শেখ হাসিনা আমাদের প্রধানমন্ত্রী

বেবী মওদুদ
Published : 27 Sept 2010, 03:06 PM
Updated : 27 Sept 2010, 03:06 PM

আজ ২৮ সেপ্টেম্বর, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন। তাঁকে জানাই আমার অন্তরের ভালোবাসা এবং অভিনন্দন। শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বারান্দায়। তারপর পরিচয় হয়। হাসিনা আমাকে জিজ্ঞেস করলো, কোথা থেকে এসেছ তুমি? উত্তর দিলাম, রাওয়ালপিন্ডি থেকে। ওখানেই স্কুল কলেজে পড়েছি। আমাকে ভালো করে দেখে আবার জিজ্ঞেস করলো, কি নাম তোমার? উত্তর দিলাম, বেবী। সে সঙ্গে সঙ্গে আমার হাত ধরে বলল, ও তোমাকে চিনেছি। তুমি লেখো। কচিকাঁচার আসরে তোমার লেখা পড়েছি। চিত্রালীতে টুনটুনি নামে লেখো, তাই না। আমি হেসে মাথা নেড়ে হ্যাঁ, জানালাম। সে ঠিকই আমাকে চিনতে পেরেছে। বেশ খুশী ছড়িয়ে পড়েছে তার চোখে মুখে। প্রথম পরিচয়ে অনেক কথা হলো। পরদিন সকালে সে এসে প্রথমেই আমাকে বললো, জানো তোমার বাবা আমার বাবাকে জেলে দিয়েছিল।

বললাম, তাই! আমি তো ঠিক জানিনা। হাসিনা বলল, আমি কাল বাসায় গিয়ে বললাম তো যে এক জজের মেয়ে আমাদের সঙ্গে পড়ে। তো নাম শুনে সবাই বলল, ও তাই নাকি। উনি তো তোমার বাবাকে জেল দিয়েছিলেন। বলেই ও খুব হাসলো এবং আমার গলা ধরে বললো, আর দেখো কী আশ্চর্য! আমরা এখন বন্ধু। ঐসময় আমরা বন্ধুরা মিলে তাদের বাসায় যেতাম। আড্ডাও দিতাম। সবার জন্য ছিল হাসিনার সমান দরদ এবং ভালোবাসা।

১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হই। তখন থেকেই আমাদের বন্ধুত্ব। সে করতো ছাত্রলীগ এবং আমি ছাত্র-ইউনিয়ন। হাসিনার সঙ্গে সবার বন্ধুত্ব। সে ঢাকার আজিমপুর গালর্স স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও বখশীবাজার সরকারি মহিলা কলেজ থেকে ছাত্রী সংসদের নির্বাচিত ভিপি। সুতরাং তার বান্ধবীর সংখ্যা প্রচুর। আমি তো একেবারে নতুন। কাউকে চিনতাম না। কিন্তু হাসিনার সঙ্গে থাকায় আমারও বান্ধবীর সংখ্যা বেড়ে গেল। হাসিনার ছিল একটা আকর্ষণীয় ক্ষমতা, সবার সঙ্গে খুব সহজেই মিশতে পারতো। একেবারে সহজ-সরল আন্তরিকতায় ভরা মন। সবার মন জয় করার একটা মুগ্ধময় ক্ষমতা ছিল তার। তার সঙ্গে আমার মনের মিল ছিল যথেষ্ট। বিশেষ করে বই পড়া, গান শোনা, আড্ডা, সভায় মিছিলে যাওয়া এবং ছাত্র রাজনীতির কাজকর্ম করা। যদিও দু'জনে দুই সংগঠনে তারপরও আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ট ছিল। তার কথাবার্তা, চিন্তা ভাবনার সঙ্গেও তখন থেকে আমি সহমর্মী হই। যা আজও অটুট রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ৬ জানুয়ারি ২০১০ সালে বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিপুল ভোট পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ট দল হিসেবে সরকার গঠন করে। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ওপর জনগণের প্রচন্ড আস্থা এবং প্রত্যাশা রয়েছে। শেখ হাসিনা তার নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তার স্বপ্নের কথা তুলে ধরেন। নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি এক নতুন বাংলাদেশ উপহার দিতে চেয়েছেন যেখানে শান্তি, স্বস্থি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠা পাবে। যেখানে শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চর্চা এবং বিকাশ সাধিত হবে। ষেখানে বৈষম্য-বঞ্চনা থাকবে না।

১৯৯৬ সালে তিনি প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তখনও দেখেছি সমাজ ও দেশের কল্যাণের জন্য তাঁর চিন্তা-ভাবনা। আর্থ সামাজিক উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও তার উল্লেখযোগ্য অবদান আমাদের অবশ্য মনে রাখতে হবে। নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে তিনি সন্তানের অভিভাবক হিসেবে সর্বত্র মায়ের নাম লেখার স্বীকৃতি দিয়ে একটি যুগান্তকারি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জেষ্ঠ্যা কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টম্বের গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। পিতার  রাজনৈতিক আদর্শ, আন্দোলন-সংগ্রাম-কারাবন্দী জীবন সবই তিনি শৈশব-কৈশোর থেকে দেখে আসছেন। এই অভিজ্ঞতা তাকে পিতার আদর্শ উত্তরাধিকারী হিসেবে গড়ে তোলে। তিনি যখন আজিমপুর গার্লস স্কুলে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী, তখন তিনি নেতৃত্ব দিয়ে ছাত্রীদের নিয়ে শিক্ষা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেন। এসময় পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করেছিল। এরপর ঢাকার উচ্চ মাধ্যমিক মহিলা কলেজের ছাত্রী সংসদ নির্বাচনে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়ে কলেজের ছাত্রীদের সমস্যা সমাধান ও সংস্কৃতির কর্মসুচির নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৭ সালে  তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অনার্স ক্লাশে ভর্তি হন। উনসত্তুরের গণ-আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তিনি বিরাট অবদান রাখেন। এসময় তার পিতার রাজনৈতিক জীবনকে খুব ঘনিষ্ঠভাবে দেখার সুযোগ হয় ।

১৯৬৮ সালে এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী স্বৈরসামরিক গোষ্ঠী তার পিতাকে ফাঁসির আসামী করে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে চেয়েছিল। তার কারণ শেখ মুজিব বাঙালির স্বাধিকার দাবি করেছিলেন। বাঙালিকে শোষণ ও শাসন করে বঞ্চিত ও অবদমিত রাখতে চেয়েছিল পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীরা। শেখ মুজিব তাঁর জীবনের বিনিময়ে বাঙালির মুক্তির লক্ষ্যে স্বাধীনতা ঘোষণা  করেছিলেন। পাকিস্তানী শাষকগোষ্ঠী তাকে  'দেশদ্রোহী' আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে বন্দী করেছিল। কিন্তু বিশ্ব নেতৃত্ব ও জনমতের কাছে নতি স্বীকার করে পাকিস্তানী সৈন্যরা আত্মসমর্পন করে। বিজয় পতাকা ওড়ায় বাঙালি। শেখ মুজিবকে কারাগার থেকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তানীরা।

শেখ মুজিব দেশে ফিরলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেন, যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশের উন্নয়নের ভিত গড়ে তুললেন এবং অর্থনৈতিক মুক্তির যখন ডাক দিলেন তখনই তাকে হত্যা করে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের সহায়তায় স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা। তারা বাংলাদেশের অস্তিত্বে বিশ্বাস করতো না, তারা বাঙালির স্বাধীনতা চায়নি। তারা শেখ মুজিবকে স্ত্রী-তিন পুত্র ও কিছু আত্মীয়স্বজনসহ হত্যা করেছিল। তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান। তাদের দেশে ফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

পিতার আদর্শ ও রাজনৈতিক দীক্ষায় উজ্জীবিত শেখ হাসিনা দীর্ঘ ছয় বছর পর বাংলাদেশ আওয়ামি লীগের সভানেত্রী হয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি বাংলার মানুষের কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন, "আমার একমাত্র দায়িত্ব পিতার অধরা স্বপ্ন সফল করা।" বাংলার দু:খী মানুষের মুখে হাসি ফুটাবে, বাঙালির অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎসা ও কর্মসংস্থান হবে, বাঙালি উন্নত জীবনের অধিকারি হবে। পিতার অসমাপ্ত কর্ম সাধন করাই শেখ হাসিনার প্রধান দায়িত্ব হয়ে ওঠে। কিন্তু  তিনি একুশ শতাব্দীর উপযোগী করে নতুন প্রজন্মের সামনে এক নতুন বাংলাদেশকে উপস্থিত করতে চান। তাই তিনি দিন বদলের ডাক দিয়েছেন। তিনি গণতন্ত্র চর্চা, গণতন্ত্র বিকাশ ঘটিয়ে  দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটাতে চান। তিনি দারিদ্র দূর করে শান্তি ও স্বস্থি এনে দিতে চান ঘরে ঘরে, গ্রামে গ্রামে। তিনি সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সমাজ থেকে দূর্নীতি-অনাচার-নির্যাতন-নৈরাজ্য-সন্ত্রাস নির্মূল করে দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে চান। তিনি মনে করেন, দারিদ্র হচ্ছে যে কোন উন্নয়ণের পথে বাধা। মানুষের জীবনকে অভিশপ্ত করে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য করে। তাই দারিদ্র দূর করতে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ব্যাংক, ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প চালু করেছেন। তার সরকার দেশে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসুচি গ্রহণ করেছে।

শেখ হাসিনা বলে থাকেন, "জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করাই আমার রাজনীতি।" তার এ কথার মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেলে আমাদের জীবনে ও সমাজে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। জনগণের প্রধান চাহিদা হচ্ছে পেট ভরে ভাত খাওয়া। এজন্য তিনি  কৃষিতে সর্বাত্মক ভর্তুকী ও কৃষকদের সবরকম সহযোগিতা প্রদান করেছেন যাতে দেশে খাদ্যাভাব না ঘটে। কৃষক উৎপাদনমুখী কাজে সারা বছর ব্যস্ত থাকে। প্রথমবার সরকার গঠন করে তিনি দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে সমর্থ হন। তিনি ইউনিয়ন পর্যায় কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক গঠন করে ঘরে ঘরে চিকিৎসা সেবার সুযোগ পৌঁছে দিয়েছেন যাতে মা ও শিশুদের কোনও কষ্ট না হয়। তার সরকার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধি ভাতা প্রবর্তন করে সমাজের এক বৃহত্তর অবহেলিত ও দুর্দশাগ্রস্থ মানুষের উপকার করেছে। তিনি প্রতি পরিবারের একজনকে সরকারি চাকুরি দেবার উদ্যোগ নিয়েছেন। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ন্যাশনাল সার্ভিস প্রবর্তনের ব্যবস্থা করেছেন যেখানে কাজ করার ও শেখার বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পাবলিক পরীক্ষা ও সনদ দেয়ার প্রথা চালু করেছেন। প্রযুক্তিগত ও কৃষিমুখি শিক্ষার্জনের ব্যাপক  উদ্যোগ নিয়েছেন।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুদের খুব ভালোবাসেন। তার জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলেও, শিশুরা অনায়াসে তার কাছে চলে যেতে পারে। শিশুরা তার কাছে স্নেহ আদর পেয়ে ও কথা বলে খুব খুশি হয়। ১৯৯৮ সালে আমরা দেখেছি তিনি বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে সদ্যজাত শিশুকেও কোলে নিয়ে আদর করেছেন। তিনি বলে থাকেন, "শিশুরা আমাদের দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। আমাদের বর্তমানকে উৎসর্গ করে তাদের ভবিষ্যতকে আনন্দ, উজ্জ্বল, স্বস্থি ও শান্তিময় করে তুলতে হবে।"

জাতির পিতার কাছে তার রাজনীতির শিক্ষা হয়েছিল শৈশব থেকে। তাই তো তাকে আমরা  দেখি একজন রাজনীতিমনস্ক ব্যক্তিত্ব হিসেবে। তিনি ১৯৭৩ সালে বি.এ. পাশ করেন। তিনি গ্রামে জন্মেছেন। গ্রামীন আবহাওয়া ও পরিবেশে বড় হয়ে উঠেছেন। গ্রামের মানুষের দু:খ-কষ্ট, অভাব-অসুবিধা খুব ভালো করে জানেন বলেই উন্নয়নের ধারা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থে তৃণমূল থেকে করার ঘোষণা দিয়েছেন। এটা আমরা মনে করি, দেশ ও জণগণের প্রতি তার মমত্ব ও দায়িত্ব বোধের প্রকাশ। তাঁর রাজনৈতিক জীবন কখনও কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। বিশেষ করে সামরিক শাসকরা দেশে যে স্বৈরশাসন চালিয়েছিল তার বিরুদ্ধে তিনি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেন। সুষ্ঠু , নিরপেক্ষ ভোটের দাবিতে তত্ত্ববধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন গড়ে তোলেন যা বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষ প্রশংসা করেছে। তাঁর সাহসী বক্তব্য, নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম, জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবিদাওয়া নিয়ে লড়াই এবং দেশপ্রেমে ও সততার জন্য তিনি বিশ্বনেতার মর্যাদায় আজ প্রতিষ্ঠিত।  বিদেশী প্রচার মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে 'আইরন লেডী' আখ্যায়িত করা হয়।

শেখ হাসিনা বাঙালার শিল্প ও সংস্কৃতির একজন আদর্শ সেবক। তিনি ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস করার জন্য জাতিসঙ্ঘে সুপারিশ করেছিলেন, যা পরবর্তীকালে ইউনেস্কো কর্তৃক অনুমোদিত হয়। তিনি বই পড়তে ভালোবাসেন এবং নিজের লেখা কয়েকটি রাজনৈতিক প্রবন্ধের গ্রন্থও আছে। শেখ হাসিনার মেধা ও জ্ঞানের সাধনা,  দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন ও সংগ্রাম, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সাহসী যোদ্ধা, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার প্রবক্তা এবং রাজনৈতিক দূরদর্শীতার কারণে তাকে বিশেষভাবে শান্তি পুরস্কার ও সম্মাণীয় ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করা হয়। সেগুলো হচ্ছে : ইন্দিরা গান্ধি আন্তর্জাতিক শান্তি পদক-২০০৯, কলকাতা এশিয়াটিক সোসাইটির ইন্দিরা গান্ধি স্বর্ণপদক-২০০৯,  ইউনেস্কো হুফে বোয়েগনি শান্তি পুরস্কার-১৯৯৯, ফিলিপিন পার্লামেন্টের 'কংগ্রেশনাল মেডেল অব এচিভমেন্ট-২০০৫। সম্মাণীয় ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়(১৯৯৭), জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯৭), যুক্তরাজ্যের আবিরডিন ড্যান্ডি বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯৭), ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯৯), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়(১৯৯৯), বেলজিয়ামের ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয় (২০০০), যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিজপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় (২০০০), অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (২০০০), মস্কো প্যাট্রিস লুমুম্বা পিপলিস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি (২০০৫)।

শেখ হাসিনার উদার হৃদয়ের কথা আমরা জানি। ১৯৯৪ সালে তিনি ধানমন্ডিতে অবস্থিত জাতির পিতার বাড়িটি 'বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর' হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে জনগণের তীর্থস্থানে পরিণত করেছেন। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান করে  তিনি তাদের শিক্ষার্জনের সুযোগ করে দিয়েছেন। খেলাধুলার প্রতিও রয়েছে তার গভীর আগ্রহ। বিশ্ব ক্রিকেটের অঙ্গনে বাংলাদেশকে মর্যাদার সঙ্গে অভিসিক্ত করেছেন তিনি। এমনকি প্রতিবন্ধি শিশুদের বিশ্ব অলিম্পিকে স্বর্ণ বিজয়ের প্রতিদানে তিনি তাদের পুরস্কৃত করেন এবং বিশেষ প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করেন।  তিনি আবাহনী ক্রীড়াচক্রের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। আমার চোখে সবসময় শেখ হাসিনা একজন লড়াকু নেত্রী। তিনি যা ভালো মনে করেন তা করতে অবশ্যই চেষ্টা করেন। জীবনে অনেক ঝুঁকি নিয়েছেন। গ্রেনেড বুলেট বোমা তাকে হত্যার জন্য চেষ্টা করেছে কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে সব চক্রান্ত। তার একটি জনদরদী মন আছে যা আমাকে স্পর্শ করে থাকে। তার প্রথম পছন্দ বই পড়া। বই উপহার পেলে তিনি সবচেয়ে বেশি খুশি হয়ে থাকেন।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সারা  বিশ্বের নন্দিত নেত্রী। মানবসম্পদ উন্নয়ন, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা ও যুদ্ধ-দাঙ্গা বিরোধী মনোভাব মানবিক কল্যাণ ধর্মী হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নিরলস প্রচেষ্টা সবার দৃষ্টি আকর্ষন করেছে। তিনি সরকার গঠনের পর পর বিডিআর বিদ্রোহ শান্তিপূর্ণভাবে দমন করায় দেশে-বিদেশে বিশেষভাবে প্রশংসিত হন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের গৌরব এবং বাঙালির প্রিয় নেত্রী যিনি মনে প্রাণে একজন শুদ্ধতম আদর্শ বাঙালি। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক। বাংলার মানুষ বিশ্বাস করে তিনি দেশের একচ্ছত্র নেতা, যিনি দল-মত নির্বিশেষে যে কোনও দূর্যোগ ও সংকট মোকাবেলায় দায়িত্বশীল নেতৃত্ব দিতে পারেন। বাংলাদেশকে বিশ্বে উন্নত জাতি হিসেবে তিনি বীরের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করেছেন।   বিশ্বের শ্রেষ্ঠ নেতাদের সারিতে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ এক নি:স্বার্থ দেশপ্রেমিক নেতা এবং অনন্য সাধারণ ব্যাক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

১২.৫.২০১০