বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন সিনেটের ক্ষমতা আসলে কদ্দুর

শওগাত আলী সাগর
Published : 18 Feb 2014, 03:20 AM
Updated : 18 Feb 2014, 03:20 AM
একটা সময় ছিল যখন বিশ্ব ব্যাংকের কোনো কাগজের সূত্র ধরে রিপোর্ট করতে পারা অর্থনৈতিক সাংবাদিকতার আভিজাত্য হিসেবে বিবেচনা করা হত। ঢাকার অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের হাতেগোনা কয়েকজন, বলা যায় দু-তিন জনই ক'দিন পর পর বিশ্ব ব্যাংকের দলিল ধরে রিপোর্ট করতেন। আর সেই রিপোর্ট নিয়ে অন্যান্য পত্রিকায় চিফ রিপোর্টার বা বার্তা সম্পাদকরা নিজেদের রিপোর্টারদের তুলোধুনো করতেন।

এখন অবশ্য সে দিন আর নেই। বিশ্ব ব্যাংকের দলিল-দস্তাবেজ পেতেও যেমন সাতঘাটের পানি ঘোলা করতে হয় না, মিডিয়াগুলোও এখন আর বিশ্ব ব্যাংকের সবকিছুকেই গুরুত্বপূর্ণ খবর মনে করে না।

তবে হালে পশ্চিমা দেশগুলোর নানা পর্যায়ের প্রতিনিধিদের বক্তৃতা-বিবৃতি, পার্লামেন্টের আলোচনা-বিতর্ক অধিকাংশ মিডিয়ার কাছেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের রাজনীতি, নির্বাচন নিয়ে কোথায় কী আলোচনা হল, বিতর্ক হল সেটার জন্য বড় আয়তনের স্পেস দিতেও মিডিয়াগুলো কার্পণ্য করে না। আর রাতের টকশোগুলোতে কোন দেশের কোন কমিটিতে কয় মাসের ব্যবধানে কয় দফা শুনানি হল সে কথা বলতে বলতে অনেক সময় খোদ আলোচকের চেহারায়ও আতংকের ছাপ দেখা যায়।

পশ্চিমাদের এই ধরনের আলোচনা বা বিতর্কের যে গুরুত্ব নেই, তা কিন্তু নয়। বিশেষ করে ৫ জানুয়ারির প্রধান বিরোধী দলবিহীন নির্বাচনের পর উন্নয়ন সহযোগী ছাড়াও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশ নিয়ে কী ভাবছে সেটা জানার জন্যই পশ্চিমাদের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার দিকে আমাদের নজর রাখা দরকার। সমস্যা হচ্ছে, অধিকাংশ সময়েই পশ্চিমাদের বক্তৃতা-বিবৃতির খণ্ডিতাংশ আমাদের মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। যে রিপোর্টার রিপোর্টটি করছেন কিংবা যে মিডিয়ায় খবরটি প্রকাশিত হচ্ছে, তার বা তাদের মতাদর্শগত অবস্থানের প্রতিফলন ঘটাতে গিয়ে প্রায়শই আসল বক্তব্য হারিয়ে যায়।

তাই বলে পশ্চিমা রাজনীতিবিদদের বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা, বিতর্ক কিংবা শুনানিকেই পরিত্রাণের পথ ভেবে তাদের ত্রাতা হিসেবে দেখার মানসিকতাটা বদলানো জরুরি।

শওগাত আলী সাগর: দৈনিক প্রথম আলো'র সাবেক বিজনেস এডিটর; টরন্টো থেকে প্রকাশিত নতুনদেশ ডটকম-এর প্রধান সম্পাদক।