জয়-পরাজয়কে দলীয় ভিত্তিতে দেখাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে আপত্তি করতে দেখা যাচ্ছে না নির্বাচন কমিশনকেও (ইসি)।

এ প্রেক্ষাপটে একটা প্রশ্ন জোরেশোরেই উঠছে যে, স্থানীয় নির্বাচনগুলো দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হওয়াই ভালো কিনা। অনেক গণতান্ত্রিক দেশেই এমন বিধান রয়েছে। তারা সবাই আমাদের চেয়ে কম গণতান্ত্রিক বলা যাবে না।

কথাটা তোলা হল এ জন্য যে, উপজেলা নির্বাচনের প্রথম পর্বে পরাজিত হওয়ার পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক দায়িত্বশীল নেতাকে বলতে দেখা গেল, এটা তো নির্দলীয় নির্বাচন। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরও তারা এমনটি বলেছিলেন। এতে দলীয় নেতা-কর্মীরাও আশ্বস্ত হয়েছিলেন বলে মনে হয় না। তারা জানেন বাস্তবতাটা কী। এটা অবশ্য বলা যাবে, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের চেয়ে ক্ষমতাসীন দল সমর্থিতরা ভালো করেছেন উপজেলায়। তবু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলছেন, মানসম্পন্ন নির্বাচন হলে তারা '৯৫ শতাংশ' আসনে জিততেন।

তাও ভালো, ৫ শতাংশ রেখেছেন আওয়ামী লীগের জন্য! সমস্যা হল, আমাদের উচ্চ পর্যায়ের ও দায়িত্বশীল বলে বিবেচিত নেতারাও ঢালাও মন্তব্য করেন। এটা কি দলনেত্রী শুনতে চান বলে? নাকি দলীয় কর্মীরা এতে উজ্জীবিত হন? উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি যে ফল পেয়েছে, তাতে অবশ্য দলটি উজ্জীবিত হবে। তাদের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর জাতীয় নির্বাচন সেরে ফেলে সরকার যেভাবে গুছিয়ে বসেছে, এতে বিএনপি নেতা-কর্মীরা বলা যায় নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছিলেন।

তৃণমূল পর্যায়ে প্রশাসনের দিক থেকেও একটা বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করছিলেন তারা। এটা বেশি মোকাবেলা করছে অবশ্য জামায়াতে ইসলামী। এরই মধ্যে দেশের ৯৭ উপজেলায় যে নির্বাচন হয়ে গেল, তাতে কিন্তু জামায়াতও ভালো করেছে।

একটু গুছিয়ে খবর পরিবেশন করে এমন একটি সংবাদপত্র জানাচ্ছে পূর্ববর্তী নির্বাচনে নির্দিষ্ট এ উপজেলাগুলোয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিতরা কে কেমন করেছিলেন। সে অনুযায়ী, জামায়াত আগে ৮টি চেয়ারম্যান পদে জয়ী হলেও এবার জিতেছে ১২টিতে। বিএনপি তার বিজয় তিনগুণ করে ফেলেছে এবার। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে প্রায় অর্ধেক। এতটা পরাজয় তাদের বুঝদার নেতারাও নাকি আঁচ করতে পারেননি।

উপজেলা পরিষদে ভাইস-চেয়ারম্যান পদে কোন দল সমর্থিতরা কেমন করেছেন, সে খবর কিন্তু মিডিয়ায় ভালোভাবে আসেনি। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ফল প্রচারের সময়ও এটি ঘটতে দেখা গিয়েছিল। কাউন্সিলরদের জয়-পরাজয়ের খবর তেমন মিলছিল না। সবাই মেয়র নিয়ে ব্যস্ত!

একটি বহুল প্রচারিত ইংরেজি দৈনিকে এ সংক্রান্ত খবর অবশ্য ভালোভাবেই পেয়ে যাই। তাতে দেখা গেল, ভাইস চেয়ারম্যান (সাধারণ) পদে জামায়াতিরা প্রায় ধরে ফেলেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিতদের। আওয়ামী লীগ ২৭ আর জামায়াত ২১! বিএনপি এ ক্ষেত্রেও এগিয়ে।

এ মাসের ২৭ তারিখে দ্বিতীয় পর্বে আরও বেশি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার ফলেও কি বজায় থাকবে একই ধারা? স্বল্প বিরতিতে অন্যান্য পর্বের নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে। এতে শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়াবে পরিস্থিতি?

সরকার পক্ষের উচিত হবে না নেতিবাচক ফলের আশঙ্কায় পরবর্তী নির্বাচনগুলোয় এমন কিছু করা, যাতে তারা তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন। এর চেয়ে নির্বাচনে হেরে যাওয়া ভালো। পরাজয় সহনীয় পর্যায়ে রাখার চেষ্টা অন্তত তারা করতে পারেন। এ নির্বাচনে পরাজিত হলে তো তাদের রাষ্ট্রক্ষমতা ছাড়তে হচ্ছে না। তবে পরাজয় লজ্জাজনক হয়ে উঠলে বিএনপি-জামায়াত জোটের মধ্যবর্তী নির্বাচন দেওয়ার দাবি একটা ভিত্তি পাবে।

একতরফা নির্বাচন করে সরকার গুছিয়ে বসার মাস দেড়েক পর অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে কোন দল সমর্থিতরা কেমন করলেন, কেন এমনটি হল– তার বিশ্লেষণ চলতে থাকবে এখন। তবে দুর্ভাগ্যজনক হল, উপজেলা নির্বাচন হলেও উপজেলা ব্যবস্থা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে আলোচনা প্রায় অনুপস্থিত।

প্রধান রাজনৈতিক দলের কোনোটাই চায় না স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়ে উঠুক। স্থানীয় সরকার, বিশেষত উপজেলা ব্যবস্থা বিষয়ে কিছুটা সিরিয়াস জাতীয় পার্টি (জাপা) আবার প্রথম পর্বের এ নির্বাচনে খুব খারাপ করেছে। তাদের ফল উল্লেখ না করাই ভালো।

জাপার এভাবে প্রত্যাখ্যাত হওয়াটা আওয়ামী লীগের জন্যও কিছুটা বিব্রতকর। এদের তারা সরকারের নিয়েছেন; সংসদে বানিয়েছেন বিরোধী দল। ১৯ ফেব্রুয়ারির উপজেলা নির্বাচনে কিন্তু দেখা গেল, সহযোগী দল হিসেবে জামায়াতের পারফরম্যান্স ভালো। বিএনপির সঙ্গে সঙ্গে তারাও কম উঠে আসেনি। কোনো কোনো জেলার সব উপজেলা (প্রথম পর্বের) চেয়ারম্যান পদ দু'দল মিলে একেবারে ভাগযোগ করে নিয়েছে। এমনটি ঘটেছে বগুড়ায়। সেখানে জামায়াত যেভাবে উঠে এসেছে, তা বিএনপির জন্যও দুশ্চিন্তার হতে পারে।

মানিকগঞ্জে চারটি উপজেলা চেয়ারম্যান পদই আবার দখল করে নিয়েছেন বিএনপি সমর্থিতরা। কোনো কোনো জেলায় (যেমন বরিশাল) আওয়ামী লীগও এমন পারফর্ম করেছে। তবে এদেরটি আলোচিত হবে না সার্বিকভাবে খারাপ করেছে বলে।

দলটির খতিয়ে দেখা প্রয়োজন, ঠিক কী কী কারণে তারা এতটা খারাপ করল প্রথম পর্বের উপজেলা নির্বাচনে। প্রার্থী বাছাইয়ে ভুলভ্রান্তি সব দলই কমবেশি করেছে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও তৃণমূলের পছন্দে দ্বন্দ্ব থাকে সবসময়। জাতীয় নির্বাচনেও এটি লক্ষণীয়। দলে গণতন্ত্রের চর্চা না থাকাটাও এতে প্রকাশ পাচ্ছে। কিন্তু এ সংস্কৃতি বদলাচ্ছে না। এর সঙ্গে অন্যান্য কারণ মিলেমিশে যে পক্ষ নির্বাচনে হেরে যাচ্ছে, তাদের নিয়ে একটু বেশি আলোচনা হচ্ছে– এটাই যা পার্থক্য।

ঠিকঠাক প্রার্থী দিয়ে আর সব দিক গুছিয়ে নির্বাচনে লড়তে পারলে আওয়ামী লীগ কি আরও ২৫ শতাংশ উপজেলায় জিততে পারত? তাহলেও প্রথম পর্বের উপজেলা নির্বাচনে জয়ী হত বিএনপি-জামায়াত। এ দুটি দলও কিন্তু সব উপজেলায় 'একক প্রার্থী' দেয়নি বা সংঘবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়নি। বিশেষত বিএনপির মধ্যে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। এমন কিছু উপজেলা কি রয়েছে, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে বিএনপি-জামায়াতে?

এটাও খতিয়ে দেখা দরকার, প্রথম পর্বের উপজেলা নির্বাচনে কোন দল সমর্থিতরা কত ভোট পেয়েছেন। জোটের রাজনীতি কার্যকর বলে দলভিত্তিক ভোট বের করা কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। অন্তত এ বিষয়ে একটা ধারণা করা সম্ভব।

নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে ভোট ভালোই পড়েছে। ইসি বলছে, ৬২ দশমিক ৪৪ শতাংশ। নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম বা গোলযোগও হয়নি। বিএনপি-জামায়াত সমর্থিতরা অবশ্য শেষ মুহূর্তে নির্বাচন বর্জন ও হরতাল ডেকেছিলেন কিছু ক্ষেত্রে। এর কোনো দরকার ছিল না। তাছাড়া এটা পুরনো ও অকার্যকর কৌশল। এটা বুমেরাং হতেও দেখা যায়।

ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা ঠিকই বলেছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থীদের 'ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি' একটা বড় বিষয়। তাহলে তো খতিয়ে দেখা দরকার, প্রথম পর্বের উপজেলা নির্বাচনে তারা মন্দ ভাবমূর্তির প্রার্থী বেশি বাছাই করেছিলেন কিনা। দেখা দরকার, ভালো ভাবমূর্তির অনেক চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীও হেরে গেছেন কিনা। তাদের কেউ বিপুলভাবে হেরে গিয়ে থাকলে সেটি হবে দুর্ভাগ্যজনক। দলীয় কোন্দল ছাড়াও এমনটি ঘটতে পারে স্রেফ রাজনৈতিক কারণে। বগুড়ায় ক্ষমতাসীন দলের যারা চেয়ারম্যান পদে হেরেছেন, তারা পরাস্ত হয়েছেন বিপুল ভোটে। এর কারণ মনে হয় রাজনৈতিক। বগুড়ার যেসব এলাকায় তীব্র সরকারবিরোধী আন্দোলন হয়েছিল, সেগুলোয় নাকি ক্ষমতাসীনদের পরাজয়ও হয়েছে কঠিন।

আন্দোলনে সরকারের পতন না ঘটতে পারে, সে অর্থে সফল না হতে পারে আন্দোলন, কিন্তু এতে জনসমর্থন বাড়বে না, তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। যাদের বাইরে রেখে জাতীয় নির্বাচন করে ফেলা হল, তাদের প্রতি সহানুভূতিরও সৃষ্টি হতে পারে।

নির্বাচন ও সরকার গঠনের পর ৫ জানুয়ারির আগে সহিংস আন্দোলন রচনার দায়ে যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, এটি ঘটতে পারে তাদের ক্ষেত্রেও। সম্প্রতি গাইবান্ধা থেকে আসা এক রিকশাচালকের উক্তি এখানে প্রণিধানযোগ্য। চল্লিশোর্ধ সে লোকটি এ লেখককে বলেছিল, 'সরকার মনে হয় ইসলাম রাখবে না'! কেন? তার উত্তর, 'আমাদের এলাকায় জামায়াতে ইসলামীর ওপর যা হচ্ছে…' ইত্যাদি। স্পষ্টতই সে যৌথবাহিনীর অভিযানের বিষয়ে তার জোরালো আপত্তির কথা বলছিল।

সহিংস আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবশ্যই নিতে হবে সরকারকে। তবে খেয়াল রাখা চাই, এ ক্ষেত্রে যেন নিরীহের হয়রানি না ঘটে। এটা নিশ্চিত করা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। এ-ও ঠিক, সহিংসদের প্রতি একশ্রেণির মানুষের সহানূভূতি রয়েছে। এদের হয়তো তারা ক্রিমিনাল বলেও মনে করে না। ৫ জানুয়ারির আগে বগুড়া, গাইবান্ধা, সাতক্ষীরাসহ দেশের কোনো কোনো এলাকায় এমন ধারায় গোলযোগ ঘটেছে যে, মনে হয়েছে ওইসব এলাকা তাদের 'মুক্তাঞ্চল'। গোলযোগ থেমে যাওয়ার পর পুলিশ ব্যবস্থা নিতে গিয়েও সেসব এলাকায় সমস্যায় পড়েছে। দৃশ্যতই অসহযোগিতার মুখে পড়েছে তারা। ব্যবস্থা গ্রহণ শেষে চলে এলে আবারও ঘটেছে সেখানে সহিংসতা।

ওইসব এলাকায় অবস্থিত উপজেলায় সরকার সমর্থিতরা হেরে গিয়ে থাকলে, এমনকি বিপুলভাবে হেরে গেলে অবাক হওয়া যাবে না। বুঝতে হবে, সেটা রাজনৈতিক পরাজয়। এ ক্ষেত্রে এমনটিও ঘটেছে যে, বিএনপির এলাকায় ঢুকে পড়েছে জামায়াত। 'র‌্যাডিকেলাইজেশন' বা চরমপন্থার দিকে এগোচ্ছে ওইসব অঞ্চল। মধ্য ডানপন্থায়ও পোষাচ্ছে না তাদের। অবাক হওয়া যাবে না, যদি দেখা যায় পরবর্তী পর্বের নির্বাচনগুলোয়ও একই চিত্র উঠে আসছে।

নিজ নিজ বৃত্তে একই ধরনের লোকজনের সঙ্গে মিশে আমরা অনেকেই দেশের অবস্থা বুঝতে চাই বা এ নিয়ে মন্তব্য করি। তারা অবাক হয়ে যাই ভিন্ন চিত্র দেখতে পেলে। হতাশাগ্রস্তও হই। মুশকিল হল, পরিস্থিতি দৃশ্যমান হওয়ার আগ পর্যন্ত বলেও বোঝানো যায় না এদের। প্রথম পর্বের উপজেলা নির্বাচনের ফল তাদের চোখ খুলে দিক। তারা যেন বুঝতে চেষ্টা করেন জনমনস্তত্ত্ব ও এর গতিপ্রকৃতি।

এ নির্বাচনে জামায়াতের জয়ের মাত্রা বেড়েছে; তার ভোটও কি বাড়েনি? অথচ সুনির্দিষ্ট অভিযোগে আমরা অনেকেই দলটিকে নিষিদ্ধ করতে চাইছি। নিষিদ্ধ করে দিলেই দলটি নেই হয়ে যাবে না। দমন অভিযান পরিচালনা করলেই তারা প্রান্তিক হয়ে পড়বে না। এতে উল্টো তারা শক্তিশালীও হয়ে উঠতে পারে। সাংঘাতিক ব্যাপার হল, গাইবান্ধার ওই রিকশাচালকের মতো অনেকেই হয়তো মনে করছে, জামায়াতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ মানে ইসলামের বিরুদ্ধে যাওয়া!

প্রথম পর্বের উপজেলা নির্বাচনের আগ মুহূর্তে আল-কায়েদা নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরির বাংলাদেশ বিষয়ক যে বক্তব্য দেশে খুব প্রচার পেয়েছে, তার প্রভাবও কি পড়েনি নির্বাচনে? একে যেন কেউ কষ্টকল্পনা না ভাবেন। দেশে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রভাব বেড়েছে সন্দেহ নেই। এর বিপরীত পক্ষও বসে নেই। প্রথম পক্ষের প্রভাব নতুন করে বাড়তে দেখে জনগণের একটি বড় অংশে এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াও হতে পারে।

একতরফা নির্বাচন করে যারা ক্ষমতায় বসেছেন, এ বিষয়ে তাদের সতর্কতা জরুরি। বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের ব্যর্থতায় তারা যেন ভেবে না বসেন, এভাবেই পাঁচটি বছর পার করে দেওয়া যাবে। গত দেড় মাসে সুশাসনেও তারা দৃষ্টি দিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে না। দুর্বল ম্যান্ডেট নিয়ে এলে সুশাসনে বেশি করে দৃষ্টি দিতে হয় বৈকি। দ্রুত একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দিতে হতে পারে, এমনটি ধরে নিয়ে নিজেদের গুছিয়ে আনাটাও জরুরি। আপ্তবাক্য আওড়ে সময় পার করার বদলে বাড়াতে হবে রাজনৈতিক কাজ।

সরকার এসব শুনতেও প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে না কিন্তু।

হাসান মামুন: সাংবাদিক, কলামিস্ট।