সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা অতঃপর একটি শেষ সুযোগ

ইমতিয়ার শামীম
Published : 20 Nov 2013, 10:13 AM
Updated : 20 Nov 2013, 10:13 AM

১৭ নভেম্বর রবিবার সকালে অর্থ পাচার মামলার রায়ে নির্দোষ ঘোষিত তারেক রহমানকে নিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় জনগণের মুখোমুখি বিএনপির নেতাকর্মীদের উল্লাস খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার পর তারাও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন 'সর্বদলীয় সরকার' গঠনের ঘোষণা এলে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাইয়ের দূতিয়ালিপর্ব তখনও শেষ হয়নি।

এরই মধ্যে গণমাধ্যমে চলে আসে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের পর 'সর্বদলীয় সরকার' গঠনের ঘোষণা। অনেক রাতে গুলশানের অফিসে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বৈঠকের পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের এ সিদ্ধান্তকে অভিহিত করেন 'তামাশা' হিসেবে।

এর আগে এ ধরনের উত্তেজনাকর সংবাদ গণমাধ্যমে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের নেতৃত্বাধীন জোটকে সাধারণত হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করতে দেখা গেছে। কিন্তু লক্ষ্যণীয় ঘটনা হল, এবার বিএনপি কিংবা ১৮ দলীয় জোট তেমন কোনো কর্মসূচির দিকে পা বাড়ায়নি। তার বদলে ঘোষণা করেছে, ২২ নভেম্বর শুক্রবার সারা দেশে বিক্ষোভ করার মতো সাধারণ কর্মসূচি।

যদিও এই বিক্ষোভ কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, কেননা শুক্রবার জুম্মার দিন হওয়াতে, সাপ্তাহিক ছুটি থাকাতে মসজিদ কেন্দ্র করে তাদের সমবেত হওয়া অন্যান্য যে কোনো দিনের চেয়ে সহজ ও ঝুঁকিমুক্ত। এরই মধ্যে ১৮ নভেম্বর সোমবার নতুন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীরা শপথ নিয়েছেন।

১৯ নভেম্বর মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে প্রধান বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তার প্রতিনিধিদল আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন। সেখানে প্রধান বিরোধী দলীয় নেত্রী রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করেছেন 'নির্দলীয়' সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিতে। তার আগে সিইসিও দেখা করেছেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারও রাষ্ট্রপতির কাছে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সহযোগিতা চেয়েছেন, সব দলকে অংশগ্রহণের ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ করেছেন।

দুটি বিষয় এখন আমাদের সামনে। একটি বিষয় হল, রাষ্ট্রপতি কি পারবেন 'সাংবিধানিক ক্ষমতার মধ্যে থেকে' তেমন 'ব্যবস্থা' নিতে, যার ফলে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অংশগ্রহণের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ খুলে যাবে, না কি 'আলোচনার ব্যাপারে দু দলকেই উদ্যোগ নিতে হবে' যেমনটি রাষ্ট্রপতি বলেছেন বলে জানা যাচ্ছে? দ্বিতীয় বিষয় হল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নতুন মন্ত্রিসভা কি পারবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ও গণতন্ত্র অনুশীলনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে যেতে?

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধান বিরোধী দলের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের সাক্ষাতের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন নিয়ে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন অনেকে। যদিও রাষ্ট্রপতির 'সাংবিধানিক ক্ষমতা'র বিষয়টি এবং আলোচনার ব্যাপারে 'দু দলেরই উদ্যোগের' পরামর্শ বিবেচনায় নিলে তেমন কোনো আশার আলো চোখে পড়ে না। রাষ্ট্রপতির পরামর্শ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই যেখানে কার্যত উপেক্ষা করে চলেছেন এবং সিনেট ও জাকসু নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, সেখানে জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তার আহ্বান পরস্পরবিরোধী অবস্থানে থাকা বড় দুই দল শেষ পর্যন্ত কতটুকু আমলে নেবেন, তা বলা কঠিন।

এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন 'সর্বদলীয় সরকার' শেষ পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলেও গণতন্ত্র অনুশীলনের ক্ষেত্রে কোনো ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে কি না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। এক কথায় বলতে গেলে, শুরু থেকেই 'সর্বদলীয় সরকার' গঠনের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ছিল না।

প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এ ধরনের একটি সরকার কাঠামোর অধীনে নির্বাচন করতে রাজি নয়, নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই গুরুতর সমস্যাটি বিবেচনায় বলা যায়, 'সর্বদলীয় সরকারের' কোনো সুষ্পষ্ট ব্যাখ্যা মহাজোট সরকারের পক্ষ থেকে কখনও আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরা হয়নি। নির্বাচনকালীন সরকারের সাংবিধানিক অবস্থান ও ক্ষমতার সঙ্গে এই সরকারের মিল ও অমিল কতটুকু সেটিও তলিয়ে দেখা হয়নি বা এখনও হচ্ছে না।

কেউ কেউ অবশ্য এ ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদে যাদের প্রতিনিধিত্ব আছে, তাদের সমবায়ে গঠিত সরকারের রূপরেখা বর্ণনা করছেন, কিন্তু সে দিক বিচারেও এটি সর্বদলীয় নয়– কেননা প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তার মিত্র জামায়াতে ইসলামী, বিজেপি, এলডিপি এ সরকারের বাইরে রয়েছে।

বাস্তবত 'সর্বদলীয় সরকার' হয়ে উঠেছে মহাজোট সরকারেরই একটি পরিমার্জিত সংস্করণ– যেখানে জাতীয় পার্টি ও বামপন্থী রাজনৈতিক দল ওয়ার্কার্স পার্টি সম্পৃক্ত হয়েছে মন্ত্রিত্বের সুবিধাসহ সর্বাত্মকভাবে। নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করতে গিয়ে মূল্য দিতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে।

এর ফলে একটি নির্বাচন নিশ্চয়ই অনুষ্ঠিত হবে, কিন্তু জাতীয় পার্টির হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যেমন বলছেন 'গৃহযুদ্ধ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্যে' জাতীয় পার্টি মন্ত্রিসভায় অংশ নিয়েছে এবং নির্বাচন করবে, তেমনটি নাও হতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে আবারও দেখা গেল, নিজেদের 'গণতান্ত্রিক' এবং 'নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতার পরিবর্তনে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল' হিসেবে দাবি করলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনুশীলন বাস্তবে সে রকম নয়। গত কয়েক মাসের ঘটনাপ্রবাহ বলছে, বিএনপিকে নির্বাচনে আনার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ কার্যত যথেষ্ট মনোযোগী ছিল না; ঠিক তেমনি নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও বিএনপি যথেষ্ট আন্তরিক ছিল না।

আর এর কারণ, বোধকরি, প্রকাশ্যে দল দুটির নেতারা যাই বলুন না কেন, ভেতরে ভেতরে তারা নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার ভয়ে আতঙ্কিত। যদিও গত কয়েক বছরের সংসদ নির্বাচনের ভোট বিশ্লেষণ থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ভোট পাওয়ার ব্যাপারে তারা নিশ্চিত, ভাসমান ভোটারদের শেষ রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে তারা নিশ্চিত নন। এটি গেল এক দিক।

অন্যদিকে, গত পাঁচ বছরে বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধ বিচারের রাজনীতি দুটি দলের ভেতরকার রাজনীতিকে নতুন করে বিন্যস্ত করেছে। আওয়ামী লীগের মধ্যেকার কট্টর ডানপন্থীদের দোদুল্যমানতা এ বিচারপ্রক্রিয়ার কারণে অতীতের চেয়ে বেড়েছে। অন্যদিকে বুর্জোয়া গণতন্ত্রী ও অর্থনৈতিক সমতাবাদী ধারার চেতনাযুক্ত অংশ দুটোর সংহতি আগের চেয়ে অনেক বেশি। এর বিপরীতে বিএনপিতে কট্টর ডানপন্থীদের সংহতি বেড়েছে, দোদুল্যমান হয়ে পড়েছে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অংশটি।

নতুন এই সমীকরণ দল দুটিকে নির্বাচনে নিজের দলের ভোটারদের অংশগ্রহণের প্যাটার্ন সম্পর্কেই সংশয়াচ্ছন্ন করে তুলেছে। সংলাপ কেন্দ্র করে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তাতেও দেখা যায়, নানা অজুহাতে দু দলই চেয়েছে পরস্পর থেকে দূরে থাকতে। মনে হয়েছে, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে তার বিজয় নিশ্চিত করার জন্যে বিএনপিকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাইছে।

সম্প্রতি 'বিএনএফ' নামের একটি দল নিবন্ধনভুক্ত হওয়াতে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আরও শক্ত হয়েছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্যে পাঁচটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের উদাহরণ অন্তত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে যথেষ্ট নয়।

অন্যদিকে পরাজয়ের আশঙ্কা থেকে মুক্ত হতে বিএনপি 'নির্দলীয়' সরকারের দাবি সামনে রেখেছে, অনাকাক্ষিতভাবে সংসদ বর্জন করেছে এবং আলোচনার সব সম্ভাবনার ক্ষেত্র এড়িয়ে চলেছে। জনগণকে তারা তাদের ব্যাপারে আশংকিত করে তুলেছে যুদ্ধাপরাধী বিচারের ক্ষেত্রে নেতিবাচক অবস্থান নিয়ে।

পরবর্তী সময়ে তারা 'নির্বাচনকালীন সরকারের' দাবিতে নেমে এসেছে বলে শোনা গেলেও এ ক্ষেত্রে যেসব শর্তের কথা শোনা যাচ্ছে, তাতে আলোচনা সংক্রান্ত সম্ভাবনার দুয়ার যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সংলাপের ক্ষেত্রে তাদেরও যে আন্তরিকতা ছিল না তা লেখাই বাহুল্য।

এবারের নির্বাচন বিএনপির জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কেননা তারা সাত বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে আছে– তাই তারা নিশ্চিত হতে চাইছে বিজয়ের ব্যাপারে এবং কোনো জরিপই তাদের আসলে সন্তুষ্ট করতে পারছে না। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সংলাপ ও আলোচনার কথা বলছে বটে, কিন্তু তার প্রধান মিত্র জামায়াতে ইসলামী, পাশাপাশি বিভিন্ন মৌলবাদী দলগুলোর ভূমিকা সত্যিই রহস্যময়।

এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড ও মিরসরাইয়ের অংশে যে ধরনের নাশকতা শুরু হয়েছে, তাতে বিজিবি-র‌্যাব ক্যাম্প বসানোর সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম মাঝেমধ্যেই পুরো বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। এই নাশকতামূলক পরিস্থিতি দেশের জন্যে উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে।

নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিদেশি কূটনীতিকদের ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। ড্যান মজিনা যখন বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে বাইরের কারও 'হস্তক্ষেপের' প্রয়োজন হবে না, তখন অন্তত এটুকু বোঝা যায়, 'হস্তক্ষেপে'র অধিকার তারা রাখেন, কিন্তু সে রকম করতে তারা আগ্রহী নন। আরও অনেক ঝামেলা আছে তাদের, 'হস্তক্ষেপ' করে ঝামেলা বাড়াতে আগ্রহী নন তারা।

অতএব বাংলাদেশের রাজনীতিকদের ঝামেলা বাংলাদেশের রাজনীতিকদেরই মেটাতে হবে– 'এ'র বদলে 'বি' এলেও তাদের কোনো সমস্যা নেই, যেমন সমস্যা নেই 'বি'র বদলে 'এ' এলেও। তাই 'হস্তক্ষেপের' সুযোগ থাকলেও 'হস্তক্ষেপ' করবেন না তারা। বরং নিরাপদ দূরত্বে থাকবেন এবং ক্রমাগত 'আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যেকার দূরত্ব দূর' করার পরামর্শ দিয়ে চলবেন।

আমরা অসহায়, 'হস্তক্ষেপ' করার ক্ষমতা থাকার কথা সাড়ম্বরে জানিয়ে দেওয়ার এই অপমান আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে; যেমন আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে গণতন্ত্রের দাবিদারদের সঙ্গে এরশাদের নৈকট্য! একটি দেশের রাজনৈতিক দলগুলো যখন তাদের দেশের জনগণকে এ রকমভাবে অপমান করে, তখন তারা আসলে নিজেদের ধ্বংসের পথই প্রস্তুত করতে থাকে।

এভাবে 'সর্বদলীয় সরকার' গঠন করায় নব্বইয়ের দশকে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনকারী অন্যতম দল আওয়ামী লীগ ও বামপন্থী দল জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির কাছ থেকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও তার দল জাতীয় পার্টি পুনরায় স্বীকৃতি পেল, বৈধতা পেল; এইসব রাজনৈতিক দলগুলোর কথিত গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার অন্যতম অংশীদারে পরিণত হল।

নব্বইয়ের দশকে আমাদের রাজনীতিকদের সামনে একটি সুবর্ণ সুযোগ এসেছিল সামরিক শাসনের পতন ঘটিয়ে একটি জাতীয় সরকার গড়ে তুলে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ। কিন্তু পারষ্পরিক আস্থাহীনতার কারণে তার সমাধান হিসেবে এসেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

এবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার কাঠামো দূরে সরিয়ে দিয়ে সেই পারস্পরিক আস্থাহীনতা কাটিয়ে ওঠার আরও একটি সুযোগ এসেছে আমাদের রাজনীতিকদের সামনে। এ ক্ষেত্রে এমন হতে পারে, একটি কার্যকর সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বিএনপিকে যেমন 'নির্দলীয়' সরকারের দাবি থেকে সরে আসতে হবে, ঠিক তেমনি আওয়ামী লীগকেও সরে আসতে হবে নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধান সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত থেকে।

যদিও প্রধানমন্ত্রী পদটির যে নির্বাহী ক্ষমতা রয়েছে, তা কীভাবে নিস্ক্রিয় করা সম্ভব হবে এবং এর বদলে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা সক্রিয় করা যাবে তা কারও কাছেই স্পষ্ট নয়। কিন্তু এই দল দুটি যদি সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পারে তাহলে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যে পারষ্পরিক আস্থা থাকা প্রয়োজন তা সৃষ্টির দরজা উন্মোচিত হতে পারে।

পাঁচ বছর আমরা যে দলের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা তুলে দিতে পারি, নির্বাচনের সময় এলেই তাদের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হওয়ার রক্তাক্ত খেলা তাহলে অন্তত বন্ধ হতে পারে। গার্মেন্টস শ্রমিক, রিকশাওয়ালা, সিএনজিচালকরা নিশ্চিতে কাজে যেতে পারেন। অফিসসমুখো, ঘরমুখো মানুষ নিশ্চিন্তে রাস্তায় নামতে পারেন। সন্তানদের পরীক্ষার হলে পৌঁছে দিতে পারেন। স্কুল থেকে নিয়ে আসতে পারেন।

শান্তি না হোক, স্বস্তি পেতে পারেন তারা।

ইমতিয়ার শামীম : লেখক, সাংবাদিক।