পোড়া মৃতদেহের রাজনীতি ও সময়ের গল্প

সাব্বির খানসাব্বির খান
Published : 30 Nov 2013, 08:35 AM
Updated : 30 Nov 2013, 08:35 AM

২৯ নভেম্বর শুক্রবার প্রভাতে শেষ হল বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের টানা ৭১ ঘণ্টার অবরোধ। এই অবরোধে লাভ-ক্ষতির হিসাব কে কীভাবে করবেন জানি না। তবে বিএনপি-জামায়াতের চাহিদা অনুযায়ী মৃতের মাথা গুনে যদি এর হিসেব করা হয়, তাহলে নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, "স্বল্প সময়ে চাহিদা অনুযায়ী জামায়াত-বিএনপির 'প্রাপ্তি' বিশাল!''

আর সম্পদ ধ্বংসের চুলচেরা হিসেব করা অসম্ভব যদিও, তারপরেও তা যে কয়েক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে, এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। এটা তো শুধু সদ্যসমাপ্ত অবরোধের কথা বললাম। এর আগেও একাধিক 'জঙ্গি' হরতাল-আন্দোলনে দেশে যে হারে মানুষ হত্যা করা হয়েছে এবং যে পরিমাণ সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে, তা সাধারণত একটা যুদ্ধগ্রস্ত দেশেই হতে পারে।

তাহলে কি আমাদের দেশে একটা অঘোষিত যুদ্ধ চলছে? কে কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে? কেন করছে? এর যৌক্তিকতা কী? অনেক প্রশ্নই আজ সাধারণ মানুষের মনে ঘুরেফিরে আসছে। কিন্তু উত্তর দেওয়ার যেন কেউ নেই এ দেশে। আসলে হচ্ছেটা কী?

"আমি একজন রাজনীতিবিদ। আমি দেশ এবং দেশের জনগণকে ভালবাসি। জনগণের উন্নয়ন সাধনই আমার ব্রত। আমার জীবন বিসর্জন দেব দেশের জন্য, জনগণের জন্য।"– এগুলো যে কোনো রাজনীতিবিদের খুব সাধারণ কিছু কথা যা বোঝার জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হতে হয় না বা গাদা গাদা বই পড়তে হয় না। অথচ বর্তমানে যা দেখছি, তা উপরের কথাগুলোর ঠিক বিপরীতমুখী বলেই আজ প্রমাণিত।

কথাগুলো উল্টে দিলে যা হয়, দেশে আজ তা-ই চলছে। দেশের মানুষ আজ বিএনপি-জামায়াতের জঙ্গি-সন্ত্রাসের কাছে জিম্মি। এ দশা থেকে মুক্তি পেতে কোনো মহল থেকে উদ্যোগ নেওয়া তো দূরের কথা, বরং একে পরোক্ষভাবে উস্কানি দেওয়াসহ 'বৈধতা' দিতে দেশের তথাকথিত সুশীল সমাজ ও 'পচে যাওয়া' বামদের ন্যাক্কারজনক অবস্থান নেওয়া দেখে পুরো জাতি আজ হতাশ।

বাংলাদেশের একটা সংবিধান আছে। দেশটা চলবে সংবিধান অনুযায়ী, এটাই স্বাভাবিক। সরকার সংবিধান অনুযায়ী তাদের মেয়াদ শেষ হলে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। কিন্তু বিরোধী দল অর্থাৎ বিএনপি এটা মানতে নারাজ। তাদের আবদার হল, একটা নিরপেক্ষ অর্থাৎ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে।

অথচ উচ্চ আদালত তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকেই 'অসাংবিধানিক' বলে রায় দিয়ে তা বাতিল ঘোষণা করেছে। পরবর্তীতে এই রায়ের আলোকে সরকারও সংবিধান সংশোধন করেছে। অর্থাৎ দেশের নির্বাচন হবে সম্পূর্ণ সাংবিধানিক উপায়ে, অন্য কোনো উপায়ে নয়।

বিরোধীদের দাবির মুখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যেখানে 'সর্বদলীয়' সরকার গঠন করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং নির্বাচন কমিশন ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন ধার্য করে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে, সেখানে বিরোধী দল বিএনপি তার 'সহচর' জামায়াতের সম্পূর্ণ সহযোগিতায় নির্বাচন ঠেকানোর ঘোষণা দিয়ে টানা হরতাল-অবরোধের মতো সহিংস কর্মসূচি পালন করছে। নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে দাবি আদায়ের জন্য।

সরকার বিরোধী দলের শীর্ষস্থানীয় কিছু নেতাকে গ্রেফতার করেছে দেশে সহিংসতা উস্কে দেওয়ার জন্যে। হয়তো ভেবেছে তাতে সহিংসতা লোপ পাবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি চিত্র। এখন প্রশ্ন জাগতেই পারে, কারা ঘটাচ্ছে এই জঘন্য হত্যাযজ্ঞ? কারা যাত্রীভর্তি মানুষসহ বাস, সিএনজিতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে?

জ্বলেপুড়ে ছারখার হছে দেশ। যাত্রীসহ রেলগাড়ি উপড়ে ফেলা হচ্ছে। শত শত কোটি টাকা দিয়ে কেনা যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। রাস্তার দুপাশের বিশাল বিশাল গাছ কেটে রাস্তায় ব্যারিকেড দেওয়া হচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ। পোড়ানো হচ্ছে গার্মেন্টস। বোমা মেরে মানুষ মারা হচ্ছে। বাদ যাচ্ছেন না বিজেবি, পুলিশ সদস্যরাও। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে দেশের শিশুরা– যারা আগামীদিনে জাতির কাণ্ডারী– ব্যাহত হচ্ছে তাদের শিক্ষাজীবন। অথচ দেশের মানুষকে রক্ষা করতে নবগঠিত সর্বদলীয় সরকার সম্পূর্ণ স্থবির হয়ে আছে।

কিছুদিন আগে ড. কামাল হোসেন, ড. আলী আকবর খান এবং সুলতানা কামাল স্বউদ্যোগে গিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে। উদ্দেশ্য ছিল, সংকটময় পরিস্থিতি থেকে দেশকে উদ্ধার করতে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ কামনা করা। সেখানে তাঁরা অনেক কথাই বলেছেন, মতবিনিময় করেছেন। কিন্তু সারকথাটি বলেছেন উঠে আসার ঠিক পূর্বমুহূর্তে।

তাঁরা বলেছেন, রাষ্ট্রপতি যদি এই সংকটকাল কাটিয়ে ওঠার জন্য তাঁদের সহায়তা কামনা করেন, তাহলে তাঁরা সানন্দে সহযোগিতা করতে রাজি আছেন। এখানেই ছিল তাঁদের সাক্ষাতের মূল উদ্দেশ্য। উনারা সহায়তা দিতে চান। সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের দুজন হচ্ছেন উপদেষ্টা, আরেকজন হচ্ছেন ১/১১ এর গেম মেকার। সুতরাং তাঁদের দৃষ্টি যে কোথায়, তা বুঝতে কি খুব বেশি জ্ঞানী হতে হবে?

এখন প্রশ্ন করা যেতেই পারে, দেশের এই পরিস্থিতিতে সম্মানিত নাগরিক হিসেবে উনাদের যে দায়ভার, তা কি উনারা পালন করছেন? বিগত মাসগুলোতে জামায়াতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বিএনপি নামক পাকি-পন্থী দলটি দেশের যে বারোটা বাজাচ্ছে, যেভাবে নিরীহ শিশুসহ সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে, বীভৎসভাবে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করছে, সে ব্যাপারে একটা কথাও কি তাঁরা বলছেন? ন্যূনতম একটা সাংবাদিক সম্মেলন করে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বা নিন্দাজ্ঞাপন করে কি উনাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে পারতেন না?

বরং পরোক্ষভাবে সরকারের বিরোধিতা করে এবং বিএনপি-জামায়াতের 'অসাংবিধানিক' দাবির পক্ষে সমর্থন দিয়ে এই সুশীল নাগরিকগণ হত্যা, ধ্বংস, লুটতরাজকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। পর্দার আড়ালের এই তথাকথিত সুশীল সমাজের সরাসরি এবং পরোক্ষ ইন্ধনে জামাতিরা দেশে যে অরাজকতার সৃষ্টি করছে, তার দায়ভার একমাত্র এই সুশীলদেরই।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের একদিন পরেই এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে ড. কামাল হোসেন সম্পূর্ণ আইন-বহির্ভূতভাবে সাংবাদিকদের বললেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চান। একজন আইনবিশেষজ্ঞ এবং সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম হয়েও কীভাবে তিনি বিএনপির এই অসাংবিধানিক দাবির পক্ষে অবস্থান নেন তা বোধগম্য নয়।

অথচ তাঁর যথেষ্ট সুযোগ ছিল সাংবাদিকদের মাধ্যমেই বিএনপিকে তার হঠকারী রাজনীতি থেকে সরে আসার পরামর্শ দেওয়ার। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, এই তথাকথিত সুশীল সমাজ কি তাহলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে? তাঁরা কি দেশকে আবার সেই ২০০১-২০০৬ এর আহেলি যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান? দেশে যে জ্বালাও-পোড়াও হত্যাযজ্ঞ চলছে, সেগুলো কি তাঁদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়? অবস্থাদৃষ্টে এছাড়া অন্যকিছু ভাবার অবকাশ আছে বলে মনে করা যাচ্ছে না। দেশে বর্তমানে যা কিছু আছে হচ্ছে, তাতে এই তথাকথিত সুশীলদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদদ এবং সমর্থন যে আছে বললে কি ভুল বলা হবে?

এ তো গেল সুশীলদের কাণ্ডকারখানা। এবার দেখা যাক দেশের এই অশান্ত অবস্থায় বামদের ভূমিকা কী! বামদের কাণ্ডারী সিপিবি-বাসদ স্বপ্রণোদিত হয়ে দৌড়ঝাঁপ করেছেন কিছুদিন। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসলেন এক সারা সন্ধ্যা। খাওয়া-দাওয়া করলেন। আলাপ-আলোচনাও করলেন। তাঁরা অনেক ভালো ভালো কথার আদান-প্রদানও করলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের অনুরোধ মোতাবেক কিছু কথা দিয়ে তাঁদের আশ্বস্তও করলেন।

তারপর বাম-বন্ধুরা বসলেন বিরোধী শিবিরের প্রধান খালেদা জিয়ার সঙ্গে। সেখানে খাওয়া-দাওয়া না হলেও যথেষ্ট ভালো আলাপ-আলোচনা হয়েছে বলে খবরের কাগজে দেখেছি। বাম-বন্ধুরা অর্থাৎ সিপিবি-বাসদের নেতারা বিএনপি নেতাকে স্পষ্টতই বলেছেন, জামায়াতকে ছেড়ে নির্বাচনে আসতে হবে। অর্থাৎ জামায়াতের সঙ্গে জোট হলে, তাঁদের নির্বাচনী দাবির পক্ষে তাঁরা থাকবে না।

খালেদা জিয়া তাঁদের কথা শুনেছেন শুধু; কিন্তু কোনো উত্তর দেননি। অথচ এই দ্বিপাক্ষিক সভার পরে এই বামরা এমন এক হঠকারী সিদ্ধান্ত নিলেন যে সারা জাতিই স্তব্ধ হয়ে গেল। সিপিবি এবং বাসদ এখন বলছে যে, বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ না নেয়, তাহলে তাঁরাও নির্বাচনে যাবেন না। অথচ বামদের দাবি মোতাবেক বিএনপি কখনওই জামায়াত ত্যাগের কথা তো বলেইনি, বরং জামায়াতের জঙ্গীদের দিয়ে দেশে জ্বালাও-পোড়াও, হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে।

তাহলে কী দাঁড়াল? জামাত এবং বিএনপি যদি নির্বাচনের সুযোগ না পায়, তাহলে বাম-বন্ধুরা বেজায় গোস্বা করে নির্বাচন বর্জন করবেন। হঠকারিতারর একটা সীমা থাকে। এই বামরা সব সীমা ছাড়িয়ে গিয়ে এখন জামায়াতের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নির্বাচনের দাবিতে হাসিনা সরকারের পদত্যাগ চাইছেন!

বামধারার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনসমর্থন দিন দিনই কমেছে এমনিতেই সেটা ভাবার কারণ নেই। দলগুলোর নিজস্ব যে আদর্শ বা লক্ষ্য, তা পূরণে রয়েছে সীমাহীন ব্যর্থতা। দেশে প্রায় ২০টির মতো বাম রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব থাকলেও, তার তিন ভাগের এক ভাগ হয়তো কিছুটা সক্রিয়। বাকিরা প্রায় নামসর্বস্ব। সবচেয়ে হতাশার কথা হচ্ছে, এই বামরা এতটাই অপাংক্তেয় করে ফেলেছে নিজেদের যে, শেষ পর্যন্ত জামায়াত এবং তাদের দোসর বিএনপির কাঁধে ভর দিয়ে হাঁটতে হয়!

এই লেখাটি যখন লিখছি, তখন বাংলাদেশে গভীর রাত। শুনলাম, বিএনপি গভীর রাতে সংবাদ সম্মেলন করে আবারও ৭২ ঘণ্টার অবরোধ দিয়েছে। অর্থাৎ জামায়াতের আফগান-পাকিস্তান ফেরত জঙ্গিদের হাতে 'লাইসেন্স টু কিল'-এর হাতিয়ার আবারও তুলে দিয়েছে।

এর দায়ভার এখন কি শুধু বিএনপিকে দেওয়া ঠিক হবে? এর সঙ্গে তথাকথিত সুশীল সমাজসহ বামরাও কি দায়ী থাকবে না? যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় বামরা, অসাম্প্রদায়িক দেশ চায় তারা। অথচ আজ তারাই সম্ভবত কোনো মুচলেকার পরিবর্তে এই যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়ে স্বাধীনতার পক্ষশক্তির বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে! এটা শুধু দুঃখজনক নয়, নিঃসন্দেহে ভয়াবহও।

গত তিনদিনের অবরোধে মানুষ মরেছে প্রায় ২৫ জনের অধিক এবং মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে তারও দ্বিগুণ সংখ্যক। হতাহত হয়েছে অজ্ঞাত সংখ্যক। জ্বালাও-পোড়াওয়ে ভস্মীভূত হয়েছে কয়েক শত কোটি টাকার সম্পদ। অসাংবিধানিক একটি দাবিতে এভাবে বাংলাদেশকে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করছে বিশেষ একটি গোষ্ঠী। তারা কেন করছে এগুলো? এই গোষ্ঠীর সঙ্গে নীতিগত অবস্থান থেকে সরে এসে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন তথাকথিত সুশীল আর বামরা।

যারা এই দেশটাকে শত্রু দেশ হিসেবে বিবেচনা করে একের পর এক ধ্বংসযজ্ঞ, হত্যা, লুটতরাজ করে যাচ্ছে– তাদের ভোট চাওয়ার অধিকার কোথায়? কোন মুখে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা তারা উচ্চারণ করতে পারে? তারা এদেশের কে? এদের সঙ্গে কারা সংলাপে বসতে বলেন? এদের হাতে কারা দেশের অভিভাবকত্ব তুলে দিতে চান?

আজ সময় এসেছে এর জবাব চাওয়ার। আমরা কেন তাদের ভোট দেব? আমরা কেন তাদের নির্বাচনে দাঁড়ানো মেনে নেব? আমরা কেন এদের এমপি-মন্ত্রী হিসেবে বসাতে চাইব? তাহলে কি আমরাও ওদের মতো হিংস্র-জানোয়ারের কাতারেই নিজেদের দাঁড় করাতে চাই?

জ্বালানো-পোড়ানো-হত্যাযজ্ঞ দাবি আদায়ের হাতিয়ার হতে পারে না। আর এই সংস্কৃতির প্রতি যারা সহানুভূতিশীল, আজ সময় এসেছে তাদেরও 'ত্যাজ্য' ঘোষণা করার। গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ আমরা এ দেশে দেখতে চাই। কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া চলবে না। যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় না, তাদের কালের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করতে হবে।

ট্রেনের পাঁচ শতাধিক নিরীহ মানুষের জীবন বাঁচাতে অশিক্ষিত কৃষক 'তাজুল ইসলাম' যখন বিবেকের তাড়নায় উদ্যোগী হন, আমাদের মানবতাবোধ তখন মূক হয়ে যায়। তাজুলই হোন আমাদের প্রতীক— তাজুলকেই নেতা মানতে চাই– তথাকথিত সুশীল, সিপিবি-বাসদের প্রত্যক্ষ প্রশ্রয়ে বেড়ে ওঠা জামায়াত-বিএনপির নেতাদের নয়!

নবগঠিত সর্বদলীয় সরকারের উদ্দেশে একটি কথাই বলা দরকার– দেশের জনগণকে সেবার ব্রত নিয়ে, তাঁদেরই ট্যাক্সের টাকায় আপনারা বেতন নিচ্ছেন। দেশে আর্মি-বিডিআর-পুলিশ-র‌্যাব থাকা সত্ত্বেও জনগণের রক্তের বন্যা বইয়ে দিচ্ছে একাত্তরের হায়েনারা। আগুনে জ্বালিয়ে দিচ্ছে, ভেঙেচুরে তছনছ করে দিচ্ছে সারাটা দেশ। দেশ এবং জনগণকে বাঁচানাঁর দায় আপনাদের। আপনারা কি এই দায়টুকু অনুভব করছেন না?

তাহলে এখন আর সংলাপ নয়, হোক তবে প্রতিরোধ।

সুইডেন, ২৯ নভেম্বর, ২০১৩

সাব্বির খান: রাজনৈতিক বিশ্লেষক; আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।