এ অচলায়তন না ভাঙলে বিপর্যয়

আমানুল্লাহ কবীর
Published : 2 Nov 2013, 09:50 AM
Updated : 2 Nov 2013, 09:50 AM

২৬ অক্টোবর, শনিবার শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মধ্যে ফোনে যোগাযোগ হওয়ার পর থেকে দেশের মানুষ স্বস্তি ও অস্বস্তিতে দোদুল্যমান অবস্থায় আছে। মেঘাচ্ছন্ন আকাশে এক ঝলক বিদ্যুতের মতো ক্ষীণ আশার আলো দেখা গেলেও তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটেনি। বর্ষণের পর ঝলমলে আকাশে কখন সূর্যের আলো দেখা যাবে, সে আশা নিয়েই তারা অস্থিরভাবে অপেক্ষা করছে। দুই নেত্রীর ফোনালাপে কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তের কথা না থাকলেও বরফ গলতে শুরু করেছে– এমন বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকেই।

বহুআলোচিত ও প্রত্যাশিত টেলিফোন কল ঘিরে কম নাটকীয়তা ছিল না। বিরোধী দলীয় নেত্রীকে টেলিফোন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। তার আগের দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় খালেদা জিয়া ঘোষণা করেছিলেন, দু'দিনের মধ্যে আলোচনায় না বসলে পরের দিন অর্থাৎ ২৭ অক্টোবর থেকে তিনদিন হরতাল হবে।

এই আলটিমেটাম শেষ হওয়ার আগেই শেখ হাসিনা টেলিফোন করেন খালেদা জিয়াকে। তাদের মধ্যে রূঢ় ও তিক্ত বাক্যবিনিময় হয়। খালেদা জিয়াকে হরতাল প্রত্যাহার করে ২৮ অক্টোবর গণভবনে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানান শেখ হাসিনা। খালেদা জিয়া হরতাল প্রত্যাহারে অসম্মতি জানিয়ে ২৯ অক্টোবর হরতাল শেষে যে কোনো সময় আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেন। আলোচনায় বসার সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ নির্ধারণ না করেই ৩৭ মিনিটের ফোনালাপ শেষ হয়। যদিও আলোচনার বিষয়টি কেউই নাকচ করে দেননি।

কিন্তু এখন ঠেলাঠেলি শুরু হয়েছে কে কাকে প্রথম টেলিফোন করবেন। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার আমন্ত্রণ ও বিরোধী দলীয় নেত্রীর অপারগতা কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহল ও সুশীল সমাজে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাদের অনেকেই যুক্তি তুলে ধরে বলেছেন, শেখ হাসিনার প্রস্তাব গ্রহণ করে খালেদা জিয়া আলোচনায় গেলে প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টির পরিচয় দিতেন। কারণ উদ্বিগ্ন দেশবাসী সুদীর্ঘ সময় ধরে এই বৈঠকের প্রত্যাশা করেছিল। অগ্রাধিকার দুই নেত্রীর বৈঠক, হরতাল নয়।

দায়িত্ববোধের বিষয়টি বাদ দিলেও, কৌশলগত কারণে খালেদা জিয়া আমন্ত্রণ রক্ষা করলে বল প্রধানমন্ত্রীর কোর্টেই থাকত, তাকে দায়-দায়িত্ব নিতে হত না। খালেদা জিয়া অবশ্য বলেছেন, একদিন আগে অর্থাৎ শুক্রবারেও যদি আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হত, তাহলে তিনি বিষয়টি বিবেচনার সুযোগ পেতেন; কেননা হরতাল প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ১৮ দলীয় জোটের বৈঠকেই নিতে হবে– শেষ মুহূর্তে তা সম্ভব নয়।

এখন নতুন করে জটিলতার সৃষ্টি করা হয়েছে। কে কাকে আগে টেলিফোন করবেন, এ নিয়ে বাকযুদ্ধ। ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোট বৈঠক করে বলেছে, এবার খালেদা জিয়ার পালা, তাকেই টেলিফোন করতে হবে শেখ হাসিনাকে। বিষয়টিকে কৌশলের মারপ্যাঁচে যত জটিল করে তোলা হচ্ছে, আসলে তা আদৌ নয়। জেদাজেদির কথা বাদ দিলে সমাধান অতি সহজ। মহাসচিব বা সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ে আলোচনা করে দুই নেত্রীর বৈঠকের আয়োজন করা কোনো কঠিন কাজ নয়। এজন্য যা দরকার তা হচ্ছে উভয় পক্ষের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা।

কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে দুই নেত্রীর ফোনে কথোপকথন নিয়ে যে নোংরা প্রচার-প্রপাগাণ্ডা চালানো হচ্ছে, তা সদিচ্ছার পরিচয় বহন করে না। প্রচার-প্রপাগাণ্ডার উদ্যোগ গ্রহণকারী স্বয়ং তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি হঠাৎ নীতিবাগিশের মতো বলতে শুরু করলেন, এই কথোপকথন জনগণের জানার অধিকার রয়েছে, তাদের জানাতে হবে। এরপরই কথোপকথনের রেকর্ড বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্রে সরবরাহ করা হয়। মিডিয়াও তা লুফে নিয়েছে।

এটা ঠিক, আইনগতভাবেই তথ্য জানার অধিকার জনগণের রয়েছে। বিশেষত সে তথ্য যদি পাবলিক লিডারদের সংশ্লিষ্ট হয়, তবে তা অবশ্যই জনগণকে জানতে দিতে হবে। কিন্তু এখন যে কথোপকথন জনগণের অবগতির জন্য প্রচার করা হচ্ছে, তা কতটা জাতির কল্যাণে, আর কতটা জাতির অকল্যাণে– তাই প্রধান বিবেচ্য বিষয়।

এর উদ্দেশ্য কি দুই নেত্রীর আলোচনার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি, না প্রতিবন্ধকতা তৈরির জন্য? বিরোধী দলীয় নেত্রীকে যদি জনসমক্ষে হেয় প্রতিপন্ন করা এর উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে কি আলোচনার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে? যে নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে রাজনৈতিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তার সমাধান না হলে দেশে কি কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে? নির্বাচন না হলে কী পরিণতি হতে পারে, নিকট অতীতেই তার উদাহরণ রয়েছে।

এ সরকারের আমলে অনিয়ম, দুর্নীতি, খুন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি বহু ঘটনাই ঘটেছে। কিন্তু সে সব ঘটনা জনগণের কাছ থেকে আড়াল করে রাখা হয়েছে কঠিন পাহারায়। এসব ঘটনা প্রকাশ ও প্রচারের জন্য মিডিয়া ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে প্রাণও দিতে হয়েছে।

দুই নেত্রীর কথোপকথন প্রচারে অতিউৎসাহ দেখে মনে হয়, রাজনৈতিক সমাধানের পরিবর্তে সংকট ঘনীভূত করার জন্যই একটি মহল সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তথ্য ও প্রযুক্তি আইনেও ফোনালাপের রেকর্ড প্রচার করা অবৈধ। উভয় নেত্রীর, বিশেষত খালেদা জিয়ার সম্মতি ছাড়া ফোনালাপের রেকর্ড প্রচার হওয়ায় ন্যূনতম সৌজন্য প্রকাশের বিষয়টিও উপেক্ষিত হয়েছে।

বাংলাদেশে নির্বাচনী মৌসুম এলেই জানা-অজানা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন শক্তি তৎপর হয়ে ওঠে। গত কিছুদিনে কূটনৈতিক পাড়ায় প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে অনেক ঘটনাই ঘটে গেছে। বিদেশি কূটনীতিকদের চোখটাটানো দৌড়ঝাঁপের খবর পত্রিকা খুললেই দেখা যায়। আমাদের রাজনীতিতে নিজেদের স্বার্থে দুটি শক্তিধর দেশের দৃশ্যমান খবরদারি কারও অজানা নয়। আমেরিকা ও ভারত এদেশের কর্মকাণ্ডে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় কখনও কখনও প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে।

নির্বাচন কেন্দ্র করে এ দুই দেশের ঢাকাস্থ রাষ্ট্রদূতদের মধ্যে সম্প্রতি তীব্র মতবিরোধ দেখা দিলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা ছুটে যান দিল্লিতে। সেখানে দিল্লিস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েলকে (যিনি একজন ঝানু কূটনীতিবিদ) নিয়ে ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। কয়েকদিন পর ঢাকায় ফিরে আবার ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাদের মধ্যে কী নিয়ে মতবিরোধ, তা সুনিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও মনে হয় পর্দার অন্তরালে সমঝোতার একটা চেষ্টা চলছে।

আমাদের সামনে তিনটি সম্ভাব্য পরিস্থিতি রয়েছে: এক. সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন; দুই. আওয়ামী লীগের একক অংশগ্রহণে (যদিও ছোটখাটো আরও কয়েকটি দল থাকতে পারে) নির্বাচন; এবং তিন. নির্বাচন না হলে অসাংবিধানিক শক্তির রাষ্ট্রক্ষমতা দখল। তাহলে প্রশ্ন ওঠে, এই তিন ধরনের সম্ভাবনার মধ্যে কোনটি নিয়ে তাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে এবং কোন সম্ভাবনার ব্যাপারে তারা সমঝোতার চেষ্টা করছেন?

ড্যান মজিনা দিল্লি থেকে ফিরে এক বিবৃতিতে বলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট কীভাবে সমাধান করা যায়, সে ব্যাপারে দু দেশের মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে দিল্লির এক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মজিনার বিবৃতিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এর সমাধান করা ওই দেশের রাজনীতিবিদদের দায়িত্ব।

উপরন্তু দিল্লির ওই কর্মকর্তা দুই নেত্রীর মধ্যে বৈঠকের জন্য চীন যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। চীনের রাষ্ট্রদূত লী জুনও সম্প্রতি দেশে গিয়েছিলেন। দেশ থেকে ফিরে তিনি আবারও সংঘাত পরিহার করে দুই নেত্রীর আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকট মীমাংসার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। চীনের এই উদ্যোগের প্রতি ভারতের সমর্থন ব্যতিক্রমধর্মী।

এর থেকে মনে হয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের সমাধান কীভাবে হবে, তা নিয়ে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বেশ বড় ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে। এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় যে, চীন নীতিগতভাবে সাধারণত কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আগ্রহ দেখায় না। এবার বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিরোধের ব্যাপারে চীনের সক্রিয় ভূমিকা তাই বিশেষ বিবেচনার দাবি রাখে।

দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে ভারতের পর পাকিস্তানকে গুরুত্ব দেওয়া হলেও ইদানিং বাংলাদেশ নানা কারণেই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনীতির ব্যাপারে প্রতিবেশি ভারতের আগ্রহের প্রধান কারণ তার নিরাপত্তা-স্বার্থ এবং হাসিনা সরকারের সময় ট্রানজিটসহ যেসব সুবিধা পেয়েছে সেসব রক্ষা করা। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহীদের বাংলাদেশ থেকে উচ্ছেদ করে সরকার ভারতের নিরাপত্তায় বড় ধরনের সহযোগিতা করেছে। আমেরিকার প্রভাববলয় থেকে বের করে আঞ্চলিক রাজনীতিতে ভারতকে পার্টনার হিসেবে পাওয়া চীনের মূখ্য উদ্দেশ্য।

মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ভৌগোলিক স্বাধীনতা দিলেও সংকীর্ণ মানসিকতা থেকে আমরা মুক্তি পাইনি। মধ্যযুগীয় চিন্তা-চেতনার কারণে আমাদের নেতা-নেত্রীদের ক্ষমতা ও অর্থবিলাস জাতির সার্বভৌম পরিচয়কেও বিপন্ন করেছে। গণতন্ত্র জিম্মি হয়ে আছে পরিবারতন্ত্রের কাছে। ব্যক্তি ও পারিবারিক স্বার্থের কাছে জাতীয় স্বার্থ গৌণ। দেশটা পরিণত হয়েছে দুই পরিবারের সম্পত্তিতে। দলের কর্মীদের ব্যবহার করা হচ্ছে লাঠিয়াল হিসেবে।

সেদিন দুই নেত্রীর টেলিফোন সংলাপ যারা শুনেছেন তাদের কাছে মনে হয়েছে দুই মহিলার গেঁয়ো ঝগড়া। মনে হয়নি একজন প্রধানমন্ত্রী আরেকজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী অথবা একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী একজন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন। জাতীয় স্বার্থের বিষয় ছিলো অপ্রধান।

এই অশোভন ঝগড়ার রেকর্ড মিডিয়াতে প্রচার করে দেশবাসীকে বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, দুই নেত্রীর জ্ঞানবুদ্ধি ও আচার-আচরণ কোন মানের। তাদের ফোনালাপ রেকর্ড ও প্রচার দুই-ই করা হয়েছে পূর্বপরিকল্পিতভাবে। তাতে বরং মানুষের মনে যে আশার আলোক ঝলক দিয়ে উঠেছিল, তার উপর পানি ঢালা হয়েছে।

এখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-নেত্রীরা পরস্পরের বিরুদ্ধে যে দোষারোপের খেলায় মেতেছেন তাতে নতুন মাত্রার হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ যে দিকনির্দেশনাহীন অবস্থায় ছিল সে অবস্থায় রয়ে গেছে। তাগিদ থাকা সত্ত্বেও দুই নেত্রীর বৈঠকের সম্ভবনা দ্রুত ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে আসছে।

রাষ্ট্রক্ষমতার জন্য রাজনীতিবিদদের পরিমিতিবোধহীন লড়াই আমাদের সার্বভৌম অধিকারে হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দিয়েছে বিদেশি শক্তিকে। ঔপনিবেশিক মানসিকতা নিয়ে তারা সমাধানের জন্য কখনও দ্বারস্থ হচ্ছে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের, কখনও দ্বারস্থ হচ্ছে ভারতীয় হাইকমিশনারের। অতীতেও তারা একইভাবে ধর্না দিয়েছেন বিদেশিদের কাছে। রাজনৈতিক ফয়সালা হয়নি, পরিবর্তে দেশবাসীর উপর নেমে এসেছিল এক-এগারোর অভিশাপ।

এজন্য দায়ী রাজনীতিবিদরাই। ভবিষ্যতে এক-এগারোর পুনরাবৃত্তি হলে দায়ী হবেন তারাই। ভোগান্তিতে নিপতিত জনগণ কতদিন তাদের এই দায়িত্বহীন আচরণ ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন?

নিষ্ফল ফোনালাপের পর প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার মিত্র বাম দলগুলোর নেতারা জোর গলায় বলা শুরু করেছেন যে, বিএনপি না এলেও যথাসময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সকল দলের অংশগ্রহণ ছাড়া এককভাবে নির্বাচন করলে পরিণতি কী হয়, ১৯৯৬ সালে আমরা তা দেখেছি– বিএনপি তিন মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি।

এবারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভিন্ন, বিশেষত ক্ষুদ্ধ ইসলামি উগ্র শক্তি হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামী মাঠে সক্রিয় থাকায় নির্বাচন সহিংস সংঘাতে পরিণত হওয়ার আশংকাই বেশি। তাদের পেছনে ব্যাপক জনসমর্থন না থাকলেও সংঘবদ্ধ বলে তারা আওয়ামী লীগের একক নির্বাচনকে শক্তিপরীক্ষার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করবে।

এই শক্তিপরীক্ষায় আওয়ামী লীগ ও তার মিত্র বাম দলগুলোকে যে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে তাতে এসব ইসলামি শক্তি দৃঢ়ভাবে সংগঠিত হওয়ার নতুন মনোবলই পাবে। অর্থাৎ যে উগ্র মৌলবাদী শক্তির উত্থানের আশংকা করা হচ্ছে দেশে-বিদেশে, তা-ই ঘটবে। তখন ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বিচ্ছিন্ন মুসলমানপ্রধান বাংলাদেশে সিরিয়া বা মিশরের মতো পরিস্থিতির উদ্ভব হলে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না।

এমন সম্ভাব্য ভয়ংকর পরিস্থিতি এড়ানো যেতে পারে কেবল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের মাধ্যমে। সকল সমালোচনা সত্ত্বেও বাস্তবতা বিচারে এটা স্বীকার করতেই হবে যে, এ মুহূর্তে দেশকে রাজনৈতিক সংকট থেকে উদ্ধার করতে পারেন কেবল শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া। ব্যক্তিগত অহংবোধ বাদ দিয়ে তারা যদি দেশের স্বার্থরক্ষায় আন্তরিক হন এবং আলোচনার টেবিলে বসেন, তাহলে সমাধানের পথ অবশ্যই খুলে যাবে।

রাজনৈতিক সংকটের সমাধান সম্ভব কেবল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের দ্বারাই। তাদের ব্যর্থতার ফলে দেশের উপর যে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে, তা থেকে তারাও রেহাই পাবেন না। রাজপথে যেমন কোনো সমাধান নেই, তেমনি একদলীয় নির্বাচনেও কোনো সমাধান আসবে না।

আমানুল্লাহ কবীর: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সিনিয়র এডিটর।