সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে

চিররঞ্জন সরকারচিররঞ্জন সরকার
Published : 27 Nov 2013, 05:01 AM
Updated : 27 Nov 2013, 05:01 AM

সন্ত্রাস-নৈরাজ্য-খুন, রাজনৈতিক হানাহানি-মারামারির অসহনীয় বিরক্তিকর খবরের মধ্যেও অধ্যাপক জাফর ইকবাল দম্পতির পদত্যাগের খবরটা আলাদাভাবে চোখে পড়েছে। বলতে দ্বিধা নেই, খবরটা ভীষণভাবে চমকে দিয়েছে!

অধ্যাপক জাফর ইকবাল আকস্মিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলেন কেন? তিনি তো এমন ব্যক্তি নন, যিনি নিতান্ত শখের বশে প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদত্যাগ করবেন? তাহলে তিনি এমন সিদ্ধান্ত কেন নিলেন? কী এমন কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হল যে, তিনি তাঁর জীবনসঙ্গিনীকে সঙ্গে নিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন?

মনের মধ্যে একটা অস্বস্তি আর বেদনা নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম অধ্যাপক জাফর ইকবাল দম্পতির পদত্যাগের নেপথ্য কারণটি জানবার জন্য। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বন্ধুদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে কিছু কিছু ঘটনা জানলাম। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমও এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করছিল। পদত্যাগের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অধ্যাপক জাফর ইকবাল এবং তাঁর স্ত্রী ইয়াসমীন হক একটি চিঠির মাধ্যমে 'ভদ্রোচিত' ভাষায় দেশবাসীকে এ ব্যপারে বিস্তারিত জানিয়েছেন।

কিন্তু খচখচানি তাতে যাচ্ছে না। মিলছে না স্বস্তি। কেবলই মনে হচ্ছে, আমরা বুঝি আমাদের অবিমৃষ্যকারী আচরণ দিয়ে এক পরম রত্নকে অনাদরে দূরে ঠেলে দিলাম! যাঁর মাধ্যমে আমরা অনেক উপকার পেয়েছি, আরও অনেক উপকার পেতে পারতাম, তাঁকে বুঝি আমরা হেলায় বিসর্জন দিলাম!

অধ্যাপক জাফর ইকবাল সজ্জন, ভদ্রলোক। তিনি তাঁর এবং স্ত্রীর পদত্যাগের কারণ হিসেবে অত্যন্ত মার্জিত ভাষায় লিখেছেন,

'দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষার প্রস্তুতি যখন একেবারেই শেষ পর্যায়ে তখন হঠাৎ করে আমরা দেখতে পেলাম যারা এতদিন সবসময়ে আমাদের পাশে ছিলেন, তারা আমাদের পাশে নেই। সমন্বিত ভর্তিপ্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের স্বকীয়তা পুরোপুরি বজায় রেখে ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবে। শুধুমাত্র একদিনে এক প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে এবং দেশের অসংখ্য ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকদের ছুটোছুটি করতে হবে না।

এই চমৎকার পদ্ধতিটি নিয়ে কারও কোনো দুর্ভাবনা থাকতে পারে– সেটি আমরা কখনও কল্পনাও পারিনি। আমরা পুরোপুরি অবিশ্বাস এবং বিস্ময় নিয়ে আবিষ্কার করলাম বামপন্থী এবং জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রথমে বিরোধিতার সূচনা করল এবং স্বাভাবিকভাবে সেটি অন্যরা গ্রহণ করল।

মাননীয় অর্থমন্ত্রী এবং মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী যখন এই পদ্ধতিটির বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেন– তখন আমাদের মনে হয়েছে আমাদের সবকিছু নতুন করে ভেবে দেখার সময় হয়েছে। যারা সবসময়েই আমাদের সবকিছুর বিরোধিতা করে, আমরা তাদের বিরোধিতার বিরুদ্ধে এতদিন কাজ করে এসেছি।

কিন্তু যারা আমাদের স্বজন, যাদেরকে পাশে নিয়ে কাজ করে এসেছি– তারা যদি আমাদের পাশে না থাকেন, তাহলে বুঝতে হবে অবশ্যই এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের বিদায় নেওয়ার সময় হয়েছে।'

একবুক অভিমান, বেদনা আর হতাশা দিয়ে লেখা এই বিবৃতি!

অধ্যাপক জাফর ইকবাল যে পরীক্ষা পদ্ধতি প্রবর্তন করতে চেয়েছিলেন– সাদা চোখে বিচার করলে– তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণের তেমন যুক্তিযুক্ত কারণ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সঙ্গত কারণেই তাঁর প্রস্তাব মেনে নিয়েছিল। গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষা জাতির জন্য একটি শুভসূচনা হতে পারত। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি একসঙ্গে এবং একই প্রশ্ন দিয়ে ভর্তিপরীক্ষা হত, তাহলে কার মেধা কতটুকু সেটা পরিমাপ করা যেত!

এছাড়া একই ছাত্র চার-পাঁচটি জায়গায় ভর্তিপরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে গিয়ে নিজে যেমন অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তেমনিভাবে সে যদি সব কটি জায়গায় চান্স পেয়ে ভর্তি না হয় তাহলে ওই আসনগুলো শেষ পর্যন্ত খালি থেকে যায়। ফলে অনেক ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষালাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে! ভারতের আইআইটিগুলোতে এই পদ্ধতির প্রচলন রয়েছে। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের হয়রানি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিবাণিজ্য বন্ধে এই পদ্ধতি খুবই কার্যকর হওয়ার কথা।

কিন্তু আত্মঘাতী জাতি আমরা! যাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভালো হয়, কল্যাণ হয়, তেমন কিছু আমরা কখনওই করতে দিতে চাই না। অন্যের বাড়া-ভাতে ছাই দেওয়ার স্বভাব আমাদের, আমরা কি আর সহজে ভালোটা গ্রহণ করতে পারি! তাই তো সবকিছু স্থির হওয়ার পরও আমরা কিছু 'সচেতন মানুষ' বিগড়ে গেছি। সব দল এক হয়ে, আঁতাত করে, চোরে চোরে মাসতুতো ভাই হয়ে দাবি তুলেছি এই পদ্ধতি বাতিলের।

আর কর্তৃপক্ষও বুঝি মনে মনে এমন একটা মওকাই চাইছিলেন। দাবি আসুক, প্রতিবাদ আসুক, সব লণ্ডভণ্ড হয়ে যাক! আমরা যেমন ছিলাম তেমন রব। নতুন কিছু, ভালো কিছু আমরা হতে দেব না। নতুন কিছু যদি করতেই হয়, তবে তা হবে দলীয় স্বার্থে, ক্ষুদ্র স্বার্থে–ব্যক্তি, অঞ্চল বা গোষ্ঠীর স্বার্থে!

তাছাড়া অধ্যাপক জাফর ইকবালের প্রস্তাবমতো কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপরীক্ষা হবে? বিশ্ববিদ্যালয়ে কি আর শিক্ষক নেই? তাদের কি ইউরোপ-আমেরিকার ডিগ্রি নেই? অন্য কারও কোনো মতামত নেই? তাহলে কেন তাঁর ঝুলিতেই সব কৃতিত্ব জমা হবে?

সুতরাং অর্ধশিক্ষিত রাজনৈতিক পাণ্ডাদের কথামতো গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষানুষ্ঠান বাতিল করলে এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করা যাবে। মুখে না বললেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন মনোভাব থাকা মোটেও বিচিত্র নয়। আমাদের মতো পরশ্রীকাতরদের দেশে তো নয়ই!

ভুঁইফোড় 'সচেতন নাগরিকদের' দাবির প্রতি নাকি অর্থমন্ত্রী-শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ও সম্মতি জানিয়েছেন! তা হতেই পারে। তাঁরা রাজনীতির মানুষ। শ্রেয়বোধ হয়তো তাঁদেরও কাজ করে। কিন্তু আগে তো গদি। এলাকাবাসীকে বিগড়ে দিয়ে, ভোট হারিয়ে, গদি নড়বড় করে কোনো পদ্ধতিই চাই না, সে পদ্ধতি যত সুশীলই হোক না কেন!

তাছাড়া অধ্যাপক জাফর ইকবাল লোকটা মেধাবী এবং ভালোমানুষ হলেও ভীষণ একরোখা প্রকৃতির। তাঁর মতো লোকগুলো যথেষ্ট 'বিপজ্জনক'। এমন লোককে পাশে রেখে কেউই স্বস্তিতে থাকতে পারে না। কারণ 'বাপের'ও যদি 'পাপ' থাকে তাহলে এই ঠোঁটকাটা লোকটা অতিসহজ বাংলায় তার সমালোচনা করেন। আর আমরা কেউই যেহেতু ফেরেশতা নই, কাজেই লোকটা কখন থলের কোন বেড়ালটা উঁচিয়ে ধরে পুরো দেশবাসীর কাছে মাথা হেঁট করে দেন কে জানে। তার চেয়ে ঢের ভালো, এই আপদটার মানে মানে বিদায় হওয়া।

কাজেই অধ্যাপক জাফর ইকবালের প্রস্তাব সিদ্ধান্তে পরিণত হবে– এরপর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একদল 'সচেতন' মানুষ দাঁড়িয়ে যাবে এবং শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ-রথী-মহারথীদের সম্মতিতে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল হবে— আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন একজন জাফর ইকবাল অসম্মানের গ্লানি ঘোচাতে পদত্যাগ করবেন– আমাদের সমাজবাস্তবতায় এটাই তো অনিবার্য!

অধ্যাপক জাফর ইকবাল দম্পতি কেবল গুচ্ছ ভর্তিপ্রক্রিয়া বাতিল হওয়ার জন্যই পদত্যাগ করেননি, তাঁদের পদত্যাগের অন্যতম কারণ সিলেটবাসীর জন্য ৫০% কোটা রাখার বিরোধিতা করে। একবিংশ শতকে এসে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিশেষ অঞ্চলের মানুষের জন্য অর্ধেক কোটা রাখার দাবি করাটা কেবল অযৌক্তিক নয়, অন্যায়ও বটে।

যারা নানা কারণে মূলধারার ব্যক্তিদের চেয়ে পিছিয়ে পড়া, যারা মূলধারার ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকতে পারবে না, কোটা পদ্ধতিটা কেবল সেই সব পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্যই প্রযোজ্য হয়ে থাকে। কিন্তু কোনো বিশেষ কারণ ছাড়া অন্য সবার অধিকার হরণ করে শুধু একটি বিশেষ অঞ্চলের লোকেদের জন্য ৫০ ভাগ কোটা দাবি করা কি অন্যায় আবদার নয়?

অধ্যাপক জাফর ইকবাল পদত্যাগ করে সেই অন্যায়েরই প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান মেয়র আরিফুল হকের নেতৃত্বে (বিএনপি দলীয়) নেতৃত্বে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি বাতিল ও ৫০% কোটার দাবিতে ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়র কামরানসহ বিভিন্ন দলের (বাসদ, জাসদ, ন্যাপ, ওয়ার্কার্স) জেলা সভাপতিরা।

বিসিএসে কোটা বাতিলের দাবিতে যে বামরা সবচেয়ে সোচ্চার ছিল, সিলেটে নাকি তারাই ৫০% কোটার দাবিতে সবচেয়ে আপোসহীন ভূমিকা পালন করেছে! এই তথ্য যদি সত্যি হয়, তাহলে বামপন্থীদের জন্য এর চেয়ে গ্লানির, লজ্জা ও কলঙ্কের আর কী হতে পারে? হায় দেশ, হায় রাজনীতি, আর হায়রে এদেশের বাম রাজনীতি!

হতাশা নিয়েই বলছি, অধ্যাপক জাফর ইকবালের পদত্যাগ প্রমাণ করে আমরা আসলে সামনে এগোচ্ছি না। এগোতে পারছি না, এগোতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা দিনকে দিন সংকীর্ণ হচ্ছি, ছোট থেকে আরও ছোট হয়ে যাচ্ছি। আমাদের সমাজে কেউই প্রথাগত পাপাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে না। যদিও-বা কেউ একটু মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, সবাই মিলে তাঁকে মাটিতে শুইয়ে দিচ্ছি!

আমরা সবাই জানি অধ্যাপক জাফর ইকবাল আমাদের দেশের মাঝারির বড় দলে একমাত্র ব্যতিক্রম। তিনি দেশকে অসম্ভব ভালোবাসেন। তিনি অকপটে সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলেন, বলতে পারেন। জাতির দুর্দিনে, দুর্যোগে তিনি কখনও মুখ বুজে থাকেন না। তিনি তাঁর পেশার প্রতি অসম্ভব সৎ। কেউ তাঁর পেশাগত জীবন নিয়ে এতটুকু সমালোচনা করতে পারেনি।

অধ্যাপক জাফর ইকবাল কেবল একজন শিক্ষক নন, তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখকদের একজন। বর্তমান বাংলাদেশে তিনিই সম্ভবত একমাত্র ব্যক্তি যিনি পুরো বাংলাদেশের যুবসমাজকে স্বপ্ন দেখান, স্বপ্ন দেখাতে পারেন। এই অসম্ভব গুণী মানুষটি দীর্ঘ ১১ বছর আমেরিকার শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে রিসার্চ সায়েন্টিস্ট থাকার পরও সেখানে না থেকে দেশের মানুষের জন্য দেশের জন্য, স্বদেশে ফিরে এসেছিলেন। তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর সমস্ত মেধা-মনন দিয়ে তিল তিল করে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।

মোবাইলে এসএমএস-এর মাধ্যমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদনের নতুন ধারা তৈরিতে তিনি পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেছিলেন। যাঁর সর্বান্তকরণ জুড়ে স্বদেশ এবং স্বজাতির কল্যাণ কামনা এমন একজন আদর্শবান ব্যক্তিকে আমরা অপমান করেছি, অপমানিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছি। আমরা সত্যিই বড় অভাগা। তাঁর যে প্রস্তাবটি সারাদেশের সকল ইউনিভার্সিটির জন্য অনুকরণীয় ছিল সেটাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে আমরা কি একটা নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত স্থাপন করলাম না?

আমাদের সব কিছুই কি নষ্টদের দখলে যাবে? আমাদের দেশে জ্ঞানী-গুণী-সৎ মানুষেরা কি এভাবেই সমাজ থেকে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছিটকে পড়বে? তাদের মতামতের কোনো মূল্য থাকবে না? রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের চাওয়া, তাদের দাবি যত অসার, ক্ষতিকর হোক না কেন সেগুলোই মূল্য পেয়ে যাবে?

দিন যত যাচ্ছে আমাদের সমাজের কিছু লোক যেন তত জংলি হচ্ছে। যে দেশ গুণীর সম্মান দিতে জানে না সে দেশে গুণী জন্মায় না। আমরা ভবিষ্যতে এমন একটা দেশে বাস করব যে দেশে আমাদের কোনো আইডল থাকবে না, এমন একটা দেশই কি আমরা চেয়েছিলাম?

চিররঞ্জন সরকার : কলামিস্ট।