শাহ এএমএস কিবরিয়া: যুক্তি ছিল যাঁর শক্তির উৎস

বিভুরঞ্জন সরকারবিভুরঞ্জন সরকার
Published : 21 Sept 2017, 11:49 AM
Updated : 27 Jan 2014, 03:57 AM

সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এএমএস কিবরিয়ার নবম মৃত্যুবার্ষিকী ২৭ জানুয়ারি। দেখতে দেখতে কালের গর্ভে হারিয়ে গেল আট বছর। এই দীর্ঘ সময়েও কিবরিয়া হত্যারহস্য উন্মোচিত হল না। প্রকৃত ঘাতকরা চিহ্নিত বা তাদের শাস্তির ব্যবস্থা হল না। বিষয়টি দুঃখ ও লজ্জার।

এই সময়কালে একাধিকবার সরকার পরিবর্তন হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পর এসেছে সামরিক বাহিনী প্রভাবিত বিশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তারপর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের সরকার। এ বছর ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পরও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সঙ্গত কারণেই তদন্তের নামে টালবাহানা হয়েছে। কিন্তু তার পরের সরকারগুলোর সময়ও তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর কিবরিয়া হত্যা মামলার স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত হবে বলে অনেকেই আশা করেছিলেন। কিন্তু মানুষের এই আশা পূরণ হয়নি।

২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জে নিজের নির্বাচনী এলাকায় একটি সমাবেশে যোগ দিতে গিয়ে গ্রেনেড হামলার শিকার হয়েছিলেন শাহ আবু মোহাম্মদ শামসুল কিবরিয়া– শামস কিবরিয়া নামেই যিনি বেশি পরিচিত ছিলেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ও বিনা চিকিৎসায় কয়েক ঘণ্টা অশেষ যন্ত্রণা সহ্য করে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

কিবরিয়া সাহেবের এই মর্মান্তিক মৃত্যুর পর ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পক্ষ থেকে যে শীতল প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছিল, তাতেই বোঝা গিয়েছিল যে, ঘাতকদের ধরা তো দূরের কথা বরং তাদের আড়াল করার চেষ্টাই সরকার করবে। বাস্তবেও তাই হয়েছে। বিএপি নেতারা এখন অনেক বড় বড় কথা বলেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিরোধী দল দমনের অভিযোগ তোলেন। কিন্তু তাদের নিজেদের শাসনামলে আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতা-কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার কথা বেমালুম ভুলে যান।

শাহ এএমএস কিবরিয়া ছিলেন সব অর্থেই একজন সফল মানুষ। তাঁর জীবন ছিল নানা ধরনের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। বিদেশে কূটনীতিকের দায়িত্ব পালন করেছেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, পররাষ্ট্র সচিব, সর্বশেষ জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল পদমর্যাদায় এসকাপের নির্বাহী সচিব হিসেবে কাজ করেছেন। দীর্ঘ চাকরিজীবনে অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন, অনেক বিখ্যাত মানুষের সান্নিধ্যে এসেছেন। নানা দেশের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করেছেন কাছ থেকে। তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনের কিছু খণ্ডচিত্র তুলে ধরেছেন আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ 'পেছন ফিরে দেখা'য়।

চাকরিজীবন থেকে অবসর নিয়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়েও তিনি সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন। প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে দীর্ঘদিন যাঁর অবস্থান ছিল অনেক দূরে, তিনি রাজনীতিতে এসে খুব সহজেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পেরেছিলেন। কীভাবে সেটা সম্ভব হয়েছিল? কারণ তিনি রাজনীতিতে এসেছিলেন একটি অঙ্গীকার নিয়ে, আদর্শবোধ তাড়িত হয়ে। ব্যক্তিগত লাভালাভের হিসেবনিকেশ সেখানে ছিল না।

বুদ্ধিমত্তা ও চমৎকার বিশ্লেষণ ক্ষমতার গুণে তিনি দ্রুতই আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নিজের অবস্থান শক্ত করে নিয়েছিলেন। তাঁর মতো একজন মেধাবী মানুষ রাজনীতিতে যোগ দেওয়ায় রাজনীতিতে সুস্থ ধারা ফিরে আসার উজ্জ্বল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করে সে সম্ভাবনার অপমৃত্যু ঘটানো হয়েছে। এটা আমাদের রাজনীতির এক কলঙ্ক।

২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর, দেশে হত্যা ও খুনের যে রাজনীতি শুরু হয় তাতে শাহ এএমএস কিবরিয়া খুবই উদ্বিগ্ন হয়েছিলেন। দেশটাকে উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, সেটা ভেবে তিনি অস্বস্তি বোধ করতেন। দেশবাসীর মনোযোগ আকর্ষণের জন্য এ নিয়ে তিনি প্রচুর লেখালেখিও করেছেন।

তিনি ছিলেন একজন যুক্তিবাদী মানুষ। তাঁর সঙ্গে তিন বছর ঘনিষ্ঠভাবে সাপ্তাহিক 'মৃদুভাষণ'-এ কাজ করার সুযোগ আমার হয়েছিল। তখন নানা সময় দীর্ঘ একান্ত আলাপচারিতায় বুঝেছি তিনি কত বড়মাপের মানুষ ছিলেন। পরনিন্দা-পরচর্চা পছন্দ করতেন না। ক্ষুদ্রতা-সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে ছিলেন। আওয়ামী লীগের সবকিছুই ভালো এমন অন্ধত্ব তাঁর মধ্যে ছিল না।

তবে দেশে গণতান্ত্রিক ও সেক্যুলার রাজনীতির ধারা বিকশিত ও শক্তিশালী করতে হলে, আওয়ামী লীগের বিকল্প কোনো শক্তি দাঁড়ানোর আশু কোনো সম্ভাবনা আছে বলেও তিনি মনে করতেন না। কাজেই অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম জোরদার করার জন্য আওয়ামী লীগের শক্তিবৃদ্ধির ওপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করতেন।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলার পর তিনি শেখ হাসিনার জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে খুবই বিচলিত বোধ করতেন। আওয়ামী লীগকে ধ্বংস বা একটি 'মাইনর' পার্টিতে পরিণত করার এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে আওয়ামী লীগবিরোধী সব শক্তি এক হয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নেতৃত্বে কাজ করছে বলে তিনি মনে করতেন।

এই অবস্থা মোকাবেলার জন্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক তৎপরতাটা যতটা জোরদার হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করতেন বাস্তবে সে রকম হচ্ছিল না। এ নিয়েও তার মধ্যে কিছু অস্বস্তি ছিল। দলের ভেতর বিভিন্ন স্থানে দলাদলি ও উপদলীয় কোন্দল দেখে তিনি কষ্ট পেতেন। ঐক্যবদ্ধ না থাকলে যে বিজয় ধরে রাখা কিংবা অর্জন করা সম্ভব নয়– এটা আওয়ামী লীগের কলহপ্রিয় নেতারা কেন বোঝেন না, সে প্রশ্ন তাঁর মনে ছিল। অবশ্য জোট সরকারের নিষ্ঠুর জুলুম-নির্যাতন উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যেভাবে রাজপথে লড়াই করেছে তাতে তিনি কর্মীদের সাহস ও আদর্শনিষ্ঠার প্রশংসা করতেন সবসময়।

জোট সরকার যে বাংলাদেশকে উল্টোপথে নিয়ে যাচ্ছিল সেটা শাহ এএমএস কিবরিয়া বেশ ভালোভাবেই বুঝেছিলেন। মৃত্যুর আগের রাতে তিনি একটি লেখা শুরু করেছিলেন, যা অসমাপ্ত অবস্থায় তাঁর লেখার টেবিলে পাওয়া গেছে। 'বাংলাদেশের সামাজিক বিবর্তন কি পশ্চাৎমুখী' শিরোনামের ওই লেখায় তিনি স্পষ্টভাবেই বলেছেন, ''১৯৭১ সালে যখন এ দেশের মানুষ জীবন বাজি রেখে সংগ্রাম করেছে, তখন তারা স্বাধীনতা পেয়েছে, পেয়েছে ধর্মান্ধতার সেই নিগড় থেকে মুক্তি! কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে, ততই দেখা যাচ্ছে ধর্মান্ধতার নাগপাশ শক্তভাবে বেঁধে ফেলেছে। সমাজ আধুনিকতার বদলে পশ্চাৎমুখী হয়ে মধ্যযুগীয় আচার-আচরণের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।''

দেশের এই পশ্চাৎগতি নিয়ে দূরদর্শী রাজনীতিবিদ শাহ এএমএস কিবরিয়া যথেষ্ট চিন্তিত ছিলেন। এ থেকে উত্তরণের উপায় নিয়েও তিনি ভাবতেন। এ ব্যাপারে তাঁর কিছু সুনির্দিষ্ট পরামর্শ ছিল। একের পর এক আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতাদের হত্যা এবং জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার অপচেষ্টা যে আওয়ামী লীগকে দুর্বল করে ওই পশ্চাৎমুখী রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করারই ষড়যন্ত্র, এটা তিনি একাধিক লেখায় উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তিনি সম্ভবত এটা বুঝতে পারেননি যে, তিনি নিজেও ওই অপশক্তির টার্গেট হতে পারেন বা হয়ে আছেন।

নাটোরের আওয়ামী লীগ নেতা মমতাজউদ্দিন, খুলনার মনজুরুল ইমাম এবং টঙ্গীর আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যার পর কিবরিয়া সাহেবকে বেশ বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি বলতেন, জামায়াতসহ অন্যান্য পাকিস্তানমনা দল ও ব্যক্তিরা একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য একটি ছক এঁকে এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে বিএনপির ওপর ভর করে অগ্রসর হচ্ছে।

বিএনপিতে যারা কিছুটা লিবারেল লোক আছেন, তারা ক্ষমতার মোহে এবং অন্ধ আওয়ামী-বিরোধিতার কারণে সবকিছু বুঝেও না বোঝার, দেখেও না দেখার ভান করছেন। হাতে ধরে দেশটাকে তারা তালেবানি শক্তির কাছে তুলে দিচ্ছেন। এদের পরিকল্পনা হল, এরা আর আওয়ামী লীগকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দেবে না। বাংলাদেশকে সেক্যুলার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে থাকতে দেবে না। দেশে যাতে সরকারবিরোধী আন্দোলন তীব্রভাবে দানা বাঁধতে না পারে সেজন্য আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় এবং সাংগঠনিকভাবে দক্ষ নেতাদের বেছে বেছে হত্যা করছে। এই ধারা তারা অব্যাহত রাখবে বলেই বিশ্বাস করতেন কিবরিয়া সাহেব।

প্রথাবিরোধী লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের জনপ্রিয় শিক্ষক ড. হুমায়ুন আজাদের ওপর ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে বাংলা একাডেমীর বই মেলার সামনে হামলার পর কিবরিয়া সাহেব বলেছিলেন, ওদের টার্গেট দল হিসেবে যেমন আওয়ামী লীগ, তেমনি ব্যক্তি হিসেবে যারা ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সামাজিক প্রগতির পক্ষে, মধ্যযুগীয় ধ্যান-ধারণা থেকে যারা দেশকে এগিয়ে নিতে চান, তাঁরাও।

তিনি আরও বলেছিলেন, ওরা একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বরের মতো একবারে অনেককে মারবে না। কিছুদিন বিরতি দিয়ে দিয়ে এমন একজন ওদের টার্গেট হবে, ওদের হাতে জীবন দেবে যা সাধারণ মানুষকে ভীত ও আতঙ্কিত করে তুলবে। মানুষের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দেওয়াই ওদের উদ্দেশ্য। কারণ ভয় পেলে মানুষ ঘর থেকে বের হবে না, নির্দোষ কোনো মানুষের বর্বরোচিত হত্যার খবর শুনে আফসোস-অনুশোচনা করবে কিন্তু প্রতিবাদ জানানোর জন্য রাস্তায় নামবে না।

মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল তাদের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে বিএনপির সমর্থনপুষ্ট হয়ে জামায়াত-শিবির দেশে যে সহিংস রাজনীতি করছে, একাত্তরের কায়দায় যেভাবে নৃশংসভাবে নিরীহ মানুষ হত্যা করছে, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও আওয়ামী-সমর্থকদের হত্যা করছে– তা থেকে এটা পরিষ্কার বোঝা যায় যে, কিবরিয়া সাহেব এই অপশক্তির অপরাজনীতি সম্পর্কে যে ধারণা পোষণ করতেন তা অমূলক ছিল না।

কিবরিয়া সাহেবকে নিজের জীবন দিয়েই যে তার বক্তব্যের যথার্থতা প্রমাণ করতে হবে এটা নিশ্চয়ই তিনি নিজেও ভাবেননি। তাঁর মতো একজন শ্রদ্ধেয় মানুষ– বলা যায় অজাতশত্রু– মানুষের ও দেশের মঙ্গল ও কল্যাণ চিন্তায় যিনি জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও নিরলসভাবে কাজ করছিলেন– তাঁকে হত্যার জন্য কোনো বর্বর টার্গেট করতে পারে, এটা কল্পনা করতেও কষ্ট হয়।

তিনি ছিলেন দেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। কাউকে আঘাত দিয়ে কথা বলতেন না। আওয়ামী লীগের সমালোচকদের চরম অসত্য ও উস্কানিমূলক বক্তব্যের জবাবও তিনি দিতেন যুক্তিপূর্ণ এবং সংযত ভাষায়। ওটাই ছিল তাঁর শক্তি। রবীন্দ্রনাথকে যিনি শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছিলেন, তাঁর জীবনাচরণ তো পরিশীলিত হওয়ারই কথা।

অর্থমন্ত্রী হিসেবে তাঁর নিজের পেশ করা বাজেট বক্তৃতা অথবা বিরোধী দলের এমপি হিসেবে জোট সরকারের বাজেটের ওপর তাঁর আলোচনা যারা শুনেছেন, তারাই তাঁর যুক্তিবাদিতায় মুগ্ধ হয়েছেন। তিনি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে চাইতেন যুক্তি দিয়ে, আর প্রতিপক্ষ তাঁকে ঘায়েল করল গ্রেনেড দিয়ে।

নিজে কখনও দুঃখকষ্টের মধ্যে জীবনযাপন না করলেও দেশের গরিব-দুঃখী মানুষের ভাগ্যের সামান্য পরিবর্তনও যদি করা যায় তার জন্য সবসময় তিনি ভাবতেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি যে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ইত্যাদি চালু করেছিলেন তার সামাজিক-রাজনৈতিক প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। গ্রামের হতদরিদ্র মানুষ যাতে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ নিয়ে মাথা গোঁজার একটি ছোট্ট ঘর তৈরি করতে পারে সেজন্য তিনি গৃহায়ণ প্রকল্প চালু করেছিলেন।

তিনি বলতেন, আমাদের গ্রামের মানুষের চাহিদা খুবই সামান্য, কিন্তু সরকার সাধারণত তাদের কথা ভাবে না। গ্রামে অর্থনৈতিক কর্মপ্রবাহ বাড়ানোর কাজ আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে কিবরিয়া সাহেব শুরু করেছিলেন। আরেকবার সুযোগ পেলে গ্রামীণ জীবনে সত্যিকার বিপ্লব সাধনের পরিকল্পনা তাঁর ছিল।

তিনি স্বপ্ন দেখতে পারতেন। তবে সেটা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো আগামী ত্রিশ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে আর কোনো গরিব মানুষ থাকবে না, সে ধরনের অলীক স্বপ্ন নয়। তাঁর স্বপ্ন ছিল বাস্তবমুখী, পূরণযোগ্য। দেশ নিয়ে তিনি সারাক্ষণ ভাবতেন।

এমন একজন সহৃদয় মানুষের সেবা গ্রহণের সুযোগ থেকে দেশকে বঞ্চিত করল কারা? কারা তাঁর ঘাতক? সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে কিবরিয়া সাহেবের ঘাতকদের কেন ধরা হল না, হচ্ছে না? কেন বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকতে তদন্তের নামে প্রহসন করেছে? তিনি যে দল করেছেন সেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার ক্ষমতায় আসার পরও কেন তদন্তকাজের সন্তোষজনক অগ্রগতি হচ্ছে না?

দেশ থেকে হত্যা-সন্ত্রাসের রাজনীতির অবসান ঘটাতে হলে কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়াটা জরুরি।

বিভুরঞ্জন সরকার: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।