ভ্রমনের আকর্ষণ, ভ্রমনের অন্তরায়

প্রিসিলা রাজপ্রিসিলা রাজ
Published : 22 August 2010, 03:35 PM
Updated : 22 August 2010, 03:35 PM

জামালপুর শহরের বটবৃক্ষসম জাম গাছের সারিটি আবিষ্কার করি ২০০৩ সালে। সেবারই প্রথম এ শহরে পা দেওয়া। সার্কিট হাউসের পাশের রাস্তাটিকে সারাদিন ছায়াচ্ছন্ন করে রাখা প্রাচীন জাম গাছগুলো মুগ্ধ করেছিল। জামালপুরের বর্ষীয়সী সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী উৎপল কান্তি ধর গাছগুলো রোপণের ইতিহাস শুনিয়েছিলেন। স্থানীয় জমিদার ব্রিটিশ আমলে বৃক্ষগুলো লাগিয়েছিলেন। তখন গুণে দেখেছিলাম, যতদূর খেয়াল আছে ৫০টির কিছু বেশি। সারা শরীর জুড়ে শ্যাওলা, ফার্ন আর অর্কিড। জাম মনে হয় একটাও ধরে না, ধরলেও আকাশ সমান উঁচু থেকে সেই ফল পাড়ে কার সাধ্যি। তারপর থেকে যতবার জামালপুরে গেছি প্রতিবারই ছায়াচ্ছন্ন পথটিতে একবার হেঁটেছি। তবে হাঁটার সময় চোখটা একদিকে বন্ধ করে রাখতে হয়, অথচ সেটাই একসময় ছিল সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। রাস্তার অপর পারেই নদী (সম্ভবত পুরাতন ব্রহ্মপুত্র) আর তার তীরটা পুরো ঢাকা পড়েছে ছাপরা আর টিনের দোকানে। রাস্তার দিকে মুখ করা দোকানগুলোর যাবতীয় ময়লা পেছনের মাচা দিয়ে নদীর বুকে পড়ছে।

হাট বা গঞ্জ গড়ে ওঠার প্রাচীন নিয়মের ধারা মেনে আমাদের দেশে মফস্বল শহরগুলোও গড়ে উঠেছে নদীর ধারে। মানুষ বেড়ে বেড়ে টাউনগুলোর রুদ্ধশ্বাস দশা এখন আর তার নিদারুণ শিকার তাদের আশপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী-খাল-বিলগুলোর। দেশের যে জেলা-উপজেলাতেই গেছি দেখেছি নদী বা খালগুলোর তীর মাচার ওপর দোকান দিয়ে ঢাকা যার পেছনের অংশ দিয়ে পানিতে ময়লা ঢেলে দেওয়া হচ্ছে। অথচ কত অন্যরকমই না হতে পারত পুরো দৃশ্যটা। জলাশয়গুলোকে ঘিরে মানুষের বেড়ানোর উপযোগী কত কিছুই না করা যায়। আর তার আর্থিক-সামাজিক-পরিবেশগত পুরো লাভটাই হতো স্থানীয় অধিবাসীদেরই।

আজকের লেখাটা গতানুগতিক পর্যটনের বাইরে ভ্রমণ বিষয়ে বহুদিনের পুরানো এক ভাবনাকে ঘিরে। দেশী-বিদেশী সকলেই সাধারণতঃ যে গুটিকয়েক জায়গায় পর্যটনে যায় রাঙামাটি, কক্সবাজার, মাধবকুণ্ড কিংবা জাফলং, এসব জায়গায় খুব একটা যাওয়া হয়নি আমার বা গেলেও নানা কারণেই খুব একটা ভাল লাগেনি। অথচ মূলতঃ কাজের খাতিরেই দেশের শহর আর গ্রাম-গঞ্জ ঘুরতে গিয়ে অনেক সময়ই মনে হয়েছে মানুষ এখানে ভ্রমণে আসে না কেন? অথবা কোনো জায়গা দেখে ভেবেছি এখানকার পরিবেশটা যদি আরেকটু অন্যরকম হতো কিংবা যদি দু'-একটা বাড়তি সুবিধা থাকত তবে অনেকেই হয়ত বেড়াতে আসত।

পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া বাংলাদেশের বাকি প্রায় পুরো এলাকাটাই সমতল, এদিক-ওদিকে দু'একটি টিলা অঞ্চল বাদ দিলে। কিন্তু সমতল হলেও একেক জায়গার নিসর্গ একেক রকমের। সেইসঙ্গে মানুষের গোষ্ঠী, ধর্ম ও জীবনধারণগত বৈশিষ্ট্যও বেশ খানিকটা পাল্টে যায়। আবার মৌসুম ভেদে একই জায়গার রূপও পাল্টে যায় অনেকখানি। দু'একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। পটুয়াখালির বাউফল এলাকার চৈত্র-বৈশাখ মাসের যে রূপ তা আর কোথাও দেখিনি। সেখানে বাড়িগুলোর সামনে বড় বড় ফসলের মাঠ। বসন্তের মাতাল বাতাস দিনমান বাড়িগুলোকে মাতিয়ে রাখে। কালিশুরি নামে নদীর তীর ধরে বয়ে যাওয়া অজগরের মতো পিচরাস্তা পায়ের তলায় সর্ষে নিয়ে বেরিয়ে পড়া যে কোনো মানুষেরই মন কেড়ে নেবে।

কিংবা উত্তরে রাতজাগা রেলশহর সৈয়দপুরের চিনি মসজিদ আর ব্রিটিশ বসতির সাক্ষ্য অপূর্ব গীর্জার কথা ক'জনই বা জানেন। আছে জীবন্ত জাদুঘর বনে যাওয়া বিরাট সব রেইনট্রি বৃক্ষ। শহরটিতে উর্দুভাষী অধিবাসীদের আধিক্যের ফলে গড়ে উঠেছে কাবাব জাতীয় খাবারের মজাদার কিন্তু সস্তা সব ছোট ছোট রেস্তোরাঁ । থাকার মতো মোটামুটি পরিচ্ছন্ন কয়েকটি হোটেলও আছে। কিন্তু শুধু বেড়ানোর খাতিরে খুব বেশি লোক এখানে আসে বলে মনে হয় না। কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার প্রাকৃতিক নিসর্গ যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। আবার নেত্রকোণা শহরের বুকের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মগড়া নদীটিকে দেখে মনে হয়েছিল সে অঞ্চলের বিস্তৃত হাওর অন্তর্জালের অংশ নদীটিতে হাউসবোটে ভ্রমণের ব্যবস্থা করা যেতেই পারত।

কোনো জায়গাকে ভ্রমণ উপযোগী করার জন্য নিরাপত্তাই নিঃসন্দেহে সবার আগের প্রয়োজন। এ নিরাপত্তা একদিকে যেমন মানুষের দৈহিক বা টাকা-পয়সা সংক্রান্ত তেমনি আরেকদিকে ভ্রমণকারীর নিরাপত্তার বোধ। একে স্বস্তিবোধ বলাই মনে হয় ভাল। পর্যটকের দৈহিক বা আর্থিক নিরাপত্তা দেওয়ার পেছনে সন্দেহ নেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশি নিরাপত্তা একজন ভ্রমণকারীকে আসলে কী দেয়? তাঁকে এ বোধটিই দেয় যে এখানে তিনি আক্রান্ত হতে পারেন তবে তাঁকে রক্ষা করার জন্য কিছু ব্যবস্থা প্রস্তুত আছে। কিন্তু একজন সাধারণ পর্যটক কি শুধুমাত্র সেই নিরাপত্তাই চান?

অনেক পর্যটকেরই ভ্রমণের মূল আগ্রহ থাকে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে মেলামেশায়। পথে-ঘাটে, রাস্তায়, বাজারে বা কখনও সুযোগ হলে কারো বাসাবাড়িতে স্বাগত হতে পারার মধ্যেই তাঁদের আসল তৃপ্তি। কখনও যে জনগোষ্ঠীর মধ্যে তাঁরা বেড়াতে যান সেখানকার মানুষের আপাত নির্লিপ্তিও তাঁদের সহনশীলতার প্রকাশ ঘটায়। কলকাতায় গেলে চোখে পড়ে সেখানকার বিশেষ করে নিউমার্কেট এলাকা ঘিরে পশ্চিমা পর্যটকের ভিড়। নানা বয়সের এসব ভ্রমণকারী থাকে সস্তার হোটেলে, ড্রেনের পাশে বসে মাছি তাড়াতে তাড়াতে তাদের স্যুপ বা নুডলস খাওয়া নিত্যদিনের দৃশ্য। তাদের বিশেষ করে মেয়েদের কারো গায়ে থাকে ভারতীয় জামা-পাজামা, কারো গায়ে দেশি-বিদেশীর মিশেল আবার কারো পরনে পশ্চিমা মাঝারি সংক্ষিপ্ত পোশাক। কিন্তু স্থানীয়দের মধ্যে এসব পশ্চিমা হিপি নিয়ে নেই কোনো আলগা ঔৎসুক্য। চারপাশে বয়ে চলেছে কলকাতার বহু জাতের মানুষের নিত্য জীবনযাপন স্রোত। ঊর্ধ্বশ্বাস জীবনের মাঝখানে স্থান-কাল-নিরপেক্ষ সেই নিরুদ্বিগ্ন বহমানতায় নিজেকেও ডুবিয়ে দিতে ইচ্ছা হয়।

বছর দু'য়েক আগে কক্সবাজারের এক হোটেলে হপ্তা দুই থাকতে হয়েছিল। দিনে কয়েকবার হোটেলের নিচে এক দোকানে চা খেতে যেতাম। দোকানি তরুণটি বেশবাশে সাদা বাংলায় যাকে বলে হুজুর। দু'তিন দিন যাওয়ার পর আমাকে জিজ্ঞেস করে আমার ধর্ম কী। জাত-ধর্ম-সাকিন জানা আমাদের বহুকালের সাংস্কৃতিক চর্চা। অনেক শিক্ষিত মানুষ বিরক্ত হন এতে, তবে আমি সাধারণতঃ এসব কৌতুহল নিবৃত্ত করি। কিন্তু দোকানির কথা বলার ধরনে নেতিবাচক কিছু ছিল যার ফলে উত্তর না দিয়ে তার কৌতুহলের কারণ জানতে চাই। চা ঢালতে ঢালতে সে কেটে কেটে বলে, "আপনারে দেখতে লাগে বেটির মতো, পরছেন ব্যাটাদের পোশাক, আপনে মাইয়া মানুষ না পুরুষ মানুষ সেইটাই তো বুঝা যাইতেছে না। আপনে হিন্দু, না খ্রিস্টান, না বৌদ্ধ না মুসলমান হেইডাই তো বুঝতে পারতেছি না।" প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি আমি সচরাচর সাধারণ শার্ট-প্যান্ট পরি। আমি বলি, "আপনার সঙ্গে আমার একটাই সম্পর্ক, সেইটা হইল খদ্দের আর দোকানির। আমি নারী না পুরুষ না হিজড়া সেইটা জেনে আপনে কী করবেন? আমার ধর্ম সেইটাই বা আপনার জানার কী প্রয়োজন? আপনার কথার ভঙ্গি থেকে তো মনে হইতেছে খদ্দের লক্ষ্মী এই বাংলা কথাটাও আপনি ভুলে গেছেন।" ছেলেটি মুখ গোঁজ করে থাকে।

পরে আমি বিষয়টি আমার স্থানীয় সহযোগী সাংবাদিককে জানিয়ে বলি কক্সবাজারবাসীরা যদি এটুকু সাংস্কৃতিক ভিন্নতাও সহ্য করতে না পারেন আর মনে করেন যে সৈকতে বিরাট বিরাট হোটেল তুললেই স্রোতের মতো পর্যটক আসতে শুরু করবে তাহলে তাঁরা ভুল ভেবেছেন। তরুণ সাংবাদিক ভদ্রলোক রীতিমতো সামরিক অ্যাকশনে নেমে পড়েন যে হুজুরের দোকান উঠিয়েই ছাড়বেন। তাঁকে থামিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করি এভাবে তিনি কতজনের দোকান ওঠাবেন।

এবার সেই একই কক্সবাজারে একটি স্নিগ্ধ অভিজ্ঞতার কথা শোনাই। সোনাদিয়া দ্বীপে রাত্রিযাপনের দরকার হয়েছিল। কিন্তু কেউই কোনো ব্যবস্থা করতে পারলেন না। সবার একই রা, সোনাদিয়ায় চোর-ডাকাত ভরা, সেখানে দিনে যদিও বা যাওয়া যায় রাতে কোনোভাবেই থাকা যাবে না। শেষে মহেশখালীনিবাসী আমার এক রাখাইন বন্ধুর সঙ্গে 'ধেত্তেরি' বলে রওনা দেই। মনে মনে বলি, দ্বীপে তো বৌ-বাচ্চা নিয়ে মানুষই থাকে, যতই চোর-ডাকাত হোক, কোনো পরিবারে আমার জায়গা কি আর হবে না? মহেশখালি থেকে নৌকায় চেপে সোনাদিয়ার এক প্রান্তে নেমে তেরো-চোদ্দ কিলোমিটার ভাটির কাদা ঠেলে মানব বসতিতে পৌঁছালাম। নৌকার এক সহযাত্রী তরুণ আমাদের সযত্নে পথ দেখিয়ে নিয়ে এসেছিল। সে-ই জানিয়েছিল এখানে পরিবেশ নিয়ে কাজ করে এমন একটা অফিস আছে, সেখানে রাতে থাকা যেতে পারে। ছেলেটি পৌঁছে দিয়ে চলে গিয়েছিল। পরে জেনেছিলাম সোনাদিয়ার ডাকাত দলটির সদস্য সে এবং কিছুদিন আগে এক বিদেশী পর্যটক দম্পতির সর্বস্ব লুটেছিল তারা! আমাদের প্রতি কী কারণে দয়াপরবশ হয়েছিল ছেলেটি কে জানে।

সেই অফিসে দেখা পেলাম এক তরুণের, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি না থেকেও যিনি প্রকৃত শিক্ষা, বিনয় আর ব্যক্তিত্বের জোরে মাথা হেঁট করে দিতে পারেন অনেক তথাকথিত উচ্চশিক্ষিত লোকের। দ্বীপবাসীদের মধ্যেও কুৎসিত কৌতুহলের প্রকাশ নেই। নারী-পুরুষ অনেকেই এলেন, সুখ-দুঃখের গল্প হলো মেলা। জায়গার অভাবে অফিসের একটি ঘরেই রাত্রি যাপন করলাম আমার সঙ্গী, আমি এবং সেই অফিসের কয়েকজন কর্মী। একটি রাতের অভিজ্ঞতাই সোনাদিয়াবাসীর সঙ্গে আমার যে স্থায়ী অন্তরের যোগ রচনা করল এর বাইরে আমাদের আর কী-ই বা চাওয়ার ছিল?

পর্যটকের স্বস্তি এই-ই। অস্বীকার করার উপায় নেই যে সেই দোকানি তরুণটির মতো মানুষের সংখ্যাই আমাদের চারপাশে অনেক বেশি। অনেকে হয়ত বলে উঠবেন, এতো আমাদের প্রাইভেসির বোধের অভাবজনিত সেই চিরপুরাতন সমস্যা। সে তো বটেই। পায়খানাঘরের দরজা আটকে আমরা কী করি তা সকলেই জানি, সেটা গোপন কিছু না। একান্ত পরিসর নামের এক বোধ থেকে আমাদের কোনো কোনো সময় এই আড়ালের দরকার হয়। আর আমরা যখন হাটের মাঝখানে আসি তখন দেয়ালের কাঠামোটা থাকে না বলেই আমাদের একান্ত পরিসর বা প্রাইভেসি রক্ষার ভার পড়ে চারপাশের মানুষগুলোর ওপর। অশোভন কৌতুহল, টিটকিরি, অপরিচিতের প্রতি অযাচিত মন্তব্য ব্যক্তির প্রাইভেসিকে রূঢ় আঘাত হানে। অন্য মানুষের বিশেষ করে মেয়েদের সম্মান রক্ষার সহজাত ও অন্তর্গত তাগিদ নেই বলেই তার ফল তো আমরা প্রতি মুহূর্তে ভোগ করেই চলেছি। তবে এখানে সে প্রসঙ্গ তুলেছি কেবলই পর্যটকের পরিপ্রেক্ষিত থেকে।

অন্য ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ বা ভাবনার প্রতি সহনশীলতা ও সম্মানবোধের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত বোধহয় নিজের ভাবনা ও যুক্তিবোধের ওপর আস্থা, দ্বিধাহীন ভাবনার সামর্থ্য এবং নিজের শেকড়ের প্রতি আদেখ্লামোহীন মর্যাদার বোধ। অন্য কথায়, নিজের সংস্কৃতি বা ভাবনার ব্যাপারে এক অদ্ভুতুড়ে আস্থাহীনতায় ভুগি বলেই আমরা অন্যের নিজস্বতাকে সম্মান দিতে পারি না।

এবার অবকাঠামোর প্রসঙ্গে আসি। বিশ্বায়ন বা যে কোনো কারণেই হোক না কেন, পর্যটন বলতে শুরুতেই বড় বড় হোটেলকেন্দ্রিক বিরাট কাণ্ডকারখানার কথা আমাদের মাথায় আসে। সেখানে অবধারিতভাবেই চলে আসে পতিতাবৃত্তির মতো বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পেশার অনুষঙ্গও। অথচ নিজেদের গ্রাম বা এলাকাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মানুষরাই উদ্যোগ নিয়ে ছোট ছোট পর্যটন এলাকা গড়ে তুলতে পারেন। নিজেদের বাড়িতেই তাঁরা ভ্রমণকারীর জন্য স্বল্প খরচের বিনিময়ে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। এতে করে ঘরে বসেই তাঁদের বাড়তি আয় হতে পারে।

বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় অধিবাসীরা এ ধরনের পর্যটনের ব্যবস্থা করে থাকেন। সম্প্রতি নেপালের একটি এলাকায় সরকার থেকে পর্যটনের উদ্যোগ না নেওয়াতে গ্রামবাসী নিজেরাই একজোট হয়ে পর্যটক সংগ্রহে নেমেছেন। তবে এসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে শুরু ও শেষের কথা একটিই  ভ্রমণকারীর দৈহিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা তো বটেই, তাঁরা যাতে শান্তিমতো ঘুরে বেড়াতে পারেন এলাকাবাসীকে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

একসময় অবিভক্ত বঙ্গ জুড়ে ছিল মুসাফির আপ্যায়নের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য। হয়ত এ প্রথা ভারতবর্ষের অন্যত্রও ছিল। সম্পন্ন গেরস্থবাড়ি এমনকি দরিদ্র গৃহস্থের বাড়িতেও ছিল মুসাফির অর্থাৎ দূর থেকে আসা অচেনা পথিকের রাত্রিবাসের ব্যবস্থা। যতদূর জানি তাঁরা অতিথি হিসাবেই আপ্যায়িত হতেন, টাকার বিনিময়ে নয়। এখন সে প্রথাটি নানা কারণে প্রায় বিলুপ্তই হয়ে গেছে। গৃহভিত্তিক পর্যটনের ব্যবস্থাটি সেটিরই একটি ভিন্নরূপ বলা যেতে পারে।

পূর্ববঙ্গের মানুষ স্বভাবতঃ ভ্রমণকঞ্জুষ। এক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের তফাৎ বেশ আশ্চর্যজনক। সেখানকার বাঙালিদের ব্যাপারে প্রচলিত ধারণাটি হচ্ছে উপমহাদেশে একমাত্র তারাই কোনো কারণ ছাড়া মৌসুম নির্বিশেষে সম্ভব-অসম্ভব সব জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। আর ওদিকে উপমহাদেশের বাকিরা মূলতঃ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য আর তীর্থের জন্যই দূর ভ্রমণে বের হয়। এদিক থেকে গত এক দশকে বাংলাদেশের মানুষের স্বভাবে মনে হয় কিঞ্চিৎ পরিবর্তন এসেছে। ভ্রমণের পিপাসা বাড়ছে তাদের মধ্যেও। এখন চাই তাদের ভ্রমণ বিষয়ক ভাবনায় সৃজনশীলতা, বৈচিত্র্য ও বিস্তৃতির যোগ।

আগস্ট ২০১০