তারানকোর উত্তাপে কি ঢাকায় বরফ গলবে?

আমানুল্লাহ কবীর
Published : 3 Dec 2013, 09:37 AM
Updated : 3 Dec 2013, 09:37 AM

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই দেশের সংঘাতময় রাজনৈতিক দৃশ্যপটের চূড়ান্ত পর্ব শুরু হল। গত ২৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ আগামী ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন। ঘোষণা শেষ না হতেই রাজধানীসহ বিভিন্ন শহর-বন্দরে শুরু হয় বিরোধীদলের সহিংস প্রতিক্রিয়া– গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট প্রতিবাদে ডাক দেয় পরেরদিন সকাল থেকেই ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ। পরে তা বাড়িয়ে করা হয় ৭১ ঘণ্টা।
ক্ষোভের কারণ, রাজনৈতিক সমঝোতার আগেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা। এর একদিন আগেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, তারা রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু একদিন পরেই তিনি বললেন, আর অপেক্ষা করা যায় না– ঘোষণা করে দিলেন তফসিল।

এই আকস্মিকতায় ক্ষুদ্ধ হয়ে বিরোধী দল বলল, তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতেই সরকারের ইচ্ছায় কমিশন হঠাৎ তফসিল ঘোষণা দিয়েছে। জবাবে কমিশন বলেছে, সংবিধান অনুসারে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতে হবে এবং সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষণা করতে হয়েছে। অর্থাৎ কমিশন নেহায়েত দাপ্তরিক কাজ সম্পন্ন করেছে।
কমিশনের বক্তব্য অযৌক্তিক নয়, তবে বাস্তবতার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। নির্বাচন বলতে বহুদলীয় নির্বাচন বোঝায়। বহুদলের অংশগ্রহণই যদি না থাকে তাহলে নির্বাচনের আয়োজন কাদের জন্য? নির্বাচন কমিশন অবশ্য বলেছে, প্রয়োজনে তফসিল পরিবর্তন করা হবে। তফসিল পরিবর্তনের ঘটনা নতুন কিছু নয়, অতীতে একাধিকবার তা ঘটেছে। শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক সমঝোতা হবে কি না, সেটা অনিশ্চিত হলেও লাশের মিছিল থেমে থাকছে না। তিনদিনের অবরোধের সময় পুলিশের গুলিতে, প্রতিপক্ষ দলগুলোর সংঘর্ষে ও আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয়েছে ২৫ জনের। দ্বিতীয় দফায় অবরোধের সময় নিহত হয়েছে আরও নয়জন। সমঝোতা না হলে আরও সংঘাত হবে– লাশের মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতরই হতে থাকবে। কিন্তু কেউ এই নরহত্যার দায়িত্ব স্বীকার করছে না। ক্ষমতাসীন দল বলছে, দায়ী বিরোধী দল; বিরোধী দল বলছে, দায়ী ক্ষমতাসীন দল। রাষ্ট্রপক্ষমতার জন্য সংঘাত প্রতিপক্ষ দলের মধ্যে, সুতরাং দায় তাদেরই নিতে হবে। তবে কার দায় কতটুকু– প্রশ্ন সেখানেই।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৯৯৫-৯৬ সালে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলাম যে আন্দোলন করেছিল, এবারের রাজনৈতিক দৃশ্যপট তার চেয়ে ভিন্ন। আন্দোলনের চিত্র ও চরিত্রও ভিন্ন। দাবি কেবল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য নয়, এ দাবির আন্দোলনের ছত্রছায়ায় চলছে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দণ্ডিত জামায়াত নেতাদের মুক্তি ও তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্বের লড়াই। নবোত্থিত ইসলামি শক্তি হেফাজতে ইসলাম মাঠে নেমেছে তাদের ১৩ দফা আদায়ের সংগ্রামে। ১৯৯৫-৯৬ সালের আন্দোলন ছিল কেবল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য; কিন্তু এবার জামায়াতের লড়াই অস্তিত্ব রক্ষার এবং তারা লড়াইটা যে করবে সর্বশক্তি দিয়ে, এটাই স্বাভাবিক।
বিরোধী দলের হরতাল ও প্রতিরোধের সময় তারই প্রমাণ ভেসে ওঠছে চোখের সামনে। বিএনপির ব্যাপক জনসমর্থন থাকলেও আন্দোলনের শক্তি সীমিত। কিন্তু জামায়াত জনসমর্থিত দল না হলেও সুসংগঠিত বলে আন্দোলনের কার্যকর শক্তি। তাই কৌশলগত কারণেই আন্দালনের চিত্র বদলে গেছে। এখন রাজধানী আর আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু নয়, রাজধানীর বাইরে ছড়িয়ে পড়ছে শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জে। সম্মুখ লড়াইয়ের পরিবর্তে 'hit and run' বা 'আঘাত কর ও পালিয়ে যাও' কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। নিরাপদ দূরত্বে থেকে আন্দোলনকে আরও কত বেগবান ও কার্যকর করে সরকারকে অস্থিতিশীল ও অকার্যকর করা যায়, লক্ষ্য সেটাই। হরতাল বা অবরোধের সময় এখন রাস্তায় বিরোধী দলগুলোর মিছিল তেমন দেখা যায় না।
বিশেষত রাজধানীতে এক ধরনের জরুরি অবস্থা চলছে। পুলিশের অনুমতি ছাড়া জনসভা, মিছিল, মানববন্ধন– কোনো কিছুই করা যাবে না। রাজধানীর বাইরেও এখন একই অবস্থা। পুলিশের জেলজুলুম এড়িয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন করার জন্য বিরোধী দলও কৌশল পাল্টেছে। চোরাগোপ্তা কৌশলে যানবাহনে ভাঙচুর, পরিবহনে অগ্নিসংযোগ, রেললাইন উপড়ে ফেলা, গাছ কেটে সড়ক অবরোধ, স্থানীয় নির্বাচন কমিশনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, নির্বাচন প্রার্থীদের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, ইত্যাদি ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চলছে পাল্টা আক্রমণ হিসেবে।

আর এই পাল্টাপাল্টি আক্রমণে যারা আহত ও নিহত হচ্ছে, তাদের অধিকাংশই খেটেখাওয়া মানুষ, রাষ্ট্রক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। অবশ্য এসব কৌশল কোনো নতুন আবিষ্কার নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত যখন আন্দোলন করেছিল, তখনও শাহবাগে বিআরটিসি বাসে আগুনে মারা যায় ১১ জন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণাটা অভিশাপের মতো খড়্গ হয়ে ঝুলছে জাতির মাথার উপর। এ খড়্গ থেকে রেহাই পায়নি বিএনপি সরকার, রেহাই পাচ্ছে না আওয়ামী লীগ সরকারও– খড়্গের নিচে প্রাণ হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছিল ৪৯ জন, এবার একই আন্দোলনে ২৬ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৯০ জন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের 'রূপকার' জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম, যার নিজের মাথার উপরই এখন ঝুলছে খড়্গ।
অনিশ্চয়তার অন্ধকারে বাস করেও জনগণের মনে প্রশ্ন– নির্বাচন হবে তো? নির্বাচন বলতে তারা সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনকেই বোঝে।
তবু যদি একদলীয় নির্বাচনের আয়োজনই চলতে থাকে তাহলে দেশে যে ব্যাপক সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, তা কি সামাল দিতে পারবে সরকার? আওয়ামী লীগ অন্যতম প্রধান দল, একমাত্র প্রধান দল নয়। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তি হিসেবেই দেশ মোটামুটিভাবে দুটি রাজনৈতিক শিবিরে বিভক্ত। ভোটের হিসেবও সেভাবেই হয়। কাজেই দ্বিতীয় প্রধান দল বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করা হলে তা হবে একপক্ষীয় নির্বাচন। কয়েকদিন আগে খবর ছড়িয়ে পড়েছিল যে, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মধ্যে গোপন বৈঠক হয়েছে। কিন্তু দুজনের কেউই মুখ খুলতে রাজি নন।
সরকারের মন্ত্রী ও সরকারি দলের নেতারা বৈঠকের কথা প্রচার করলেও বিরোধী দলের নেতারা চেপে যান। এখানেও কৌশলের খেলা। সরকারপক্ষ বৈঠকের খবর প্রচার করে রাজনৈতিক ফয়সালার জন্য দেশে-বিদেশে তাদের সদিচ্ছার বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছে, অপরদিকে মুখে কুলুপ এঁটে বিএনপি নেতিবাচক বার্তা দিয়ে নেতাকর্মীদের আন্দোলনমুখী রাখতে চেয়েছে। দুই নেতার বৈঠক হলেও ফল কিছু হয়নি। নিজেদের অবস্থান থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এক চুলও নড়েনি। ১৮ দলীয় বিরোধী জোট মঙ্গলবার থেকে সারাদেশে তিনদিনের অবরোধ ঘোষণা করে। আর আওয়ামী লীগ ও তার মিত্র দলগুলো উৎসব-উল্লাসের মধ্যে মনোনয়নপত্র বিতরণ করে প্রার্থীদের মধ্যে। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিন্যুউতে আওয়ামী লীগ অফিসে যখন এই দৃশ্য, তখন পুরানা পল্টনে বিএনপি অফিস ঘেরাও করে রেখেছিল পুলিশ– ভেতরে নেতাকর্মীদের কাউকে ঢুকতে দেয়নি। মিডিয়াতে এ দৃশ্য সবার চোখে পড়েছে। কয়েক দিন আগে বিএনপির আরও দুজন কেন্দ্রীয় নেতা হান্নান শাহ ও মীর নাছিরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের আরও নমুনা দেখেছি আমরা পরের সপ্তাহে।

গত বৃহস্পতিবার তিনদিনের অবরোধ শেষ হওয়ার পর শনিবার থেকে আবার তিন দিনের অবরোধ ঘোষণা দেওয়া হয়। শুক্রবার এই ঘোষণা দেওয়ার ছয় ঘণ্টা পরেই বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসে হামলা চালিয়ে পুলিশ দলের অন্যতম যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে গ্রেফতার করে। শাহবাগে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় রিজভীসহ দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর রায়, সহসভাপতি সাদেক হোসেন খোকা ও আরও ১১ জন কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। গ্রেফতারের ভয়ে এখন তারা পলাতক।
এর কিছুদিন আগে দলের তিন শীর্ষ নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এম. কে. আনোয়ার ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অর্থাৎ বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করে সরকারবিরোধী আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেওয়া ও অসহায় খালেদা জিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্যই সরকারের এই নিবর্তনমূলক কৌশল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ও সম্প্রতি কলকাতার ইংরেজি দৈনিক টেলিগ্রাফে এক সাক্ষাতকারে সরকারের এই কৌশলের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, আন্দোলনের পরিকল্পনাকারী ও অর্থ জোগানদাতাদের গ্রেফতার করে আমরা সুফল পেয়েছি– সহিংস ঘটনা পূর্বের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। দ্বিতীয় দফা অবরোধ চলাকালে গত রোববার প্রধানমন্ত্রী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগুনে দগ্ধ ব্যক্তিদের দেখতে গিয়ে বলেছেন, খালেদা জিয়া দেশে গণহত্যা শুরু করেছেন। তার অভিযোগ নিঃসন্দেহে গুরুতর। এই অভিযোগের পর খালেদা জিয়ার স্থান গুলশান অফিসের বদলে কারাগারে যাওয়ারই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাতে কি রাজনৈতিক সংকট ও সংঘাতের অবসান হবে? কেননা, সরকার যদি বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে অনড় থাকে, তাহলে সংঘাত আরও ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকা-ও বৃদ্ধি পাবে।
বিজেএমইএ-র কর্মকর্তাসহ অনেকেই মনে করছেন, গাজীপুরে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের তৈরিপোশাক কারখানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। স্ট্যান্ডার্ড অন্যতম কম্পায়েন্ট প্রতিষ্ঠান এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের তুলনামূলকভাবে ভালো বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা প্রদান করা হয়। কোনো শ্রমিক অসন্তোষ বা অস্থিরতা ছিল না। দুর্ঘটনার দিন কাজ শেষে রাত নয়টার দিকে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারখানায় যখন আগুন দেওয়া হয় তখন রাত প্রায় ১১টা। কারখানায় দুজন শ্রমিক নিহত হওয়ার মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে বহিরাগতরা তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিশ হাজার শ্রমিক-কর্মচারির কর্মস্থল কয়েক ঘণ্টার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পোশাকশিল্পের মালিক ও ব্যবসায়ীদের আশংকা, এ ধরনের ধ্বংসাত্মক ঘটনা আরও ঘটতে পারে। তৈরিপোশাকের প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক বাজার দখল করার জন্যই বাংলাদেশের পোশাকশিল্প ধ্বংস করার এই ষড়যন্ত্র। ষড়যন্ত্রকারীরা বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকে বেছে নিয়েছে সুযোগ হিসেবে।
এমন একটা সর্বনাশা সময়ের দিকেই দেশ দ্রুত ধাবিত হচ্ছে। এখন সরকারের সামনে দুটি উপায় খোলা থাকবে : এক. জরুরি অবস্থা জারি করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা; দুই. সেনাবাহিনীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরা অথবা সেনাবাহিনী কর্তৃক ক্ষমতা দখল করা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সংবিধানের ৫৭ (৩) ধারা পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এ ধারায় বলা হয়েছে, "প্রধানমন্ত্রী উত্তরাধিকারীর কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে স্বীয় পদে বহাল থাকিতে এই অনুচ্ছেদের কোনোকিছুই অযোগ্য করিবে না।" অর্থাৎ পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত শেখ হাসিনাই প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রিপরিষদ বহাল থাকবে এবং তার সরকারই আগামী জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধান করবে।
সংবিধানের কোথাও নির্বাচনকালীন অন্তর্বতী সরকার গঠনের কথা উল্লেখ নেই। যে অর্ন্তবর্তীকালীন সর্বদলীয় সরকারের ফর্মূলা হাজির করা হয়েছে, তা প্রধনমন্ত্রীর মৌখিক প্রস্তাব। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাইজ কী হবে, তার কর্মপরিধি কী হবে, ইত্যাদি বিষয়েরও কোনো দালিলিক ভিত্তি নেই। প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার বলেছিলেন, অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভা হবে ছোট আকারের এবং তারা কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত নেবেন না। কিন্তু এই অন্তবর্তীকালীন সরকার কখন থেকে কার্যকর হবে, তিনি এখনও তা উল্লেখ করেননি। তবে 'নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা' নামে পরিচিত সর্বদলীয় সরকার শপথ গ্রহণ করেছে ১৯ নভেম্বর। যুক্তিসঙ্গভাবেই ধরে নেওয়া যায়, ওইদিন থেকেই অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের কাজ শুরু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর ওয়াদা অনুসারে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভার কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত বা অনুরূপ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে কোনো কাজ করার কথা নয়। টিকফার মতো বিতর্কিত চুক্তি, যা দীর্ঘ বৎসর ঝুলে ছিল, অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের সময় তা স্বাক্ষরিত হয়েছে। নির্বাহী বিভাগ ও পুলিশ প্রসাশনের মাঠ পর্যায় থেকে উপরে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত রদবদল হয়েছে। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, যারা রিটার্নিং অফিসার ও ডেপুটি রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন, তারাসহ নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়ন করা হচ্ছে। নির্বাচন তফসিল ঘোষণার পর সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা বৃদ্ধি করে দ্বিতীয় শ্রেণি এবং সহকারি শিক্ষকদের বেতনবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে চার লাখ শিক্ষক বাড়তি আর্থিক সুবিধা পাবেন। এসব শিক্ষক সবসময়ই নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন। দৈনন্দিন কাজের অজুহাত দেখিয়ে এসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে নির্বাচন তফসিল ঘোষণার পর।
২৯ সদস্যের 'ক্ষুদ্রাকৃতি' মন্ত্রিসভা গঠনের ফলে এখন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ন্যাস্ত হয়েছে পাঁচটি গুরত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়– জনপ্রশাসন, মন্ত্রিসভা বিভাগ, প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র এবং আইন ও বিচার। সবকটি মন্ত্রণালয়ই নির্বাচনসংশ্লিষ্ট। সংবিধান অনুসারে তফসিল ঘোষণার পর এসব মন্ত্রণালয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকার করা নির্বাচন কমিশনের।
কিন্তু নির্বাচন কমিশন নীরব দর্শক হয়ে কেবল দেখছে। মৌনতা যদি সম্মতির লক্ষণ হয়ে থাকে, তাহলে নির্বাচন কমিশন তারই জানান দিচ্ছে। অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রশাসনকে উপযোগী করার বিষয়টি প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার ভাষণেও এড়িয়ে গেছেন। প্রকৃতপক্ষে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ সরকার ও সরকারি দল কেউ মানছে না। সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ের প্রচারসম্বলিত সব বিলবোর্ড নির্বাচন কমিশন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দিলেও তা কেউ কর্ণপাত করেনি। যে যে পদেই থাকুন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঘোষণা দিলেও কার্যত কমিশন নিজেদের সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগে জড়তার পরিচয় দিচ্ছেন।

গণতান্ত্রিক দেশে সংবিধান গণতন্ত্রী (Democrat) তৈরি করে, কিন্তু আমাদের সংবিধান তৈরি করে স্বৈরাচারী (Autocrat)। প্রধানমন্ত্রী প্রধান নির্বাহী হিসেবে সাংবিধানিকভাবে সকল ক্ষমতার অধিকারী। রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি হলেও তিনি আসলে সোনার খাঁচায় বন্দি তোতা পাখি– প্রধানমন্ত্রী যা বলে দেবেন, তা-ই তাকে আওড়াতে হবে। দলীয় গঠনতন্ত্রে সকল ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে দলের প্রধানকে। সারাদিন কেন্দ্রীয় বা নির্বাহী কমিটির সভার পর সিদ্ধান্ত হয়, 'তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন নেত্রী' অর্থাৎ দলের সভাপতি বা চেয়ারপার্সন। রাষ্ট্রীয় বা দলীয় সংবিধান বা গঠনতন্ত্র তৈরি করা হয়েছে নেত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে, জনগণের দিকে তাকিয়ে নয়। ক্ষমতার ভারসাম্য না থাকায় রাষ্ট্র বা দল কোথাও গণতন্ত্রের চর্চা নেই। দলে গণতন্ত্র না থাকলে রাষ্ট্রেও গণতন্ত্র চর্চা হয় না। আমাদের দুই নেত্রীও নিশ্চিতভাবে জানেন যে, নির্বাচনে ঘুরেফিরে তারাই প্রধানমন্ত্রী হবেন। ফলে গোটা ব্যবস্থটাই তাদের প্রলুদ্ধ করেছে স্বৈরাচারী চিন্তাচেতনায়। গণতান্ত্রিক ন্যায়ানুবর্তিতা বাদ দিয়ে ক্ষমতার প্রয়োগ কত ভয়াবহ হতে পারে, তা আমরা এখন যেমন দেখছি, তেমনি অতীতেও দেখেছি। এটা পাকিস্তানের শাসকচক্রের ভূত। লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জিত হলেও কাঁধ থেকে আমরা সে ভূত নামাতে পারিনি। মুখে প্রতিবেশী ভারতের গণতন্ত্রের প্রশংসা করলেও আমাদের নেতানেত্রীরা তা হৃদয়ে ধারণ করতে পারেননি।
গণতন্ত্রের চর্চার মাধ্যমে অগণতান্ত্রিক শক্তি ঝরে যায়– সে শক্তি উগ্র ধর্মীয় বা বাম যা-ই হোক। ভারতে এ দুটি শক্তিই অত্যন্ত সক্রিয়। পরস্পর বিপরীতমুখী রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় স্রোতের মধ্যেও দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিক চর্চার কারণে ভারতের যে রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে উঠেছে, তার ভিত্তিমূলে আঘাত করার ক্ষমতা কারও নেই। বিতর্কিত হিন্দুত্ববাদী নেতা নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি দিল্লির ক্ষমতায় আসীন হলেও সে রাষ্ট্রকাঠামো নড়চড় করার ক্ষমতা তার নেই। যে সংবিধান রয়েছে, তার আওতায় থেকেই তাকে দেশ পরিচালনা করতে হবে।
কিন্তু বাংলাদেশে ভারতের মতো জাতিগত ও ধর্মীয় সমস্যা নেই। যে ধর্মীয় শক্তির উত্থানের বিষয় নিয়ে দেশে-বিদেশে এত প্রচার-প্রপাগান্ডা হচ্ছে, তা রাজনৈতিক অতিরঞ্জন। বাংলাদেশ আরেকটি পাকিস্তান বা আফগানিস্তান হবে বলে যারা বলছেন, তারা পরোক্ষভাবে বহির্শক্তির হস্তক্ষেপকেই উস্কানি দিচ্ছেন। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য।
ক্ষমতাসীন ১৪ দলের শরিক এরশাদের জাতীয় পার্টি। এরশাদ হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনে ও শাপলা চত্বরের সমাবেশে সর্বাত্মক সমর্থন দিয়েছেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সর্বদলীয় সরকারে যোগদানের আগের দিন হাটাহাজারিতে গিয়ে হেফাজতের আমির মাওলানা শফির দোয়া নিয়ে এসেছেন। এ জন্য জাতীয় পার্টিকে ১৪ দলীয় মহাজোট থেকে বাদ দেওয়ার দাবিতে আওয়ামী লীগ বা বাম নেতানেত্রীদের কেউ হৈচৈ করেননি। বরং সর্বদলীয় সরকারে এরশাদের দল বিস্ময়করভাবে আওয়ামী লীগের চেয়েও বেশি মন্ত্রিত্ব পেয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভোটের রাজনীতিই যে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে উৎসাহিত করেছে, তা অতীত ও বর্তমানের দিকে চোখ খুলে তাকালেই বোঝা যায়। কিন্তু জনগণ ধর্মপ্রাণ হলেও ধর্ম ও রাজনীতিকে অবিচ্ছিন্নভাবে দেখেনি বলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি গণ্ডি পেরিয়ে গণভিত্তি পায়নি। গত নির্বাচনগুলোর ফলাফলও এই সাক্ষ্যই বহন করে।

বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভারত ভয়াবহ দাঙ্গার আশংকায় সীমান্তে বিএসএফ-এর শক্তি বৃদ্ধির যে ব্যবস্থা করেছে, তা বরং দুদেশের জনগণের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাই সৃষ্টি করেছে। ভারতেও সাধারণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে এবং সে নির্বাচন হবে সকল দলের অংশগ্রহণে। বাংলাদেশে তার ব্যতিক্রম কিছু প্রত্যাশা করলে দিল্লি কর্তৃপক্ষের জন্য তা হবে অবিমৃষ্যকারিতা। একতরফা নির্বাচনের পরিবর্তে সকল দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ উন্মুক্ত হলে বিএনপিসহ সকল বিরোধী দলই নির্বাচনমুখী হবে এবং রাতারাতি রাজনৈতিক দৃশ্যপট বদলে যাবে। জামায়াতসহ যেসব ধর্মভিত্তিক গ্রুপ বা প্রতিষ্ঠান আজ যে শক্তিপরীক্ষার সুযোগ পেয়েছে, ভোটের বাক্সে তা আটকা পড়ে যাবে। গণতন্ত্রের অবাধ চর্চা থাকলে ডান-বাম কোনো উগ্র শক্তিই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে না। নেপালের সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফলাফলও তারই উদাহরণ। ভোটাভুটিতে প্রচন্ডের দুর্দমনীয় কম্যুনিস্ট পার্টির স্থান হয়েছে তিন নম্বরে। দিল্লির নীতিনির্ধারকেরা যদি বাংলাদেশের জনগণকে বন্ধু মনে না করে কেবল আওয়ামী লীগকে বন্ধু মনে করে, তা প্রতিবেশী হিসেবে উভয় দেশের জন্যই হবে অস্বস্তিকর। গণতান্ত্রিক ভারতের জন্য আরেকটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশই কেবল হতে পাবে পরস্পরের সুপ্রতিবেশী।
গত মাসের তৃতীয় সপ্তাহের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল ঢাকা সফরে এসেছিলেন। তার সফরের পর লক্ষণীয়ভাবেই কূটনীতিকদের দৌড়ঝাপ ও তৎপরতা শিথিল হয়ে আসে। তাদের বক্তব্যেও পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এতদিন সকল দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলা হলেও তাদের বক্তব্যে 'সকল দলের অংশগ্রহণে' কথাগুলো বাদ পড়ে যায়। তবে জাতিসংঘের সহাসচিব বান কি মুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রেরিত চিঠিতে 'সত্যিকার অর্থেই অংশগ্রহণমূলক' নির্বাচনের উপর গুরুত্বারোপ করে বর্তমান সহিংস পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সময় ফুরিয়ে আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, 'বাস্তবিক অর্থেই বিশ্বাসযোগ্য' ও 'সহিংসতামুক্ত নির্বাচন'-এর সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে 'পরস্পরের কাছে গ্রহণযোগ্য সমাধান'-এ পৌঁছানোর তাগিদ দিয়েছেন।
প্রায় একই ধরনের চিঠি পাঠিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার কাছেও। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার নাভি পিল্লাই এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, রাজনীতি কিংবা নির্বাচনসংক্রান্ত সহিংস ঘটনায় রাজনীতিবিদসহ অপরাধীদের আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর নজির রয়েছে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতসংশ্লিষ্ট Rome Statute-এর স্বাক্ষরকারী দেশ– এ কথা বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি ইঙ্গিত করেছেন যে, তারাও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারের আওতার বাইরে নন। বর্তমানে এই মানবাধিকার কমিশনের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করছে। ইইউ-ও 'জনমতের পূর্ণ প্রতিফলন ঘটে' এমন নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলকে একটি গ্রহণযোগ্য ফর্মূলার ব্যাপারে সমঝোতায় পৌঁছার আহ্বান জানিয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটেই জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব ফার্নান্দেজ তারানকো ৬ ডিসেম্বর ঢাকা সফরে আসছেন। এরই মধ্যে হঠাৎ জানা গেল, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সজাতা সিং ৪ ডিসেম্বর ঢাকা আসবেন। আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ভারতের মন্ত্রীদের বিকল্প হিসেবে সুজাতা সিংয়ের এই সফর। তিনি হয়তো দিল্লির শেষ বার্তাটি প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছে দেবেন। তারানকোর সফরও হবে রাজনৈতিক ফয়সালার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্যোগের শেষ চেষ্টা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের সংশয়, তারানকোর উত্তাপ কি ঢাকায় রবফ গলাতে পারবে? এদিকে প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বর্তমানে ওয়াশিংটনে আছেন। শেখ রেহানা কয়েকদিন আগে দিল্লি সফর করে ঢাকায় ফিরেছেন। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী উপঢৌকন নিয়ে দিল্লি গিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে।
অবরোধ চলা অবস্থায় সোমবার বেগম খালেদা জিয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, সমঝোতার জন্য আলোচনার দরজা এখনও খোলা রয়েছে। শেখ হাসিনাও একই কথা বারংবার বলে আসছেন। কিন্তু দরজার চৌকাঠ পেরিয়ে কেউ কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। বিপন্ন জাতিকে নিয়ে এ এক নিষ্ঠুর পরিহাস। অগ্নিদগ্ধ গীতা সেনের কণ্ঠে তারই প্রতিধ্বনি হয়েছে। রোববার প্রধানমন্ত্রী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে অগ্নিদগ্ধ নারী-পুরুষদের দেখতে গেলে গীতা সেন দুঃখে ও ক্ষোভে কাঁদতে কাঁদতে তাকে বলেন, 'আমরা আপনাদের তৈরি করছি, আপনারা আমাদের তৈরি করেন নাই। আমরা আমাদের স্বামীরটা খাই। আপনারা আমাদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। আমরা ভালো সরকার চাই। আমরা অসুস্থ সরকার চাই না।'… 'আমরা খালেদারেও চিনি না, হাসিনার কাছেও যাই না।'…'উনারে এক হইতে বলেন, আপনারা সবাই এক হন। হয়ে আমাদের রক্ষা করেন।'

আমানুল্লাহ কবীর : সাংবাদিক ও কলামিস্ট। বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর ডটকমের সিনিয়র এডিটর।