আওয়ামী লীগের কৌশলগত বিজয় ও বিএনপির বিপর্যয়

আমানুল্লাহ কবীর
Published : 2 Feb 2014, 10:09 AM
Updated : 2 Feb 2014, 10:09 AM
প্রথম পর্ব

স্বাধীনতার পর থেকেই আমাদের দেশে গণতন্ত্র নিয়ে নানা 'পরীক্ষা-নিরীক্ষা' চলে আসছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের রাজনীতিবিদরা কোনো টেকসই গণতান্ত্রিক কাঠামো দাঁড় করাতে পারেননি। যে কারণে সবসময়ই Regime change বা সরকার পরিবর্তন প্রক্রিয়া রক্তপাতহীন হয়নি। কখনও কম, কখনও বেশি রক্তপাতের বিনিময়ে সেই পরিবর্তন ঘটেছে, এটাই পার্থক্য। একটা স্বাধীন জাতির জন্য বিয়াল্লিশ বছর কম সময় নয়, কিন্তু ভঙ্গুর গণতন্ত্রের কারণে এই সুদীর্ঘ সময়েও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন সম্ভব হয়নি।

৫ জানুয়ারি যে নির্বাচন হয়ে গেল, তা এই ভঙ্গুর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থারই অবিচ্ছিন্ন অংশ। সরকার পরিবর্তনের প্রক্রিয়া এবারও রক্তপাতহীন ছিল না। শতাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন, শত শত মানুষ আহত হয়েছেন, পেট্রোল বোমায় পুড়ে গেছেন গাড়ির চালক ও যাত্রী, ঘরবাড়ি, যানবাহন, স্কুলে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর হয়েছে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিন্দুদের বাড়িতে আক্রমণ হয়েছে, আতংকে তারা ভিটেমাটি ছেড়ে পালিয়েছেন। সশস্ত্র আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীও ছিল বেপরোয়া। আমাদের ইতিহাসে নির্বাচন কেন্দ্র করে এত সহিংসতা অতীতে ঘটেনি। অর্থাৎ গণতন্ত্রের ভঙ্গুর দশা কেমন উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে, এটা তার দৃশ্যমান উদাহরণ।

ফলে কেবল গণতন্ত্রই ঝুঁকির মুখে পড়েনি, দেশও নতুন করে ঝুঁকির মুখে পড়েছে। নির্বাচনের পর সাধারণত স্বস্তি ও শান্তি নেমে আসে, কিন্তু এবারের নির্বাচনের পর অস্বস্তি ও আশংকা বৃদ্ধি পেয়েছে। নির্বাচনের আগে মানুষের মনে যে প্রশ্ন ছিল, নির্বাচনের পরও সে প্রশ্নই থেকে গেছে– এরপর কী হবে? মানুষের মনে এ প্রশ্ন থেকে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। ১৯৯১ সাল থেকে (১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ছাড়া) ২০০৮ সালের নির্বাচনগুলো নিয়ে কমবেশি বিতর্ক থাকলেও সাধারণভাবে দেশে-বিদেশে যে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল, এবারের নির্বাচন তার ব্যতিক্রম। ওই নির্বাচনগুলোর ফলে দেশে নানা চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্যে যে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত ছিল, তা এক ধরনের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সৃষ্টি করেছিল যা দেশকে বর্হিবিশ্বে 'ইমার্জিং ইকোনমিক টাইগার' (Emerging economic tiger) হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। এই টাইগার এবার খাঁচায় আটকে গেল।

আমাদের রাজনীতিবিদদের মনে রাখা দরকার, সাম্প্রদায়িকতা ইস্যুটি কেবল বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই সীমাবদ্ধ নয়, তা সীমান্তের ওপারে প্রতিবেশি ভারতেও ত্বরিৎ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।


[দ্বিতীয় পর্বে সমাপ্য]

আমানুল্লাহ কবীর: সাংবাদিক ও কলামিস্ট। বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর ডটকমের সিনিয়র এডিটর।