শ্যাম ও কুল সংকটে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

মুজতবা হাকিম প্লেটো
Published : 8 Feb 2014, 12:04 PM
Updated : 8 Feb 2014, 12:04 PM
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি ছাত্রবিক্ষোভ হয়েছে। গণমাধ্যমে ছাত্রছাত্রীর বিশাল সমাগম দেখে ক্যাম্পাসটি কেমন চেনা চেনা লাগে। আমরা যখন এখানে পড়তাম তখনও বড় বড় মিছিল-সভা হত। তবে আমাদের সময়ে প্রধান ইস্যু ছিল, 'দেশে গণতন্ত্র চাই'। ছাত্রদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট দাবি প্রাধান্য পেত না। ছাত্র-স্বার্থ নিয়ে আন্দোলন হয় না কেন, এ নিয়ে সংগঠনগুলোর সমালোচনাও হত। তবে ছাত্রসমাজের মেজাজ তখন জাতীয় রাজনীতিতে এমনভাবে গাঁথা ছিল যে অন্য কিছু পাত পেত না।

দু'যুগ আগে আমাদের মাসিক ফি সম্ভবত ১০ টাকা ছিল, এখন যা ১২টাকা। যদি ১৯৭০ সালকে ভিত্তি-বছর ধরে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তুলনা করে শিক্ষার্থীর টিউশন ফি-র হিসেব কষা হয় তবে বোঝা যাবে, আসলে স্বাধীনতার পর শিক্ষাব্যয় কোন দিকে এগিয়েছে। দু টাকা, চার টাকা ফি বাড়া বা কমা নিয়ে লেখার কোনো আগ্রহ আমার নেই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন যে আন্দোলন হচ্ছে তাতে ছাত্রসমাজ এবং তাদের প্রতিপক্ষ বনে যাওয়া শিক্ষকসমাজ, উভয় পক্ষই সঠিক পথে এগুচ্ছেন কিনা তা নিয়ে আমার সংশয় রয়েছে। রাবি আমাদের কাছে শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই নয়, আমাদের অনুরাগের 'মতিহার' এটি। আর সেই মতিহার এক গভীর সংকট সৃষ্টি হয়েছে। চলতি আন্দোলনের সফলতা বা বিফলতায় যার সমাধান দেখছি না।

এবারের আন্দোলনের মূল কথা– শিক্ষার 'বাণিজ্যিকীকরণ' চলবে না। ধ্বনিটি নতুন নয়। বেশক'টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধ্বনি দিয়ে আন্দোলন হয়েছে। সে সব জায়গায় কিছু কিছু সফলতাও মিলেছে। তবে কেন জানি ধ্বনিটি বড়ই সরলভাবে দেওয়া হয়। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বলতে ঠিক কতটুকুন তারা বোঝান তা বিচারের বিষয়।

ছাত্রসমাজের দাবি, তাদের উপর নতুন করে কোনো ফি চাপানো যাবে না। যে ফি চালু রয়েছে তা তাহলে ন্যয়সঙ্গত বলেই তারা স্বীকার করছে কি? আসলেই কি তাই? এর সঙ্গে সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু করা যাবে না এমন একটি নতুন হ্যাপা যুক্ত হয়েছে। পাঠকের কথা মনে রেখে সহজ কথায় এই সান্ধ্যকোর্সকে বোঝাতে হলে বলতে হয়, দিনের বেলা নিয়মিত শিক্ষার্থীরা ১২ টাকা ব্যয়ে যে লেখাপড়া করছে, সন্ধ্যেবেলায় আলাদা কোর্সে সে লেখাপড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে পড়বে ইচ্ছুক অন্য শিক্ষার্থীরা।

কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণাটি, শিক্ষকসমাজ হারাবেন স্বাধীনতাও।