সুন্দরের মাঝে অসুন্দরের ছোবল

চিররঞ্জন সরকারচিররঞ্জন সরকার
Published : 23 August 2013, 02:03 PM
Updated : 23 August 2013, 02:03 PM

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের দেশের সেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যতম। এমন মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, চমৎকার বনজঙ্গল, ব্যতিক্রমধর্মী সব দালানের নকশা, লেক, অসংখ্য পরিযায়ী পাখির আনাগোনা, সন্ধ্যার পর শেয়াল-ঝিঁঝিঁ-জোনাকি আর পাখপাখালির সম্মিলিত ঐকতান, আলো-আঁধারির জোছনা– সব মিলিয়ে এক আকর্ষণীয় পরিবেশ!

কিন্তু আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, গত কয়েক বছর ধরে কখনও ছাত্ররাজনীতির কারণে সংঘর্ষ-হানাহানি, কখনও শিক্ষক-রাজনীতির কারণে কলহ-কোন্দল, কখনও অনিয়ম-দুর্নীতি, ছাত্রীনিপীড়ন-ধর্ষণ, কখনও শিক্ষক-লাঞ্ছনা, কখনও-বা জাতীয় রাজনীতির স্ফূলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ার কারণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ঘন ঘন সংবাদ-শিরোনাম হচ্ছে। প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্যধন্য, শান্ত-স্থিত, লেখাপড়া-গবেষণা-ক্রীড়া-সংস্কৃতির সাধনায় মগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত হচ্ছে। শিক্ষা, গবেষণা এবং বিদ্যাচর্চা ছাড়া সব কিছুই এখানে হচ্ছে সুনিপুণভাবে।

প্রায় চার মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেনের পদত্যাগের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন অবরুদ্ধ রয়েছে। এর আগের উপাচার্যকে সরানোর জন্যও এখানে আন্দোলন হয়েছিল। সে উপাচার্যকে সরিয়ে বর্তমান উপাচার্যকে নিয়োগ দেওয়া হলেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি।

একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের একটি সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ অনির্দিষ্টকালের জন্য অচল থাকবে– এমনটা কারও-ই কাম্য নয়। অথচ তথাকথিত শিক্ষক-রাজনীতি এবং কোন্দলের কারণে এ বিশ্ববিদ্যালয় রসাতলে যেতে বসেছে। এ ব্যাপারে সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কারও মধ্যেই কোনো বিকার দেখা যাচ্ছে না!

বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে শিক্ষক সমিতি তার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এ আন্দোলনের কারণে বেশ কিছু সময় ধরে একাডেমিক কর্মকাণ্ড বন্ধ ছিল; এখন ক্লাস ও পরীক্ষা ইত্যাদি চললেও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভর্তি আটকে রয়েছে এবং এ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন দীর্ঘায়িত হচ্ছে, যা তাদের পেশাগত জীবন নিঃসন্দেহে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে।

শিক্ষক সমিতি উপাচার্য আনোয়ার হোসেনের পদত্যাগের দাবিতে অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। উপাচার্যের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনায় বসতেও রাজি নন তারা। শিক্ষকরা উপাচার্যকে 'অবাঞ্ছিত' ঘোষণা করেছেন। শিক্ষকনেতাদের এই চণ্ড মানসিকতা আমাদের যারপরনাই বিস্মিত করে। একজন উপাচার্যকে গায়ের জোরে প্রতিরোধ করা হবে, কাজ করতে দেওয়া হবে না, এটা কি মগের মুল্লুক?

আমরা জানি উপাচার্য হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তি এবং তিনি বিশ্ববিদ্যালয় সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারি সকলের সাহায্য-সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করবেন। এটাই তার দায়িত্ব। অথচ তাকে সেই দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষকরা যদি তাদের উপাচার্যকে 'অবাঞ্ছিত' ঘোষণা করেন, দিনের পর দিন মাসের মাস বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে রাখেন, তাদের আমরা শিক্ষক বলব কোন যুক্তিতে? আর একজন উপাচার্য কেন 'অবাঞ্ছিত' হবেন? উপাচার্যকে 'অবাঞ্ছিত' ঘোষণা করার অধিকার শিক্ষকদের কে দিয়েছে?

বর্তমান উপাচার্য জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষক ছিলেন না। মুখে না বললেও আন্দোলনকারী শিক্ষকদের কাছে এটাই তার অন্যতম প্রধান 'অপরাধ'। যদিও তাকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। তিনি উপাচার্য হওয়ার যাবতীয় শর্ত পূরণ করেছেন বলেই সরকার তাকে উপাচার্য পদে নিয়োগ দিয়েছেন। কিন্তু দেখা গেছে, শুরু থেকেই এক শ্রেণির শিক্ষক তার বিরুদ্ধে আদাজল খেয়ে লেগেছেন। তারা প্রতি পদে তার বিরোধিতা করছেন।

শিক্ষক সমিতি অবশ্য অজুহাত হিসেবে এক শিক্ষক-লাঞ্ছনার ঘটনাকে সামনে তুলে এনেছেন। উল্লেখ্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী অর্থনীতি বিভাগের একজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করলে শিক্ষক সমিতি উপাচার্যের কাছে এ ঘটনার বিচার দাবি করেন। পরে উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তার পদত্যাগ দাবি করা হয়। এ লক্ষ্যে শিক্ষক সমিতি কর্মসূচি হিসেবে তাকে বয়কট করেন এবং রেজিস্ট্রার ভবনে অবস্থান গ্রহণ করে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেন।

দেখা গেছে শিক্ষক লাঞ্ছনার বিচারের চেয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দিকেই শিক্ষক সমিতির মনোযোগ বেশি। শিক্ষক সমিতির ৭ ও ১৩ মের সভার কার্যবিবরণী থেকে শিক্ষক-লাঞ্ছনার বিচারের বিষয়টি উধাও হয়ে যায়। এ ছাড়া সমিতির এ আন্দোলন ও কর্মকাণ্ড ক্রমশ স্ববিরোধী হয়ে ওঠে এবং যুক্তিহীন স্বেচ্ছাচারিতায় রূপ নেয়।

শিক্ষকরা ক্লাসবর্জন করে শিক্ষার্থীদের কর্মদিবস নষ্ট করেছেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে যেন বেতন পান, সে জন্য ২৭ জুনের অবরোধ ঠিকই শিথিল করা হয়েছে। ২৫ জুন থেকে আন্দোলন পরিচালনা কমিটি সমিতির সভাপতিকে জরুরি বিষয়গুলোর ভাগ্য নির্ধারণের ক্ষমতা দেয়, তাদের প্রদত্ত ক্ষমতায় সভাপতিই প্রশাসনিক ও একাডেমিক বিষয়ে নীতি নির্ধারক হয়ে উঠেছেন। নিঃসন্দেহে এর নাম স্বেচ্ছাচারিতা।

শিক্ষক সমিতির কর্মসূচির আওতায় ক্লাসরুমে তালা লাগানোর মতো ঘটনাও ঘটানো হয়। শিক্ষক-আন্দোলনে এ ঘটনা নজিরবিহীন। শুধু তাই নয়, ৭ ও ১৩ তারিখের সভার কার্যবিবরণী থেকে ভিন্নমতাবলম্বী শিক্ষকদের বক্তব্য বাদ দেওয়া হয় অগণতান্ত্রিকভাবে।

উল্লিখিত বিষয়গুলোই প্রমাণ করে যে শিক্ষক সমিতির আন্দোলন অত্যন্ত দুর্বল নৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁডিয়ে আছে। সমিতি উপাচার্যের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো উত্থাপন করেছেন, তার বেশিরভাগই স্ববিরোধী। যেমন 'উপাচার্য তদন্ত কমিটিকে প্রভাবিত করেছেন' শিক্ষক-লাঞ্ছনার ঘটনা তদন্তে এমন দাবি করা হলে আন্দোলনকারীরাই দায়ী হয়ে পড়েন; কারণ তাদের মধ্য থেকেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

অকৃতকার্য প্রার্থীকে ভর্তি করা ও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় অমুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে ভর্তি করার অভিযোগটির কোনো সত্যতা বা তথ্যপ্রমাণ নেই। এসব কথা বলে সমিতি সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করছেন বলে খোদ জাহাঙ্গীরনগরেরই একদল শিক্ষক পত্রিকায় কলাম লিখে অভিযোগ করেছেন।

আন্দোলনের নামে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি যা করছেন তাকে কোনো সুস্থ চিন্তার মানুষ সমর্থন করতে পারে না। তাদের ভূমিকা পুনর্মূল্যায়ন করে দেখার সময় এসেছে।

মনে রাখা দরকার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, তিনি অবশ্যই একজন মান্যজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া মোটেও সহজ ব্যাপার নয়। এ জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। জ্ঞানে-গুণে, মেধায়-যোগ্যতায়, মানবিক উৎকর্ষে, বুদ্ধি-বিবেচনায় শ্রেষ্ঠ হতে না পারলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া যায় না। আগে অন্তত তা-ই দেখা যেত। তাই আমরা তাদের মান্য করি, সম্মান দিই, সমীহ করি। তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনি।

আমরা বিশ্বাস করি, সমাজের অগ্রসর ও শ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে তারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। সঠিক দিকনির্দেশনা দেবেন। হিংসায় উন্মত্ত, ক্ষমতার নেশায় বিভোর, স্বার্থোদ্ধারের চেষ্টায় যখন সমাজের বেশিরভাগ মানুষ ব্যাকুল, তখন ক্ষুদ্রতামুক্ত লোভ-মোহ-সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা রুখে দাঁড়াবেন। সাধারণ মানুষকে পথ দেখাবেন।

দেশের অন্যত্র যাই ঘটুক, অন্তত বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌহদ্দিতে কোনো অন্যায়, পক্ষপাত, নীতিগর্হিত কাজ তারা হতে দেবেন না। এ জন্য প্রয়োজনে তারা বুকের রক্ত দেবেন। প্রাণ উৎসর্গ করবেন। যুগে যুগে আমাদের সমাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাই করেছেন। ন্যায়ের জন্য, অধিকারের জন্য, শিক্ষার পরিবেশ রক্ষার জন্য জীবন উৎসর্গ করতে কখনও তারা কুণ্ঠিত হননি।

কিন্তু এখন দিন বদলে গেছে। সমাজের সার্বিক অধঃপতন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও গ্রাস করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকই এখন আর দশজন সাধারণ মানুষের মতোই লোভী, ধান্দাবাজ ও হিংস্র হয়ে উঠছেন। স্বার্থোদ্ধার, সুবিধা আদায় আর ধান্দাবাজিতে তারা অনেকে এখন অধম হয়ে যাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মানে নির্লোভ-নির্মোহ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার জ্ঞানতাপস– এই ধারণা এখন আমূল বদলে গেছে। আর দশজন সুবিধাবাদী নষ্ট মানুষের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পার্থক্য করা কঠিনতম বিষয়ে পরিণত হয়েছে!

সংকীর্ণ দলীয় রাজনীতি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকের সহায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষকরা যেন দলবদ্ধভাবে নীতি-নৈতিকতা-বিবেক ইত্যাদি বিসর্জন দিয়েছেন। দলের মাদল না বাজলে তাদেরও যেন এখন আর ভালো লাগে না। দলের চশমা ছাড়া তারা কিছুই দেখতে পান না, দেখতে চানও না।

অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিবিধানও তেমনভাবেই তৈরি করা হয়েছে। এই বিধি অনুযায়ী দলবাজির মহড়ায় পাস না করলে নিয়োগ, বদলি, প্রমোশন ইত্যাদি পাওয়া যায় না। এ ব্যবস্থায় শিক্ষকরা অসন্তুষ্ট বলেও মনে হয় না। তারা অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে পদ-পদবি, সামান্য একটু সুযোগ-সুবিধার জন্য প্রমোশনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যান। এ জন্য তারা দলবাজিই শুধু নয়, 'অশিক্ষিত' 'অর্ধশিক্ষিত' রাজনৈতিক নেতাদের পা চাটতেও কুণ্ঠিত হচ্ছেন না। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা– অবশ্যই সবাই নয়– তবে বেশিরভাগই দলবাজি নিয়ে মত্ত থাকেন, একটু সুযোগ-সুবিধা, পদ-পদবি-প্রমোশনের ধান্দায় সারাক্ষণ ব্যস্ত সময় কাটান।

সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হচ্ছে, আত্মমর্যাদা, আত্মসম্মান, নীতিনৈতিকতা-আদর্শ ভুলে এক শ্রেণির শিক্ষক অধ্যাপক, প্রক্টর, বিভাগের প্রধান, অনুষদের ডিন, উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ইত্যাদি পদ বাগাতে রাজনৈতিক দলের প্রতি 'লেজ নাড়তে' থাকেন। তাদের অনেকে শাসক দলের 'গৃহভৃত্য' হতেও কোনো গ্লানি বা অনুশোচনা বোধ করেন না। অধঃপতনের এ এক চূড়ান্ত অবস্থা!

শিক্ষক সমিতি আন্দোলন করবেন– এটা খুবই বাঞ্ছিত এবং গণতন্ত্রসম্মত। কিন্তু দাবি-দাওয়াগুলো অবশ্যই যৌক্তিক হওয়া চাই। স্রেফ একটা লোককে তাড়ানোর মানসিকতা থেকে কিছু কৃত্রিম দাবি উত্থাপন করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অধিকার কারও থাকতে পারে না।

আর আন্দোলন-সংগ্রামেরও কিছু নিয়ম-নীতি আছে। একটা প্রতিষ্ঠানকে অচল করে দেওয়া কোনো সুস্থ-শিক্ষিত মানুষের আন্দোলনের পন্থা হতে পারে না। পৃথিবীর কোনো দেশে শিক্ষকরা আন্দোলন করে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে দেন– এমন নজির আছে কী? যেখানে ক্লাস-পরীক্ষা স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনে শিক্ষকদের জীবন দেওয়ার কথা, সেখানে শিক্ষকদের কারণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা দিনের পর দিন বন্ধ থেকেছে– এ কলঙ্ক শিক্ষক সমিতির নেতারা মোচন করবেন কীভাবে?

নাকি সংকীর্ণ, দলবাজি, গোষ্ঠীস্বার্থ তাদের বোধ-বুদ্ধি বিবেক নর্দমায় নামিয়ে এনেছে? তারা বুঝতেই পারছেন না যে, আন্দোলনের নামে তারা কী সীমাহীন পাপে নিমজ্জিত হয়েছে?
আমরা কেউই ধোয়া তুলসিপাতা নই। উপাচার্য মহোদয়ের যে কোনো দোষ-ত্রুটি-সীমাবদ্ধতা নেই– তা সম্ভবত তিনি নিজেও বলবেন না।

মানুষ হিসেবে আমাদের সবারই কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। না থাকলে আমরা দেবতা হয়ে যেতাম। সেগুলো যৌক্তিকভাবে তুলে ধরা, নিয়মতান্ত্রিক কায়দায় আন্দোলন করা, দাবি পূরণের জন্য সময় দেওয়া– এগুলোই বাঞ্ছিত। কিন্তু তাই বলে দাবি উত্থাপন করেই কি কাউকে 'অবাঞ্ছিত' ঘোষণা করা যায়? না তাই করা উচিত?

সমিতির আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ– দোহাই আপনাদের, আপনারা মিছিল, অবস্থান, আলোচনা, অনশন করুন, পত্রপত্রিকায় লেখা পাঠান, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করুন, আচার্য বরাবর স্মারকলিপি পেশ করুন, প্রয়োজন হলে বেতন না নিয়ে পরিবারসহ উপোস করার কর্মসূচি গ্রহণ করুন। কিন্তু সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ক্লাসবর্জন, প্রশাসনিক কাজে বাধা দেওয়ার মতো নৈরাজ্যমুখী কর্মসূচির দিকে যাবেন না।

মূর্খ-গোঁয়াররা যদি এমনভাবে সবকিছু 'অচল' করে দেওয়ার কর্মসূচি নেয়, আন্দোলন করে তবু মানা যায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কি এই কায়দার আন্দোলন করা মানায়? সমাজে হীরা আর চিড়া কী একদরে বিকোবে? ইতর-পণ্ডিতের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না?

পরিশেষে, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আকুল আবেদন– দয়া করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করুন, বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বাঁচান।

চিররঞ্জন সরকার: কলামিস্ট।