বঙ্গবন্ধু সকলের বন্ধু

মুহম্মদ নূরুল হুদামুহম্মদ নূরুল হুদা
Published : 15 August 2013, 12:54 PM
Updated : 15 August 2013, 12:54 PM

ঠিক কখন তিনি বঙ্গবন্ধু নামে অভিহিত হয়েছিলেন? যতদূর মনে পড়ে, দিনটি ছিল ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯। সেদিনই রেসকোর্স ময়দানে লক্ষ জনতার উপস্থিতিতে এক ঐতিহাসিক গণ-সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে ডাকসু-র তদানীন্তন সহ-সভাপতি ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জনাব তোফায়েল আহমেদ বাংলার অবিসম্বাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে 'বঙ্গবন্ধু' অভিধায় ভূষিত করেন। সেই থেকে তিনি বাংলার বন্ধু, বাঙালির বন্ধু, আপনার আমার সকলের বন্ধু। আর এ-ও স্মর্তব্য, 'বঙ্গ' বা 'বাংলা' আজকের বাংলাদেশের চেয়ে একটি ব্যাপকতর ধারণা। তার ভৌগোলিক সীমানা বা জনগোষ্ঠির ভাষা, সংস্কৃতি বা ধর্মীয় বিশ্বাসও অধিকতর বৈচিত্র্যময়। 'বঙ্গবন্ধু' অভিধাপ্রাপ্তির মাত্র কিছুদিন আগেই তিনি জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তার কারাবন্দীর হওয়ার মূল কারণ তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। স্বৈরাচারী পাকিস্তানী শাসকরা তাঁকেই এই মামলার প্রধান আসামী করেছিল।

বঙ্গবন্ধুর জীবনে কারাবাস কোনো নতুন ঘটনা নয়। পাকিস্তানে ২৪ বছর তার রাজনৈতিক জীবনে ১২ বছরেরও অধিক কাল তিনি কারান্তরালে ছিলেন। ১৮ বার কারাবরণ ও কারামুক্তির অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। মামলা মোকাবেলা করেছেন ২৪টি। বার দুয়েক নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। জেলজুলুম বা মৃত্যুভীতি তাকে কখনো তার অবস্থান থেকে টলাতে পারেনি।

এই কারামুক্তির পর তিনি রাওয়ালপিণ্ডিতে অনুষ্ঠিত একটি গোল টেবিল বৈঠকে অংশ্রহণ করেন। বলা বাহুল্য, সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া এই বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্যে তাকে প্রথমে প্যারলে মুক্তি দেবার প্রস্তাব করেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে সামরিক শাসকরা তাকে বিনাশর্তে পুরোপুরি মুক্তি প্রদান করতে বাধ্য হয় । বলা বাহুল্য, এই বৈঠকে বঙ্গবন্ধু ও তার বক্তব্য যে নির্ণায়ক ভূমিকা রাখবে, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আগেই অনুমান করতে পেরেছিলো। তাকে ছাড়া যে চলমান রাজনৈতিক সমস্যার কোনো স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়, তা সকলেই অনুধাবন করেছিলো। কিন্তু তারা পুর্বানুমান করতে পারেনি তার আসল ভুমিকা। তিনি কোনো রূপ আপোষ ফর্মুলা বা প্রলোভনের কাছে নত না হয়ে যথারীতি আওয়ামী লীগের ৬-দফা ও সংগ্রামী ছাত্রজনতার ১১-দফার ভিত্তিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বায়ত্ত শাসন কায়েম করে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের সূত্র নির্দেশ করেন। ফল যা হবার তা-ই হলো। প্রায় কোনোরূপ সিদ্ধান্ত ছাড়া বৈঠক শেষ হলো। অন্যদিকে এই বৈঠকে বঙ্গবন্ধু নৈতিক ও মানসিক বিজয় লাভ করলেন। আবহমান কাল ধরে বিবর্তমান বঙ্গভূমি ও বঙ্গীয় জনতার জন্যে এই বিজয় যেমন ছিল কৌশলগত, তেমনি তার ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমায় নির্দেশনামূলক। আসলে এই মুহূর্তটিই ছিল বাঙালির বিজয়ের এক নির্ণায়ক মানস-মুহূর্ত। আর বঙ্গবন্ধু সেই বিজয়ের মূল রূপকার। সেদিন তিনি ভিন্নরূপ সিদ্ধান্ত নিলে পাকিস্তানের রাজনীতি ও বাঙালির ভবিষ্যৎ ভিন্নখাতে প্রবাহিত হতো।

পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ৬-দফা দাবি না মানার মূল কারণ, তারাও হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলো, এটিই হচ্ছে বাঙালি জাতির মুক্তিসনদ। এ-পথেই আসবে বাঙালির চিরকাঙিক্ষত স্বাধীনতা। ফলে বরাবরের মতো তারা মেতে উঠলো প্রাসাদ ষড়য়ন্ত্রে, যাতে জনগণের রায়কে অগ্রাহ্য করে পেছন দরোজা দিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা যায়। তাদের এই অশুভ তৎপরতা বাস্তবে রূপ নিলো যখন সামরিক শাসন জারি হলো, আর ২৫শে মার্চ ১৯৬৯ তারিখে জেনারেল ইয়াহিয়া পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসাবে ক্ষমতা দখল করলেন।

তারপর তারা মেতে উঠলো আরো কূটিল রাজনৈতিক চালে। জান্তা বুঝতে পেরেছিলো নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতা বৈধকরণের আর কোনো পথ খোলা নেই। তাই একটু ভিন্ন কায়দায় তারা নির্বাচন দিলো, যাতে মুজিব বা বাঙালি জাতীয়তাবাদী শক্তি তেমন সুবিধা করতে না পারে। নির্বাচনের জন্যে তারা 'লিগেল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার' নামক একটি অগণতান্ত্রিক আচরণবিধি ঘোষণা করলো। অথচ তারা ভাবতেই পারেনি তাদের সব আয়োজন কিভাবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। নিয়তির নির্মম পরিহাস এই যে, স্বৈরাচারী শাসকরা কখনো দেয়ালের লিখন পাঠ করে না, বা করলেও তার মর্ম বোঝে না।

'লিগেল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার' মেনে নেয়া যুক্তিসঙ্গত নয় কোনোমতে। বঙ্গবন্ধুও এটি বোঝেননি, এমন নয়। কিন্তু চিরকাল সাহসী যোদ্ধা শেখ মুজিব এই অগণতান্ত্রিক শক্তিকে সকল বাধা পেরিয়ে গণতান্ত্রিক পথেই পরাজিত করার কথা ভাবলেন। ইতিমধ্যে তিনি অনুধাবন করেছেন প্রতিটি মুক্তিকামী বাঙালির মুক্তির জন্যে অনমনীয় প্রতিজ্ঞার কথা। তিনি জেনে গেছেন যে এই নির্বাচন হবে ৬-দফার পক্ষে এক ধরনের 'হ্যাঁ বা না' ভোট। জনগণের রায় কোনদিকে যাবে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিলেন। জেনারেল ইয়াহিয়া ২৭শে ডিসেম্বর ১৯৭০ তারিখে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলেন। পাকিস্তানকে পৃথক দুই ইউনিটে ভাগ করে 'এক ব্যক্তি এক ভোট' নীতি ঘোষণা করা হলো। এর মূল উদ্দেশ্য, পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ ঠেকিয়ে দেয়া। জেনারেল আরো ঘোষণা করলেন, সংসদীয় রীতির সরকার প্রবর্তিত হবে এবং যথাবিধি ক্ষমতা হন্তান্তর করা হবে।

যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। বঙ্গবন্ধুর সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণিত হলো। পূর্ব পাকিস্তানের ২৬৯ আসনের মধ্যে ২৬৭ আসনে বিজয়ী হয়ে সারা পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ সংখ্যা গরিষ্ঠতা লাভ করলো। বঙ্গবন্ধু হলেন পাকিন্তানের ভাবী প্রধানমন্ত্রী। সারা বাংলার প্রতিটি প্রাগ্রসর ও জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক কর্মীর সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগের ফলেই বঙ্গবন্ধু এই ঐতিহাসিক বিজয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছিলেন। এই বিজয় বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়ের আগে একটি তাৎপর্যপূর্ণ মাইলফলক।

এর পরের ঘটনাপ্রবাহ সকলেরই জানা। বিশ্বাসঘাতক সামরিক শাসকরা বঙ্গবন্ধুকে পাকিন্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করলো, যার ফলে রাষ্ট্রটির কপাল ভাংলো। সর্বপ্রকার আলোচনাও বিফলে গেলো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের মুহূর্তে এসে দাঁড়ালেন। না, এবারেও তিনি ভুল করলেন না। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে রেসকোর্স ময়দানে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসমাবেশে দাঁড়িয়ে তিনি ঘোষণা করলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও তা অর্জনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের রূপরেখা : 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম'। 'তোমাদের যা কিছু আছে তা নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে'। এই হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা। কার্যত এই ঘোষণার অনুবর্তী হয়েই প্রত্যেক মুক্তিকামী বাঙালি নরনারী অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধায় রূপান্তরিত হয়েছিলো।

এর পরের সিদ্ধান্তটি ৭ই মার্চের সিদ্ধান্তেরই যৌক্তিক পরিণতি মাত্র। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনারা নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর নির্বিচারে গণহত্যায় মেতে ওঠে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে বন্দুকের নলের মুখে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। বিষয়টি বঙ্গবন্ধু আগেই আঁচ করেছিলেন। তিনি যথাসময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা লিখিতভাবে প্রদান করেন এবং তা দেশব্যাপী যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধা ও জনগণের মধ্যে পৌঁছে দেয়া হয়। চট্টগ্রামের কালুর ঘাটে অস্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সেই ঘোষণা ২৬ তারিখে সর্বপ্রথম পাঠ করেন আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট নেতা হান্নান সাহেব। আমরা অনেকেই এই ঘোষণা কানে শুনেছি। বিলাতের বিখ্যাত দৈনিক 'লন্ডন অবজারভার' পত্রিকায় এই সংবাদ ২৭ শে মার্চ তারিখে প্রকাশিত হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর সুদীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের এই ক'টি দিকনির্দেশনামূলক ও ঐতিহাসিক মুহূর্তই প্রমাণ করে রাজনৈতিকভাবে তিনি কতোটা কুশলী, প্রজ্ঞাবান, দূরদর্শী, সাহসী, অনাপোষী ও নিঃস্বার্থ পথনির্দেশক ছিলেন। জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠায় তার অবদান যে সর্বাধিক, এ থেকে তা সহজেই অনুমেয়। বাঙালি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে তিনিই একক ও অদ্বিতীয় কারুকৃৎ।

স্বাধীনতা অর্জনের পাশাপাশি স্বাধীনতা রক্ষা করার ক্ষেত্রেও তিনি সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তারিখে কতিপয় নীতিভ্রষ্ট সামরিক কর্মকর্তার হাতে সামরিক অভ্যুত্থানে শহীদ হলেন তিনি। জানা যায়, এই অভিযান সম্পর্কে আগেই তাকে সতর্ক হরা হয়েছিলো বিভিন্ন মহল থেকে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কর্ণপাত করেননি। বাঙালি যে তার ও নিজের এই ক্ষতি করতে পারে তা তিনি ঘূণাক্ষরেও ভাবেননি বা বিশ্বাস করেননি। ফলে নিশ্ছিদ্র সামরিক প্রহরা বসাননি তার প্রায়-অরক্ষিত বাসভবনে। বরং সেই ভাগ্যবিড়ম্বিত রাতে তিনি তার সেই সুবিখ্যাত তর্জনী সম্বল করে আগ্নেয়াস্ত্রধারী আততায়ীদের মোকাবেলা করেছিরেন, যেন সেই তর্জনীই তার ও বাঙালির রক্ষাকবচ। স্বৈরাচারী পাকিস্তানী শাসকদের প্রেতাত্মা সেই আততায়ীরা বঙ্গবন্ধুকে শিশুসন্তানসহ সপরিবারে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিলো। তারা ধ্বংস করতে চেয়েছিলো বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার স্বপ্নও। কিন্তু না, তা হয়নি, তা হবারও নয়।

ব্যক্তি মুজিব শারীরিকভাবে শহীদ হলেও যে আদর্শিক সারবত্তার নাম বঙ্গবন্ধু, তা নিঃশেষিত হয়নি। বরং তা পুনর্জন্ম লাভ করেছে প্রতিটি স্বাধীনতাপ্রিয় ও মুক্তিকামী বাঙালির মধ্যে। তাদের সকলের কাছে তিনি জাতিরাষ্ট্রের স্থপতি ও জাতির জনক।

আর এ-কথাও অস্বীকার করার কারণ নেই যে, বাংলাদেশ নামক এই জাতিরাষ্ট্রের অভ্যুদয় কিংবা স্বাধীনতা-উত্তর কালে বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের আবির্ভাবের পূর্বেই তিনি 'বঙ্গবন্ধু' অভিধায় অভিষিক্ত। এই দিক থেকে বিচার করলে তার অবস্থান সকল দল, মত ও স্বার্থের ঊর্ধে। বাঙালি জাতির ইতিহাসে তিনিই সেই অনন্য ও এক ব্যক্তিত্ব যাকে আমরা আমাদের দেশ ও জাতির সংহতির অভিন্ন বন্ধনরজ্জু হিসেবে সমুন্নত রাখতে পারি। তিনি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে চিরকাল অনুসরণযোগ্য আদর্শ হয়ে থাকবেন। কেননা তিনি বাংলার বন্ধু, বাঙালির বন্ধু, আমাদের সকলের বন্ধু।

এই দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি আমাদের জাতীয় ঐক্যেরও প্রতীক। সব ধরনের রাজনৈতিক বিভেদ নিরসনে তার আদর্শ নির্ণায়ক হতে পারে যে কোনো সংকট-মুহূর্তে। বর্তমানে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক সংকট চলছে, সেক্ষেত্রেও তিনি সমাধানের সূত্র হয়ে উঠতে পারেন। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে অগণতান্ত্রিক আচরণবিধি থাকা সত্বেও বঙ্গবন্ধু নির্বাচনে অংশগ্রহণে সাহসী ছিলেন। কেননা তিনি জনগণের রায় সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলেন এবং গণতান্ত্রিক পথেই ক্ষমতা হস্তান্তরে বিশ্বাসী ছিলেন। জনগণ যদি ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে কোনো অগণতান্ত্রিক শক্তি তাদেরকে পরাস্ত করতে পারে না। চলমান সঙ্কটকালে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলীয় সকল নেতাকর্মীর জন্যে এই সত্যটি অনুধাবন যুক্তিযুক্ত। জাতির জনক আমাদের এই উপলব্ধিটি দিয়েছেন। তিনি সোনার বাংলা নামক একটি কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আদর্শ ও অনুপ্রেরণা। তিনি আমাদের কারো ভোটযুদ্ধে জয়ের অস্ত্রমাত্র নন। আর যদি অস্ত্র হয়ে থাকেন তাহলে তিনি সকলেরই অস্ত্র। সব দল সব মত তার আদর্শকে অবিকৃতভাবে ব্যবহার করে ফায়দা পেতে পারেন। তিনি তো আর সশরীরে এসে তার কোনো পছন্দের দলকে জেতানোর জন্যে এজেন্টের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন না। তার আদর্শ, নীতি ও রূপরেখাকে গ্রহণ করলেই দেশে সুসম্পর্কবাহিত সুশাসন সুনিশ্চিত হতে পারে। একারণে তিনি ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাপ্রত্যাশী সকল দলের অভিন্ন আদর্শে বরিত হতে পারেন।

আমরা আন্তরিকভাবেই বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, যিনি আমাদের কালের শ্রেষ্ঠ জননেতা ও জাতিরাষ্ট্রের জনক, তাকে নিশর্তভাবে গ্রহণ করার মধ্যেই জাতীয় ঐক্যের সূত্র নিহিত। তা নাহলে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনৈক্য আর সংঘর্ষে জর্জরিত এই বাঙালি জাতির উদ্ধারের পথ সুদূর পরাহত। জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশে আজকের ও আগামী দিনের সকল নাগরিকের চিত্তে তার পুনর্জন্ম হোক। তিনিই হোন আমাদের উজ্জ্বল উদ্ধার।
১৪.০৮.২০১৩

মুহম্মদ নূরুল হুদা :কবি, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট।