ফাঁকা মাঠে গোল ও বিএনপির একগুঁয়েমি

চিররঞ্জন সরকারচিররঞ্জন সরকার
Published : 6 Nov 2013, 07:54 PM
Updated : 6 Nov 2013, 07:54 PM

সন্দেহ, সংশয় আর অনিশ্চয়তায় দোলাচলে দুলছে দেশের রাজনীতি ও ভবিষ্যৎ। দেশে কী হবে বা কী হতে যাচ্ছে– এ ব্যাপারে বর্তমানে কেউ স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না। ক্ষমতাসীনরা জোর গলায় বলছেন, যথাসময়ে নির্বাচন হবে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে, সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে।

এতদিন ক্ষমতাসীনরা আরও বলে এসেছেন, সে নির্বাচনে বিএনপি ঠিকই অংশ নেবে। এখন অবশ্য তারা নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের বিষয়টি আর বলছেন না। তারা বলছেন, শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে। সে নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও নির্বাচন হবে।

এদিকে বিএনপি নেতারা অবিরাম বলে চলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া অন্য কোনো ব্যবস্থায় বা বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে তারা অংশ নেবেন না। তারা তথাকথিত সর্বদলীয় সরকারেও অংশ নেবে না। সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার হুমকি দিয়ে চলেছেন তারা।

ইতোমধ্যে দু দফায় ৬০ ঘন্টার হরতাল পালিত হল। এর পর অবরোধ, লাগাতার হরতালের মতো 'কঠিন' কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও তারা ক্রমাগত হুঁশিয়ারি দিয়ে চলেছেন। প্রধান দুই দলের পরস্পরবিরোধী এই অবস্থানের কারণে সব দলের অংশগ্রহণে একটি আপাত গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা ক্রমান্বয়ে ফিকে হয়ে আসছে।

বর্তমানে দেশে যা চলছে তা হচ্ছে রাজনৈতিক অচলাবস্থা। এটা কাটানোর উদ্যোগ কদিন আগে বেশ জোরেশোরেই শুরু হয়েছিল। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে টেলিফোনও করেছিলেন। কিন্তু বিরোধী দলীয় নেত্রী হরতাল প্রত্যাহার করতে এবং প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবিত সর্বদলীয় সরকারের ধারণায় সম্মত না হওয়ায় মূলত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা উবে যায়।

এরপর থেকে চলছে দোষারোপের পালা। সরকারি দল বিরোধী দল বর্তমান অচলাবস্থার জন্য পরস্পরকে দায়ী করে প্রতিনিয়ত বক্তব্য রাখছে। সরকারি দল সংলাপের নামে নাটক করছে, তারা আসলে সংলাপ চায় না– এমন অভিযোগ করছে বিরোধী দল। পক্ষান্তরে বিরোধী পক্ষ সংলাপে যোগ না দিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের নামে রাজাকারদের বাঁচাতে চায়, দেশকে ধ্বংস করতে চায়– এমন অভিযোগ সরকারি দলের।

বর্তমানে যা চলছে, যা হচ্ছে, সরকারি দল ও বিরোধী পক্ষ যা বলছে তা মূলত রাজনৈতিক কৌশলের খেলা। এ খেলায় আপাতত বিরোধী পক্ষ খানিকটা বেকায়দা অবস্থাতেই রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোন আমন্ত্রণের পর বিরোধী দলীয় নেতা যদি আলোচনায় সাড়া দিতেন, একদিন বা দেড়দিনের হরতালের পর বাকি হরতাল প্রত্যাহার করে আলোচনায় বসতেন, তাহলে নিঃসন্দেহে দেশের রাজনৈতিক আবহাওয়া ভিন্ন হত।

আলোচনায় যোগ দেওয়ার পর যদি সরকারি দল নিজেদের পাতে ঝোল টানার চেষ্টা বেশি করত, তাহলে বিরোধী দল বলতে পারত– সরকারি দল আসলে সমঝোতা চায় না, কাজেই তাদের সঙ্গে আর কোনো আলোচনা নয়, এখন কেবল আন্দোলন– তাহলে দেশের মানুষের কাছে তা অনেক বেশি যুক্তিগ্রাহ্য ও গ্রহণযোগ্য হত। কিন্তু বিরোধী দল সেই সুযোগ নষ্ট করেছে। দেশবাসী দেখেছে, তারা একরোখা, তারা হরতাল চায় পছন্দমতো, আবার আলোচনাও চায় ইচ্ছেমতো। এত বেশি চাওয়া তো আর সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।

তাছাড়া বিরোধী দলের ভাবমূর্তি দেশের যুক্তিশীল মানুষজনের কাছে ততটা উজ্জলও নয় যতটা তারা মনে করেন। বিরোধী দলের সবচেয়ে বড় কলঙ্ক হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী-রাজাকারের দল জামায়াতে ইসলামের প্রতি অতিমাত্রায় নমনীয়তা, সমর্থন ও নির্ভরতা। এই দলটির সন্ত্রাসী-অমানবিক কর্মকাণ্ড শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ কোনো দিনই মেনে নিতে পারেনি।

বর্তমান সরকারের আমলে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষনেতাদের ফাঁসি এবং মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়েছে। এমনকি আদালতে এই দলটির নিবন্ধনও বাতিল করা হয়েছে। এই দলটি গত প্রায় দুই বছর ধরে আইন, আদালত ও রাষ্ট্রবিরোধী অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

পুলিশ খুন, থানা আক্রমণ, বোমাবাজি, পুড়িয়ে মারা, সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সৃষ্টিসহ তারা দেশবিরোধী, সভ্যতা ও মানবতাবিরোধী কাজ চালিয়ে গেলেও বিএনপি প্রকাশ্যে তাদের কর্মকাণ্ড সমর্থন দিয়ে গেছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতাদের মুক্তি দাবি করে বিরোধী দলের চেয়ারপারসন একাধিক জনসভায় বক্তব্য রেখেছেন। এমনকি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে তাদের সবাইকে মুক্ত করা হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন।

দেশের প্রধান বিরোধী দলের এই অবস্থান এবং বিরোধী দলীয় নেত্রীর এ ধরনের বক্তব্য শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের মোটেও সন্তুষ্ট করতে পারেনি। কেননা একটি চিহ্নিত অপশক্তিকে সঙ্গে নিয়ে অন্য আরেকটি নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামলে তা সমর্থনযোগ্য হয় না, ফলপ্রসূ তো নয়ই।

নানা দিক থেকেই বিএনপি বর্তমানের রাজনৈতিক কৌশলের খেলায় পিছিয়ে আছে। দলটি কেবল ক্ষমতাসীনদের নানা অপকর্মের কথা বলছে, কিন্তু নিজেরা ক্ষমতায় গেলে কী করবে, দেশের মানুষের কী এমন কল্যাণ হবে– সেটা মোটেও স্পষ্ট করতে পারেনি। শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে মানুষকে ভোলানো কঠিন।

গণতন্ত্রের কথা বলে, নির্দলীয় নির্বাচনের কথা বলে দিনের পর দিন হরতাল, অবরোধের নামে বোমাবাজি নৈরাজ্য চালিয়ে গেলে তাতে সাধারণ মানুষের কী লাভ? নির্দলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে এর আগে বিএনপি দুইবার ক্ষমতায় এসেছিল, কিন্তু তখন সত্যি সত্যি দেশ বা জাতি কী পেয়েছে? বিএনপি সরকার দেশের কল্যাণে কী কী কাজ করেছে? এসব প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব বিরোধী পক্ষের কাছে আছে কি?

বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। গত পাঁচ বছরে বিরোধী দলের কোন আন্দোলনটা দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে পরিচালিত হয়েছে? অথচ গত পাঁচ বছরে সরকারের অনেক অপকর্মের ব্যাপারে দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে প্রত্যাশা করেছে, এর বিরুদ্ধে বিরোধী দল একটা শক্ত আন্দোলন গড়ে তুলুক। সাধারণ মানুষের পক্ষে কিছু একটা করুক।

কিন্তু আমরা অবাক হয়ে দেখেছি, সরকারের অপকর্মের বিরুদ্ধে, সাধারণ মানুষের স্বার্থের পক্ষের দাবিগুলো বিরোধী দলের তালিকায় ছিল সবসময় তলানিতে। বিরোধী দলের গত পাঁচ বছরের দাবিগুলো ছিল খালেদা জিয়া ও তার সন্তানদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে; সাধারণ জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও চাওয়া-পাওয়া নিয়ে বিএনপির কোনো আন্দোলন চোখে পড়েনি।

দেখা গেছে বর্তমান বিরোধী দল সরকারে থেকে যেমন দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থে উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেনি দুর্নীতি-সন্ত্রাস-অপকর্ম ছাড়া– ঠিক তেমনি বিরোধী বিরোধী দলে থাকাকালীনও দেশ ও জনগণের স্বার্থে ন্যূনতম কোনো সাফল্যই দেখাতে পারেনি।

পাশাপাশি একথাও ঠিক যে আওয়ামী লীগও জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করতে পারেনি। আওয়ামী লীগের গণবিরোধী বিভিন্ন উদ্যোগের তালিকা প্রস্তুত করাও কোনো কঠিন কাজ নয়। কিন্তু তারপরও বিএনপি বিরোধী দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে কখনওই অতিক্রম করতে পারেনি। বিএনপির কোনো নেতাকে কিছু বললেই তারা আওয়ামী লীগের নানা 'অপকীর্তির' বর্ণনা শুরু করে দেন। কিন্তু নিজেদের একটা সাফল্যও উল্লেখ করতে পারেন না।

একথা ঠিক যে, আওয়ামী লীগ সরকারের কিছু ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্যের পাশাপাশি বেশ কিছু ক্ষমাহীন ব্যর্থতাও রয়েছে। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতার দাবি করার মতো এমন কোনো সাফল্য কি গত ৫ বছরে দেখাতে পেরেছে যে জনগণ তাদেরকে ক্ষমতায় পাঠানোর জন্য জীবন দেবে! বরং স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের সঙ্গে তাদের অতিরিক্ত দহরম-মহরমের কারণে অধিকাংশ মানুষ বিরোধী দলের প্রতি ক্ষুব্ধ এবং বিরক্তই হয়েছে।

এমন একটি 'ব্যর্থ' রাজনৈতিক দলের সবার আগে দরকার বিরোধী দল হিসেবে নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করা। এ পরিস্থিতিতে বিএনপির উচিত ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি পরিহার করে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা, ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার বর্তমান ক্ষমতাসীনদের কৌশলে চ্যালেঞ্জ জানানো। পরিবর্তনের প্রত্যাশায় অপেক্ষারত এবং নানা কারণে ক্ষমতাসীনদের প্রতি ক্ষুব্ধ-বিরক্ত-হতাশ ভোটাররা কিন্তু একটা 'নিরব বিপ্লব' ঘটিয়েও দিতে পারে।

আর বিএনপিকে একটা কথা মনে রাখা দরকার যে, দুনিয়া এখন অনেক বদলে গেছে। গণমাধ্যম, তথ্যপ্রযুক্তি, মোবাইল-ইন্টানেটের চরম বিকাশের এই যুগে 'মাগুরা-মার্কা' নির্বাচন এখন আর সম্ভব নয়। এখন নির্বাচনে কারচুপি বা রিগিং হলে দেশবাসী, রেডিও-টেলিভিশন, সংবাদপত্র, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক-সকলের চোখে পড়বে। সরকারি দল তেমন কিছু করলে সত্যিকার গণঅভ্যূত্থান সৃষ্টি হতে খুব বেশি সময় লাগবে না।

মানুষ বর্তমান সরকারকে মেনে নিয়েছে অনন্যোপায় হয়ে! এর পর সরকারের বড় ধরনের খুঁত পেলে সব রকম আশা-হারানো মানুষ ক্ষেপে উঠবে। আর তাহলে লাঠি-গুলি-টিয়ার গ্যাস তো নস্যি, মিসাইল-কামান-জাতিসংঘ বাহিনি দিয়েও সেই ক্ষোভ দমন করা যাবে না। ক্ষমতায়ও থাকা যাবে না।

মনে রাখা দরকার, বর্তমান ক্ষমতাসীনরা যথাযথভাবে দেশপরিচালনায় অবশ্যই ব্যর্থ। কিন্তু তার চেয়েও বেশি বেশি ব্যর্থ বিরোধী দল। তারা কোনো একটা জাতীয় ইস্যুতে বা গণস্বার্থে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। এই বাস্তবতায় বিরোধী পক্ষকে ঘায়েল করবার ক্ষমতাসীনদের যাবতীয় কৌশল ও উদ্যোগ অতিক্রম করে যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে সাধারণ মানুষের সহানুভূতি ও সমর্থন বিরোধীদের পক্ষে থাকবে বলেই আশা করা যায়।

বিরোধী দল যদি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে তাহলে তাদের পস্তাতে হবে। কেবল প্রতিশোধের রাজনীতির পথ ধরলে জনগণের মন থেকে হরিয়ে যাওয়া অসম্ভব নয়। কারণ সাধারণ জনগণ প্রতিশোধের রাজনীতির বদলে সমঝোতার রাজনীতি চায় যা গণতন্ত্রের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য। এই জনইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোটাই সার্থক রাজনীতি।

যুক্তিশীল মানুষ মাত্রই স্বীকার করবেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ার কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। এটা যে প্রেক্ষিত থেকে 'আমদানি' করা হয়েছিল, পরবর্তী সময়ে নানা কারসাজিতে এর মৌলিক চরিত্রটাই বদলে দেওয়া হয়। মূলত বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে বিচারপতি কেএম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বানাতে বিচারপতিদের অবসরগ্রহণের বয়স বাড়িয়ে ব্যবস্থাটাকেই কলঙ্কিত করে তোলা হয়।

সে সময় আওয়ামী লীগ যদি গোঁ না ধরে বিচারপতি কেএম হাসানের অধীনেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করত– অভিজ্ঞ মহলের মতে– তারপরও আওয়ামী লীগই বিজয়ী হত। আর তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস অন্যভাবে লিখিত হতে পারত।

আসলে বিচারপতিদের অবসরগ্রহণের বয়স বাড়িয়ে এবং বিচারপতি কেমএম হাসানের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপি-আওয়ামী লীগ অনেক আগেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিকে অকার্যকর করে ফেলেছে। জেদ, দাপট আর ক্ষমতা দেখাতে নিয়মনীতি, চক্ষুলজ্জা সবকিছু বিসর্জন দিয়ে দলীয় রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বানিয়ে মূলত খালেদা জিয়া এবং তার দলই এই ব্যবস্থাকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়েছেন। এখন এই ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার কথা বলার নৈতিক ভিত্তি বিএনপির আদৌ আছে কী?

২০০৬ সালে যে কায়দায় এবং যাদের নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়েছিল, সেই সরকার যে ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল, তাতে এই পদ্ধতি বাতিল হওয়াটা সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাছাড়া এই খাপছাড়া ব্যবস্থাটা কোনো না সময়ে এসে বাতিল করতেই হত। আওয়ামী লীগ হয়তো কাজটা করেছে গায়ের জোরে, প্রয়োজনীয় আলাপ-আলোচনা-জনমত গঠনের কাজটি ছাড়াই। কাজেই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা নিয়ে মায়াকান্না করার তেমন সুযোগ আছে বলে মনে হয় না।

এখন বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে, হরতাল-অবরোধ-নৈরাজ্যের মতো ধ্বংসাত্মক ও গণবিরোধী কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যায়, তাহলেও নির্বাচন ঠেকাতে পারবে বলে মনে হয় না।

আর প্রশাসনযন্ত্র ব্যবহার করে অনুগতদের নিয়ে মোটামুটি একটা নির্বাচনের মাধ্যমে যদি আওয়ামী লীগ এককভাবে ক্ষমতায় পুনঃঅধিষ্ঠিত হয়, যদি তারা যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করে, মোটামুটি একটা সুশাসন উপহার দিতে পারে– তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে বিএনপির হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বা আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কাজেই বিএনপির নীতিনির্ধারকদের ভেবেচিন্তেই দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

''সংলাপের ট্রেন মিস করেছেন, এরপর নির্বাচনের ট্রেনও মিস করবেন''– তথ্যমন্ত্রীর কথাটা উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। আর নির্বাচনের ট্রেনটি মিস করলে বিএনপিকে অজানা ট্রেনে চেপে অচেনা গন্তব্যে পাড়ি দিতে হতে পারে। সেটা বিএনপির জন্য তো নয়ই, দেশবাসীর জন্যও খুব একটা ভালো সংবাদ হবে না।

নেতানেত্রীদের মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় হোক, সব ঝগড়া-বিবাদের অবসান হোক, দায়িত্বশীল নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হোক– তা কে না চায়! কিন্তু সমস্য হল, চাইলেও আমরা সবসময় সবকিছু পাই না।

আমাদের সামষ্টিক যন্ত্রণাটা তো সেখানেই!