হারানো যুদ্ধকে কি ফিরে পাব আমার…

আবেদ খান
Published : 15 June 2017, 04:27 PM
Updated : 11 Nov 2013, 04:58 PM

ডেইলি স্টারে কয়েকদিন আগে প্রথম পৃষ্ঠায় একটি ছবি ছাপা হয়েছিল। প্রথমে এক ঝলক দেখে বুঝতে পারিনি, ছবিটা কীসের। বাচ্চারা অনেক সময় যেমন-খুশি-সাজো প্রতিযোগিতায় মাটির মূর্তি সেজে থাকে, প্রথম ঝলকে ঠিক তেমনটিই মনে হয়েছিল। কিন্তু চমকে উঠলাম ক্যাপশনটি দেখে। ওটা কোনো মাটির মূর্তি নয়, হরতালের আগুনে কয়লা-হয়ে-যাওয়া এক জ্যান্ত কিশোর! রাস্তায় পা ছড়িয়ে বসে আছে, নিঃসঙ্গ, একাকী। কিশোরটির নাম মনির। পিতার সঙ্গে একটি কাভার্ড ভ্যানে যাচ্ছিল, হরতালকারীরা সেটা মনিরসহ পুড়িয়েছে পেট্রল ঢেলে। ডেইলি স্টারের ক্যাপশনে কৈফিয়ত হিসেবে লেখা হয়েছে যে, তাঁরা পত্রিকায় সাধারণত কোনো বীভৎস আলোকচিত্র প্রকাশ করে না নীতিগতভাবে। কিন্তু আলোকচিত্রটি এতোই মর্মস্পর্শী, এতোই হৃদয়বিদারী, এতই মানবতাবিরোধী যে দুর্বৃত্তদের নৃশংসতার মাত্রা পাঠকের কাছে তুলে ধরার দায়বোধ থেকে সেটা প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপানো হয়েছে। এজন্য পত্রিকাটি পাঠকের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছে।

আলোকচিত্রটি দেখার পর থেকে আমার করোটিতে মনিরের ওই বিপন্ন অঙ্গারপ্রায় চিত্রটি হরতালের হিংস্রতার প্রতীক হিসেবে স্থায়ীভাবে খোদিত হয়ে গেছে। প্রতি মুহূর্তে মনে হচ্ছে আমি যেন সেই পিতা যে তার সন্তানকে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে দুর্বৃত্তদের আগুন ও বোমার শিকারে পরিণত হয়েছে। যেন আমার চোখের সামনে দগ্ধীভূত হয়েছে আমার মনির। ছটফট করছে, তারপর একসময় অসহায়ের মতো রাস্তায় পা ছড়িয়ে বসেছে। তার শরীরের ভঙ্গি এক বিশাল জিজ্ঞাসা-চিহ্নের মতো হয়ে বিশ্ব বিবেকের কাছে প্রশ্ন তুলে যেন বলছে নীরব ভাষায়–আমার কী দোষ? আমাকে কেন এভাবে পুড়ে মরতে হবে?

এই আলোকচিত্রটি ডেইলি স্টারে প্রকাশিত হওয়ার পর আমরা কয়েক জন পাবনার সাঁথিয়ায়, যেখানে একটি ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টির মিথ্যা তথ্য প্রচার করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছিল, সেখানে গিয়েছিলাম। আমাদের সঙ্গে ছিলেন পুলিশের উচ্চপদস্থ অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শ্রী সত্যরঞ্জন বাড়ৈ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন, অধ্যাপক ড. রোবায়েত ফেরদৌস, মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও শালিস কেন্দ্রের প্রতিনিধি পদ্মাবতী দেবনাথ, গণজাগরণ মঞ্চের ম্লোগানকন্যা হিসেবে খ্যাত লাকী আক্তার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজীব নূর, চিত্র পরিচালক রাশেদ রাইমসহ প্রায় বারো জন। পথেই খবর পেলাম চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও মনিরকে বাঁচানো যায়নি। কোনো একটি অনলাইন পত্রিকায় দেখেছিলাম সন্তানহারা পিতার স্তম্ভিত চেহারার ছবি।

২.
রাত আটটার দিকে আমাদের টিমটি গিয়ে পৌঁছল বনগ্রাম এলাকায়। মনে হলো যেন পুরো এলাকাটা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে মার খাওয়া পশুর মতো। স্তব্ধ হয়ে আছে, যেন গুমড়ে মরছে অন্ধ আক্রোশে। আমরা দুটো ধর্মীয় সংখ্যালঘু অধ্যুষিত পাড়ায় গিয়েছিলাম, যে দুটি আক্রান্ত হয়েছে। সমগ্র এলাকায় জামায়াতের কর্তৃত্ব আছে, আছে চরমপন্থীদের সদর্প পদচারণা, তাদের সঙ্গে জামায়াতের গোপন সমঝোতা। আর আছে আওয়ামী লীগের বিবদমান একাধিক গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব। অন্য অনেক অঞ্চলের মতো বেরা উপজেলাতেও সরকারী দল আত্মদ্বন্দ্বে ক্ষতবিক্ষত, আর সেই সুযোগটি গ্রহণ করছে জামায়াত-হেফাজতসহ বিভিন্ন ধর্মান্ধ প্রতিষ্ঠান। তাদের আচ্ছাদনে জঙ্গিদের বিপুল অর্থ এবং অস্ত্রের মজুদ গড়ে উঠছে সেখানে। আবদুস সোবহান ও মতিউর রহমান নিজামীর মতো প্রথম সারির মানবতাবিরোধী অপরাধীদের এলাকা পাবনাকে কেন্দ্র করে এবার তাই ব্যাপক প্রস্তুতি আছে। ব্যাপক অর্থ-বিনিয়োগ আছে। এবং এগুলো প্রয়োগ করা হচ্ছে নানাবিধ কৌশলে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিজামীর ব্যারিস্টার-পুত্র নাকি সেখান থেকে বিএনপির প্রার্থী হবেন, যদি জামায়াতের নির্বাচন করার অধিকার না থাকে। আবার পাবনা সদরে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা শিমুল বিশ্বাস চরমপন্থী রাজনীতির ধারা থেকে উঠে আসা মানুষ, জামায়াত ও জঙ্গিবাদ প্রশ্নে তার অবস্থান বেশ অস্পষ্ট। ঠিক এ ধরনের রাজনীতির মিশ্র স্রোতের মধ্যে সবচাইতে অসহায় অবস্থায় আছে ওই অঞ্চলের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। বিভিন্ন সময় তারা চাঁদাবাজিসহ ব্যাপক নিপীড়নের শিকার হয়েছে। নানা অজুহাতে তাদের কাছ থেকে চাঁদা দাবী করে বিভিন্ন মহল, আর নানাভাবে মনে করিয়ে দেওয়া হয় তাদের ধর্মীয় পরিচয়। প্রশাসনযন্ত্রও সেখানে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে না।

যে বাড়ি থেকে ঘটনার সূত্রপাত, আমরা সেই বাবলু সাহার বাড়িতে গেলাম। বাবলু সাহার বাড়ির কাছাকাছি যেতেই আঁচ পাওয়া গেল যা দেখতে যাচ্ছি তার-ই কিছু আলামত। ঢোকার আগেই বাঁ দিকে চোখে পড়ল একটি বিচূর্ণ মন্দির। আর বাড়িতে ঢোকার আগে দেখা গেল প্রতিবেশী বাড়ির টিনের দেওয়াল কুড়ালের আঘাতে জর্জরিত। আর বাবলু সাহার বাড়ি? না দেখলে বোঝা যাবে না–কী নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে বাড়িটার ওপর। ভেঙে-চুরে চুরমার করা হয়েছে সব কিছু। সেই ২০০১-এর মতো একই চিত্র। ভাঙচুর, লুট, অগ্নিসংযোগ। পরিস্থিতি আন্দাজ করে বাড়ির এবং এলাকার সংখ্যালঘু লোকজন খুব দ্রুত বাড়িঘর ছেড়ে চলে যাওয়ায় তাদের প্রাণ এবং দৈহিক সম্ভ্রম দুটোই বেঁচেছে।

নভেম্বরের ৪ তারিখে পুরো বনগ্রামে যে কী লঙ্কাকাণ্ড ঘটেছে, তা ভাষায় বর্ণনা করাও অসম্ভব। সকাল দশটা সাড়ে দশটা থেকে প্রায় চার-পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলেছে এই উন্মাদনা। অবাক হয়ে গেলাম আমরা ঘটনা সূচনার ব্যাপারটি শুনে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বাবলু সাহা ৪ তারিখ সকালবেলা প্রতিদিনকার মতো তার দোকানে যাচ্ছিলেন। সেদিন ছিল হাট বার, অন্যদিকে বিরোধীদলের হরতাল। কিশোরপুত্র রাজীব গিয়েছিল পাবনায়। হঠাৎ কয়েকজন এসে রাজীবকে খুঁজতে শুরু করল। কারণ একটাই–রংধনু প্রেস থেকে একটি লিফলেট ছাপানো হয়েছে, সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজীব সাহা নামের এক তরুণ নাকি তার ফেইসবুকে মহানবীকে কটূক্তি করে স্ট্যাটাস দিয়েছে! কাজেই তাদের এখন রাজীবকেই চাই। বাবলু সাহা প্রমাদ গোণেন, এক বন্ধুর দোকানে আত্মগোপন করে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। ফেইসবুকে স্ট্যাটাসের এই গুজবটি ক্রমান্বয়ে দাবানলের মতো ছড়িয়ে গেল সর্বত্র। লাঠি-দা-কুড়াল-কাস্তে নিয়ে ধর্মোন্মাদ মানুষ শুরু করল ধ্বংসযজ্ঞ। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পঁয়ত্রিশটি বাড়ি ও এগারোটি মন্দির তছনছ হয়ে গেল। আক্রান্ত হলো সাহা পাড়া আর ঘোষ পাড়া।
সেই একই ঘটনা–রামুর উত্তম বড়ুয়ার মতো একই গল্প। এখানেও লক্ষ্য তরুণ প্রজন্ম। উদ্দেশ্য একটাই–মানুষের বিজ্ঞানমনস্ক চেতনাকে ভেঙে দিতে হবে হয় আজগুবি রূপকথা দিয়ে কিংবা গুজবের কৃপাণ দিয়ে। কিশোর তরুণরা যাতে বিজ্ঞান কিংবা আধুনিক প্রযুক্তির সংস্পর্শে না আসতে পারে, তার জন্য প্রাণান্তকর প্রয়াস অন্ধকারের বাসিন্দাদের। এজন্য সবচাইতে উপাদেয় চারণক্ষেত্র হচ্ছে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভূমি। তাই কখনো হিন্দু কখনো বৌদ্ধ কখনো খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীর ওপর আক্রমণ চলেছে। ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জাতি-গোষ্ঠীর ওপর কৌশলী হামলা পরিচালিত হয়েছে। আর ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালানোর জন্য প্রতিটি মুহূর্তে ভারতকে জুজু হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। এটা '৪৭-এ হয়েছে, '৫০-এর দাঙ্গায় হয়েছে, '৫২-এর ভাষা আন্দোলনের সময় হয়েছে, পাকিস্তান আমল থেকে বাংলাদেশ আমল পর্যন্ত প্রতিটি সামরিক শাসনের সময় হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের সময়ও হয়েছে, আবার '৭৫-এ জাতির জনককে প্রায় সপরিবারে হত্যা এবং কারাগারে চার জাতীয় নেতাকে হত্যার সময়ও হয়েছে। এভাবে বারবার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সঙ্গে প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে জড়িয়ে ব্যাপক প্রচারণার এবং তার পেছনের রাষ্ট্রব্যবস্থার একটি সক্রিয় ভূমিকা থাকার কারণে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানসিক শক্তি নিঃশেষ প্রায়। সংখ্যাগুরু এবং সবলের আশ্রয় প্রার্থনা করা ছাড়া তাদের আর কোনো গত্যন্তর নেই। সেই জন্য তাদের নিরাপত্তাহীনতা ৬৬ বছরেও কাটেনি। মাঝখানে মাত্র কয়েক বছর মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর থেকে বঙ্গবন্ধুর আমল পর্যন্ত তারা কিছুটা বাঙালি জাতিসত্ত্বার অনুভূতিটি ফিরে পেতে যাচ্ছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমানের মতো সামরিক জান্তার মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাবিরোধী অবস্থান এবং এরশাদের সামরিক জান্তার রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের আত্মবিশ্বাসের সামান্যতম অবলম্বনকেও পদাঘাত করে সরিয়ে দেয়। ২০০১ সালে বিএনপি জামায়াত জোট সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভের পর পরই যে ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়েছিল সংখ্যালঘুদের ওপর, তা ভাবলেও শিহরিত হতে হয়। সে সময় খালেদা জিয়া দায়িত্বগ্রহণে কিছু দিন বিলম্বই করেছিলেন জামায়াত শিবির ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বর্বরতা অবাধে চলতে দেওয়ার জন্য। ওই সময় বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের আত্মবিশ্বাসের শেষ রেখাটিও মুছে যায়।

বনগ্রামের তাণ্ডবে আমরা দেখলাম সেই নিরাপত্তাহীনতারই ছায়া। ওরা হামলাকারীদের হোতাদের চেনেন, কিন্তু তাদের নাম বলতে চান না। আবার পুলিশের কাছেও দুর্বৃত্তদের পরিচয় দিতে চান না। কারণ তারা অভিজ্ঞতা থেকে জানেন, দুর্বৃত্তরা মুহূর্তেই অভিযোগকারীর পরিচয় জেনে যায়। একজন শিক্ষয়িত্রী জানালেন, হামলাকারীদের কাউকে কাউকে তিনি চিনলেও প্রকাশ করবেন না, কারণ তাদেরই একজনের প্রতিষ্ঠানে তিনি কর্মরত। এখানে প্রকাশ্য দিবালোকে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজন প্রধান শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের সামনে ধরে এনে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়, কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি। মামলা হয়, কিন্তু দ্রুত তারা জামিন পেয়ে যায়। তারপর পুলিশ প্রশাসন থেকে বলা হয় দুই পক্ষের মধ্যে আপোস হয়ে যাওয়ায় মামলা তার কার্যকারিতা হারিয়েছে। আমরা পুলিশ প্রশাসনের কোনো এক সদস্যের মুখ থেকে শুনলাম–আপোস হয়ে গেছে। আমি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম–দুর্বল আর সবলের আপোস হবে কী করে? দুর্বলের আপোস মানে তো আত্মসমর্পণ।

এই যদি হয় পরিস্থিতি, তাহলে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা কীভাবে ফিরে পাবে আত্মবিশ্বাস? আর কীভাবে সৃষ্টি করবে প্রতিরোধ? আমি তা বুঝি না। যখন দেড়-দু হাজার লোক দা-চাপাতি-কুড়াল-লাঠিসোটা নিয়ে ধ্বংসলীলা চালাতে থাকে অবলীলায়, তখন গ্রামের বধূ-কন্যাদের সম্ভ্রম রক্ষার জন্য দ্রুত সরিতে দেওয়া হবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। এবং তেমনটিই ঘটেছে বনগ্রামে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ যার হাতে, সেই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী স্বয়ং এই অঞ্চলের নির্বাচিত প্রতিনিধি। তিনি নিশ্চয়ই জানেন, এই অঞ্চলের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা কীভাবে তাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছিলেন। তাদের কী প্রত্যাশা ছিল? প্রত্যাশা ছিল তাদের জানমাল এবং সম্ভ্রমের নিরাপত্তা। তারা চেয়েছিলেন হামলার সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি সাহসের সঙ্গে বুক চিতিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে বলবেন, আগে আমাকে বধ করো, তারপর ওদের দিকে হাত বাড়াও। কেন তিনি এলেন না সময় মতো? কেন দেরি করেছিলেন, কাছেই তো ছিলেন। তিনি নাকি অপরাধীদের শাস্তিবিধানের কথা বলে এই উক্তি করেছিলেন–সন্ত্রাসীদের কোনো দল নেই। তিনি এই আশ্বাস দিয়েছেন শুনে আমাদের দলের রোবায়েত ফেরদৌস বলেছেন, আসলে সন্ত্রাসী ছাড়া দল নেই।

৩.
এখন আমরা সাহসী মানুষ দেখতে চাই। দেখতে চাই সেই সব নেতাকে যাঁরা ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার সময় নিজেদের জীবন বাজি রেখে নেত্রীর ওপর নিরাপত্তার ছাদ তৈরি করেছিলেন। এখন আর সেই সব সাহসী মুখ দেখি না কেন? ক্ষমতা কি তাদের সকলের সাহসটুকুও শুষে নিয়েছে?

হায়রে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ী বাঙালি, আজ জামায়াতি-শিবির-বিএনপির পটকা আর পেট্রল বোমার ভয়ে ঘরে বন্দি থাকে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুলিশরাও যখন জামায়াত শিবিরের পিটুনীতে আতঙ্কিত হয়ে পলায়ন করে, তখন সত্যিই মনে হয় জামায়াত শিবিরের হাতে মার খাওয়ার জন্যই কি বাঙালি মুক্তিযুদ্ধ করেছিল? তাই আমি আজ সর্বত্র অঙ্গার-হয়ে-যাওয়া মনিরকে দেখি। আগুনে ঝলছে যাওয়া অসহায় মনির মানবতার কাছে প্রশ্নবোধক চিহ্নের মতো বিপন্নতার কথা বলে, আর তার অগ্নিদগ্ধ দেহ দেখে হায়েনারা হাসে, পরিহাস করে। আমি মনিরের ছায়া দেখি বনগ্রামের ধ্বংসস্তূপে পরিণত বাড়িগুলোর দেহে। আমি মনিরের ছায়া দেখি বিধ্বস্ত মন্দিরের হাত-পা ভাঙা কবন্ধ বিগ্রহে।

এরপরও কি বাঙালি জাগবে না?

লেখক : সাংবাদিক, প্রকাশিতব্য দৈনিক জাগরণ-এর সম্পাদক।